Sri Lanka new President Anura Dissanayake is pro or anti India here are details dgtl
Sri Lanka New President
ভারত-বিরোধী রাজনীতিতেই উত্থান, শ্রীলঙ্কার চিনপন্থী নতুন ‘রাজা’কে নিয়ে চিন্তায় নয়াদিল্লি?
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিলেন বাম জোটের নেতা অনুরাকুমার দিশানায়েকে। ভারত-বিরোধী জনতা বিমুক্তি পেরামুনা দলের এই পলিটব্যুরো সদস্যকে চিনের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
শ্রীলঙ্কায় বামপন্থীদের জয়জয়কার। নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন ন্যাশনাল পিপল্স পাওয়ার (এনপিপি) নামের বাম জোটের নেতা অনুরাকুমার দিশানায়েকে। সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।
০২২২
শ্রীলঙ্কায় দশম প্রেসিডেন্ট হিসাবে কুর্সিতে বসলেন জনতা বিমুক্তি পেরামুনা বা জেভিপির পলিটব্যুরোর সদস্য দিশানায়েকে। দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনার শেষে তাঁর জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। এর পরই রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ে চলে আসেন তিনি। সেখানে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সূর্য।
০৩২২
দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কার কুর্সিতে বসতেই ভারতের সঙ্গে দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। ইতিহাসগত ভাবে তাঁকে ভারত-বিরোধী ও চিনপন্থী বলেই মনে করা হয়। ফলে তাঁর জয়ে ভ্রু কুঁচকেছেন নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের একাংশ।
০৪২২
শ্রীলঙ্কার বাম দল জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রোহানা উইজেভেরা। ১৯৮০-র দশকে ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ’-এর কথা বলে বলে দ্বীপরাষ্ট্রের আমজনতাকে উস্কানি দেন তিনি। নয়াদিল্লিকে শ্রীলঙ্কার অন্যতম বড় শত্রু বলেও উল্লেখ করেছিলেন জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা।
০৫২২
১৯৮৭ সালে ভারতের সঙ্গে বিশেষ একটি চুক্তিতে সই করে শ্রীলঙ্কা। যাতে প্রধান ভূমিকা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেআর জয়বর্ধনের। চুক্তিতে তামিলদের বেশ কিছু সুযোগসুবিধা দেওয়া এবং প্রাদেশিক সরকারগুলিকে ক্ষমতাশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল লঙ্কা প্রশাসন।
০৬২২
কিন্তু ভারত-শ্রীলঙ্কার ওই চুক্তির বিরোধিতা করে জেভিপি। শুধু তা-ই নয়, দেশের ভিতরে সশস্ত্র বিদ্রোহ গড়ে তোলে এই দল। যা দমাতে সেনা নামাতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার সরকারকে। বেশ কয়েক বছর ধরে চলেছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
০৭২২
তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। দিশানায়েকের মুখে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কথা শোনা গিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি এসেছিলেন তিনি। ওই সময়ে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন দিশানায়েকে।
০৮২২
জয়শঙ্কর ও ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছিলেন দিশানায়েকে। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনার জেরে আমার দলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিতে বড় ধরনের কোনও বদল আসবে না। তবে ভারতের থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আশা করছি।’’
০৯২২
বিশেষজ্ঞদের দাবি, কুর্সিতে বসার পর প্রবল ভারত বিরোধিতার রাস্তায় না-ও হাঁটতে পারেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট। কারণ দ্বীপরাষ্ট্রটির ঋণখেলাপি অবস্থা পুরোপুরি কাটেনি। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার বা আইএমএফের থেকে নতুন করে ঋণ নিতে হলে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন হবে।
১০২২
তবে দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিলদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হবে, এমন আশা করা বাতুলতা বলেই মনে করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। চিনের সঙ্গে একাধিক চুক্তি করতে পারেন তিনি। যদিও মুখে ভারত-চিন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা কোনও শক্তির অধীনস্থ হবে না বলেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন দিশানায়েকে।
১১২২
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, এ সবই কথার কথা। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর রয়েছে চিনের দখলে। আগামী দিনে সেখানে বেজিংয়ের পাঠানো যুদ্ধজাহাজ বা গুপ্তচর জাহাজের আনাগোনা বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
১২২২
অন্য দিকে অনুরাকুমার দিশানায়েকে দেশের প্রেসিডেন্ট হতেই শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন দীনেশ গুণবর্ধনে। দ্বীপরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ক্ষমতায় নতুন প্রেসিডেন্ট এলে নিয়ম মেনে এটা করতে হয়। গুণবর্ধনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি।
১৩২২
এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র তিনি শতাংশ ভোট পেয়েছিল দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন বাম জোট। কিন্তু গত পাঁচ বছরে আমূল বদলেছে পরিস্থিতি। দ্বীপরাষ্ট্রটি প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ায় সেখানকার জনগণ পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের উপর ভরসা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৪২২
২০২২ সালে চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। যার জেরে দেশ জুড়ে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। উন্মত্ত জনতা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনে চড়াও হয়েছিল। দেশ ছেড়ে চম্পট দেন তিনি। প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষেও ওই সময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
১৫২২
রাজাপক্ষে ভাই শ্রীলঙ্কা ছাড়ার পর দ্বীপরাষ্ট্রে গঠিত হয় অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। যা পার্লামেন্টের সদস্যেরা ভোটাভুটি করে ঠিক করেছিলেন। ওই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ক্ষমতায় আসার পর রাজাপক্ষে ভাইদের বিরুদ্ধে যে দেশ জুড়ে গণবিক্ষোভ ছিল তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি ৭৯ বছরের এই রাজনীতিক।
১৬২২
২০২২ সালের ওই ঘটনার পর চলতি বছরেই প্রথম বার ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন লঙ্কাবাসীরা। এই নির্বাচনের দিকে কড়া নজর রেখেছিল ভারত ও চিন। আর্থিক সঙ্কট চলাকালীন টাকার জোগান দিয়ে কলম্বোর পাশে দাঁড়িয়েছিল নয়াদিল্লি।
১৭২২
এ বারের শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে মূল লড়াই ছিল তিন জনের মধ্যে। ভোটযুদ্ধে দিশানায়েকের বিরুদ্ধে রনিল ছাড়াও কড়া টক্কর দিয়েছেন ৫৭ বছরের সাজিথ প্রেমদাসা। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের বিরোধী দলনেতা তিনি।
১৮২২
দ্বীপরাষ্ট্রের এ বারের নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনার শেষে দিশানায়েককে জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। তিনি পেয়েছেন ৪২.৩১ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে প্রেমাদাসার প্রাপ্ত ভোট ৩২.৭৬ শতাংশ বলে জানা গিয়েছে।
১৯২২
ভোট শতাংশের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘে। মাত্র ১৭.২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। ফলে প্রথম রাউন্ডের পরই লড়াই থেকে ছিটকে যান তিনি।
২০২২
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপরাষ্ট্রটির মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ। গত ২১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শনিবার ভোটের লাইনে দাঁড়ান তাঁরা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটদানের পরিমাণ ছিল ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ২৭ লক্ষ লঙ্কাবাসী নির্বাচনী মত প্রকাশ করেছিলেন।
২১২২
কমিশন জানিয়েছে, ভোটগণনার শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন দিশানায়েকে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী প্রথম পছন্দের ভোট ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। ফলে দ্বিতীয় পছন্দের ভোটগণনা শুরু হয়। তাতেও বাকিদের অনেকটাই পিছনে ফেলে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন দ্বীপরাষ্ট্রের এই বাম নেতা।
২২২২
ভোটে জয়ের পর সমাজমাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট করেছেন দিশানায়েকে। এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, এই জয় সকলের। দ্বীপরাষ্ট্রে তিনি নতুন ধরনের বামপন্থার জন্ম দিতে চলেছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।