এ প্রসঙ্গে মস্কোর বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভা বলেন, ‘‘একটা সময়ে পশ্চিমি দুনিয়া মনে করত, ইউরোপ হল সাজানো বাগান। আর বিশ্বের বাকি দেশগুলি জঙ্গল। এখন সেই জঙ্গলের কাছে গিয়েই বাগান ভিক্ষা চাইছে। তাদের এর জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত।’’ এই বিবৃতিতে অবশ্য কোনও দেশ বা ব্যক্তির নাম করেননি জ়াখারোভা। কিন্তু তার পরেও এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ব জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল।
সম্প্রতি ইইউ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এ-হেন সিদ্ধান্তে রীতিমতো আতঙ্কিত গোটা ইউরোপ। কারণ এতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যে ইইউ-ভুক্ত দেশগুলির লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। সেটা দূর করতেই প্রতিনিধিদল নিয়ে ভারতে ছুটে এসেছেন এর কমিশনার উরসুলা।
ইউরোপীয় কমিশনারের এটাই প্রথম ভারত সফর। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে একে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্য দিকে গত কয়েক বছর ধরেই চিনের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে ইউরোপের সঙ্গে সখ্য বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই লক্ষ্যে তিনি ও তাঁর সরকার যে কিছুটা সফল হয়েছেন, উরসুলার সফরে সেই ইঙ্গিত মিলেছে।
এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা ভিডিয়োয় ভারত ও ইউরোপকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসাবে দেখানো হয়েছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও মজবুত করার কথা বলেছেন উরসুলা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক অন্য দিকে বাঁক নিয়েছে। ধীরে ধীরে বৈরিতা কাটিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন তিনি। বিষয়টিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখতে নারাজ পশ্চিমি দুনিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাব মস্কোকে আগ্রাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে মনে করছে তারা।
দ্বিতীয়ত, হাতিয়ারের ব্যাপারে ভারতীয় ফৌজ এখনও মস্কোর উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। সেনার তিনটি বিভাগই ঢালাও রুশ অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। পশ্চিমি দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ফ্রান্সের সঙ্গেই সেই অর্থে বড় অঙ্কের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। জার্মানি-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলি এ ব্যাপারে ভারতকে যে খুব কাছে টেনে নিয়েছে, সে কথা বলা যাবে না।
ইইউ কমিশনারের ‘ভারত প্রেমে’ রুশ খোঁচাকে অবশ্য শাপে বর বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের যুক্তি, এর জেরে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবে নয়াদিল্লি। প্রথমত, আমেরিকার আগ্রাসী শুল্ক নীতির জন্য নিজেদের ঘরোয়া বাজার ভারতের জন্য খুলতে পারে ইউরোপ। দ্বিতীয়ত, ঢালাও ভিসা দিলে ইইউ-ভুক্ত দেশগুলিতে কাজ পেতে সুবিধা হবে ভারতীয়দের।
তবে এত কিছুর পরেও রাশিয়ার মন্তব্যকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, এর আগেও বহু বার নানা ইস্যুতে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়েছে মস্কো। তার মধ্যে এ বারের প্রতিক্রিয়া সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। জ়াখারোভার বিবৃতির পর দুই দেশের বাণিজ্যিক এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে স্পষ্ট করেছে ওয়াকিবহাল মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy