The man flew to India for New Year's Eve and met the love of his life, a love story that makes you feel good dgtl
Love Story
বাবার চিতাভস্ম ফেলতে ভারতে এসে প্রেম, তার পরই বিয়ে, সিনেমাকেও হারাবে এই ‘লভ স্টোরি’
পানশালায় প্রথম দেখাতেই প্রেম। তার কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে। বর্তমানে চুটিয়ে সংসার করছেন তাঁরা। এই যুগলের প্রেমকাহিনি মন কাড়বে।
সংবাদ সংস্থা
নিউইয়র্কশেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
সে দিন ছিল বর্ষশেষের দিন। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গমগম করছিল গোয়া। চারদিকে শুধুই হুল্লোড়। ডিসেম্বরের শেষ দিনে মনোরম আবহাওয়ায় গোয়ার সৌন্দর্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিলেন সকলে। নতুন বছরের দোরগোড়ায় পৌঁছনোর জন্য সময় যত এগোচ্ছিল, পানশালাগুলিতে ভিড় ততই বাড়ছিল। এমনই এক উষ্ণ পরিবেশে পানশালায় হাজারো লোকের মাঝে প্রথম চোখাচোখি হল দু’জনের।
প্রতীকী ছবি।
০২১৬
প্রথম দেখাই যেন তাঁদের বলে দিয়েছিল, ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো’। হলও তাই। দু’বছরের মধ্যেই বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ওই যুগল। নিখিল ও হিরয়া— এই যুগলের প্রেমকাহিনি মন কেড়েছে সকলের।
ছবি সংগৃহীত।
০৩১৬
তাঁদের প্রেমের শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ভারতীয়-আমেরিকান নিখিল তখন ডাক্তারি পড়ুয়া। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছিল। তখন নিখিলের বয়স কুড়ির কোঠায়। বাবার চিতাভস্ম দেশের মাটিতে ফেলার জন্য ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা থেকে ভারতে এসেছিলেন নিখিল।
প্রতীকী ছবি।
০৪১৬
সেই কাজ সারার পর ভারতে আরও কিছু দিন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুই ভাই। বর্ষবরণ করতে ভাইকে নিয়ে গোয়ায় গিয়েছিলেন নিখিল। পরে সেখানে যোগ দেন নিখিলের এক বন্ধু।
প্রতীকী ছবি।
০৫১৬
বর্ষশেষ আর বর্ষবরণের উদ্যাপন ঘিরে সে সময় গোয়ায় রঙিন পরিবেশ। নিখিলরাও তাই ঠিক করেন গোয়া ঘুরে বেড়াবেন। বর্ষশেষের রাতে তাঁরা একটি পানশালায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো সেখানে যান তাঁরা।
প্রতীকী ছবি।
০৬১৬
কিন্তু পানশালায় উপচে পড়ছিল ভিড়। তিলধারণের জায়গা নেই। পানশালায় ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন নিখিলরা। সকলে তখন বর্ষশেষের আনন্দে আত্মহারা। নিয়নের আলোয় মাখামাখি চারপাশ। এমন সময় ঘাড় ঘুরিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চোখ আটকাল নিখিলের।
প্রতীকী ছবি।
০৭১৬
দেখলেন, এক দল তরুণী ভিড় জমিয়েছেন পানশালায়। আর তাঁদের মধ্যেই যাঁর সঙ্গে চোখাচোখি হল নিখিলের, তিনিই পরবর্তী কালে তাঁর জীবনসঙ্গী হলেন। তিনি হিরয়া। গুজরাতের বাসিন্দা হিরয়া তখন ২০ বছরের উচ্ছ্বল তরুণী। বর্ষশেষের আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করতে বন্ধুদের সঙ্গে তিনিও গোয়ায় গিয়েছিলেন। নিখিল আর হিরয়ার চোখাচোখি তো হল। কিন্তু এর পর তাঁদের আলাপ হওয়াটাও যে কোনও রুপোলি পর্দার প্রেমকাহিনিকে টেক্কা দিতে পারে।
প্রতীকী ছবি।
০৮১৬
নিখিল এবং হিরয়া যে পানশালায় গিয়েছিলেন, সেখানে মহিলারা নিখরচায় প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু পুরুষদের টাকা দিতে হয়। আর যদি পুরুষ এবং মহিলারা একসঙ্গে যান, তা হলে কিছু ছাড় পাওয়া যায়। পানশালার বাইরে হিরয়ারা যখন লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, একদল যুবক তাঁদের প্রস্তাব দেন, হিরয়ারা যদি তাঁদের সঙ্গ দেন, তা হলে ছাড় পাবেন তাঁরা।
প্রতীকী ছবি।
০৯১৬
যুবকদের প্রস্তাবে রাজি হন হিরয়া এবং তাঁর বন্ধুরা। এর পর পানশালার মধ্যে হিরয়া এবং ওই যুবকদের দল একসঙ্গে নাচ করলেন, গল্প করলেন। এমন সময় হিরয়ার চোখ পড়ল নিখিলদের উপর। দেখলেন, স্যুট পরে ৩ যুবক পানশালায় সময় কাটাচ্ছেন। এটা দেখামাত্রই ওই যুবকদের সঙ্গে হিরয়ার এক বন্ধু কথা বললেন। তার পর শুরু হল সেই কাহিনি।
প্রতীকী ছবি।
১০১৬
নিখিলকে প্রথম দেখাতেই মন দিয়ে ফেলেছিলেন হিরয়া। আর হিরয়াকে দেখে হৃদয় গলেছিল নিখিলেরও। ডান্স ফ্লোরে দীর্ঘ ক্ষণ একে অপরের দিকে চেয়ে রইলেন তাঁরা। যেন পলক পড়ছিল না। সিএনএন-কে তাঁদের প্রেমকাহিনি শোনাতে গিয়ে হিরয়া বলেছেন, ‘‘ও আমার হাত ধরেছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, সারা জীবন যেন ও আমার হাত ধরে রাখে। মনে হতে পারে কোনও সিনেমা। কিন্তু এটাই হয়েছিল।’’
প্রতীকী ছবি।
১১১৬
ডান্স ফ্লোরে নাচ করতে করতেই নিখিল ও হিরয়ার সব কথা যেন সারা হয়ে গিয়েছিল। একে অপরের সম্পর্কে জানতে নিজেদের জীবনের নানা কথা ভাগ করে নেন তাঁরা। সেই সময় বাজছিল ‘ব্রেক মাই হার্ট’ গান। তবে তাঁদের হৃদয়ে কোনও চিড় ধরেনি। বরং শুরু হয়েছিল একসঙ্গে হাতে হাত রেখে পথচলা।
প্রতীকী ছবি।
১২১৬
রাত পেরিয়ে তখন প্রায় ভোর। ২০১০ সালকে বিদায় জানিয়ে হাজির ২০১১। পানশালা থেকে বেরনোর আগে হিরয়ার ফোন নম্বর জানতে চান নিখিল। কিন্তু ফোন নম্বর দিতে রাজি হননি হিরয়া। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দেখা হওয়ার পর এ দেশে কোনও যুবককে কেউই ফোন নম্বর দেন না। তাই আমিও এড়িয়ে যাই।’’ দু’জনেই ভেবেছিলেন, এটাই হয়তো শেষ দেখা। লোকে বলে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, তিন বিধাতার লিখন। হিরয়া এবং নিখিলের ক্ষেত্রেও বোধ হয় উপরওয়ালা আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছিলেন। আর তাই দু’জনের আবার দেখা হল।
প্রতীকী ছবি।
১৩১৬
নিখিলের এক বন্ধু হিরয়ার এক বন্ধুর থেকে ফোন নম্বর নিয়েছিলেন। সেই বন্ধুই নিখিলকে ইয়ার্কি করতে করতে হিরয়ার নম্বর দেন। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার, ফ্রম নিখিল’— হিরয়ার ফোনে প্রথম এই মেসেজই পাঠান নিখিল। বন্ধুদের সঙ্গে তখন রেস্তরাঁয় খাচ্ছিলেন হিরয়া। আচমকা তাঁর ফোনে জানান দিল মেসেজ ঢুকেছে। হিরয়া তো মেসেজ দেখে অবাক। সেই সঙ্গে মুহূর্তেই তাঁর চোখেমুখে এক অনাবিল আনন্দের রেশ ধরা পড়ল। নতুন বছরের সূচনালগ্নে নিখিলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলে, তাঁর নম্বর ‘নিউ ইয়ার বয়’ বলে সেভ করেছিলেন হিরয়া।
ছবি সংগৃহীত।
১৪১৬
এর পর তাঁদের ফোনে কথা বলা শুরু হয়। কিন্তু সম্পর্কের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভৌগোলিক দূরত্ব। আমেরিকায় থাকেন নিখিল। আর ভারতে হিরয়া। কী ভাবে সম্পর্ক টিকবে? বন্ধুরা হিরয়াকে বলেছিলেন যে, এই সম্পর্ক টিকবে না। কিন্তু, সত্যিকারের ভালবাসা বোধহয় কোনও কিছুরই বাধা মানে না। আর সেটাই হয়েছিল নিখিল এবং হিরয়ার মধ্যে। ফোনে কথা বলার পর তাঁরা ভিডিয়ো কলে একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলা শুরু করেন। হিরয়া তখন এমবিএ করছেন।
প্রতীকী ছবি।
১৫১৬
২০১১ সালের অগস্ট মাস। নিখিল এবং হিরয়ার জীবনে শুরু হল নতুন অধ্যায়। প্রেমের টানে ২ সপ্তাহের জন্য আবার ভারতে এলেন নিখিল। হিরয়ার বিজ়নেস স্কুলে যান তিনি। এর পর নিখিলকে নিয়ে বাড়িতে যান হিরয়া। বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করান হিরয়া। তাঁরা বিয়ে করতে চান, এ কথা পরিবারকে জানান তাঁরা। এ কথা শুনে হিরয়ার মা কেঁদে ফেলেছিলেন। কারণ নিখিলের সঙ্গে বিয়ে হলে মেয়েকে আমেরিকা পাঠাতে হবে। যা অনেক দূর। তবে নিখিলকে বেশ পছন্দ হয়েছিল হিরয়ার বাবা-মায়ের। তাই তাঁরা এক কথায় রাজি হয়ে যান। এর পর মে মাসে নিখিলের সঙ্গে দেখা করতে আমেরিকা যান হিরয়া।
প্রতীকী ছবি।
১৬১৬
প্রায় ২ বছর ধরে প্রেমপর্ব চলার পর ২০১২ সালে নভেম্বর মাসে ভারতে বিয়ে হয় তাঁদের। যাকে বলে মধুরেণ সমাপয়েৎ। দু’জনেই গুজরাতি। তাই তাঁদের মধ্যে অনেক মিল ছিল। আবার যে হেতু নিখিল ভারতীয়-আমেরিকান, তাই অনেক অমিলও ছিল। কিন্তু ভালবাসা তাঁদের একসুতোয় বেঁধে রেখেছে। বর্তমানে আমেরিকায় ভরা সংসার তাঁদের। তিন সন্তানের বাবা-মা তাঁরা। নিখিল এবং হিরয়া যেন একে অপরের পরিপূরক।