Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Fahim Hashimy

Fahim Hashimy: ভাঙা সাইকেল থেকে বিমান সংস্থার মালিক! ইংরেজি জানার সুবাদে কোটিপতি আফগান ব্যবসায়ী

৯/১১ হামলাই জীবন পাল্টে দেয় ফহিমের। ভাঙা সাইকেল থেকে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২১ ১১:২৭
Share: Save:
০১ ১২
টানাটানির সংসার। কোনও মতে ইংরেজিটুকু শিখেছিলেন। সেই বিদ্যে কাজে লাগিয়েই কোনও মতে অন্ন জুটছিল দু’বেলা। কিন্তু যুদ্ধের দামামাই জীবন পাল্টে দেয় ফহিম হাশিমির। মুজাহিদ, তালিবান, আল কায়দা এবং সর্বোপরি বিদেশি শক্তির আগমন নিয়ে যখন সন্ত্রস্ত দেশবাসী, তরুণ ফহিম তখন জীবন বাজি রেখে ভাগ্য ফেরানোর জুয়া খেলতে নামেন।

টানাটানির সংসার। কোনও মতে ইংরেজিটুকু শিখেছিলেন। সেই বিদ্যে কাজে লাগিয়েই কোনও মতে অন্ন জুটছিল দু’বেলা। কিন্তু যুদ্ধের দামামাই জীবন পাল্টে দেয় ফহিম হাশিমির। মুজাহিদ, তালিবান, আল কায়দা এবং সর্বোপরি বিদেশি শক্তির আগমন নিয়ে যখন সন্ত্রস্ত দেশবাসী, তরুণ ফহিম তখন জীবন বাজি রেখে ভাগ্য ফেরানোর জুয়া খেলতে নামেন।

০২ ১২
তালিবান পুনরুত্থানে এত বছর পর ফের ত্রাসের পরিবেশ আফগানিস্তানে। কিন্তু নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন ফহিম। ২০ বছর আগে সম্পত্তি বলতে একটি ভাঙাচোরা সাইকেল ছিল তাঁর কাছে। এখন একটি আস্ত বিমান সংস্থার মালিক তিনি। আর তাঁর এই ভাগ্য পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ‘অবদান’ যাঁর, তিনি ওসামা বিন লাদেন।

তালিবান পুনরুত্থানে এত বছর পর ফের ত্রাসের পরিবেশ আফগানিস্তানে। কিন্তু নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন ফহিম। ২০ বছর আগে সম্পত্তি বলতে একটি ভাঙাচোরা সাইকেল ছিল তাঁর কাছে। এখন একটি আস্ত বিমান সংস্থার মালিক তিনি। আর তাঁর এই ভাগ্য পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ‘অবদান’ যাঁর, তিনি ওসামা বিন লাদেন।

০৩ ১২
১৯৮০ সালে কাবুলে হাজারা পরিবারে জন্ম ফহিমের। সংসারের অবস্থা ছিল দিন আনি দিন খাই। জন্ম থেকেই হিংসার পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাই অস্থিরতার মধ্যেই কেটেছে শৈশব। কোনও রকমে পড়াশোনাটুকু করতে পেরেছিলেন। ঝরঝরে ইংরেজি বলা শিখেছিলেন। তাতেই স্কুলে পড়ানোর চাকরি জুটে গিয়েছিল। কিন্তু বেতন হিসেবে পেতেন নামমাত্র টাকা। তাই নিজের একমাত্র সম্বল, ভাঙাচোরা সাইকেল নিয়ে দূর দূরান্তে আলাদা করে ইংরেজি পড়াতে যেতেন।

১৯৮০ সালে কাবুলে হাজারা পরিবারে জন্ম ফহিমের। সংসারের অবস্থা ছিল দিন আনি দিন খাই। জন্ম থেকেই হিংসার পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাই অস্থিরতার মধ্যেই কেটেছে শৈশব। কোনও রকমে পড়াশোনাটুকু করতে পেরেছিলেন। ঝরঝরে ইংরেজি বলা শিখেছিলেন। তাতেই স্কুলে পড়ানোর চাকরি জুটে গিয়েছিল। কিন্তু বেতন হিসেবে পেতেন নামমাত্র টাকা। তাই নিজের একমাত্র সম্বল, ভাঙাচোরা সাইকেল নিয়ে দূর দূরান্তে আলাদা করে ইংরেজি পড়াতে যেতেন।

০৪ ১২
সেই সময় ফহিমের বয়স ২১। আচমকাই আফগানিস্তান ছেয়ে যায় যুদ্ধবিমান এবং ভারী বুটের শব্দে। ২০০১ সালে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালায় আল কায়দা। তার বদলা নিতে সৈন্যসামন্ত নিয়ে আফগানিস্তানে হাজির হয় আমেরিকা।

সেই সময় ফহিমের বয়স ২১। আচমকাই আফগানিস্তান ছেয়ে যায় যুদ্ধবিমান এবং ভারী বুটের শব্দে। ২০০১ সালে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালায় আল কায়দা। তার বদলা নিতে সৈন্যসামন্ত নিয়ে আফগানিস্তানে হাজির হয় আমেরিকা।

০৫ ১২
আফগানিস্তানে ওসামার নাগাল পেতে ইংরেজিতে দখল থাকা স্থানীয় দোভাষীর প্রয়োজন ছিল আমেরিকার। তাই আফগানিস্তানে পা রেখে প্রথমেই স্থানীয় দোভাষী খুঁজতে শুরু করে আমেরিকা। তালিবানকে হঠাতে আফগানিস্তানে প্রচুর লোক নিয়োগ করে তারা। ইংরেজি জানার দৌলতে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনার দোভাষী নিযুক্ত হন ফহিম। তাতেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।

আফগানিস্তানে ওসামার নাগাল পেতে ইংরেজিতে দখল থাকা স্থানীয় দোভাষীর প্রয়োজন ছিল আমেরিকার। তাই আফগানিস্তানে পা রেখে প্রথমেই স্থানীয় দোভাষী খুঁজতে শুরু করে আমেরিকা। তালিবানকে হঠাতে আফগানিস্তানে প্রচুর লোক নিয়োগ করে তারা। ইংরেজি জানার দৌলতে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনার দোভাষী নিযুক্ত হন ফহিম। তাতেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।

০৬ ১২
দোভাষী থেকে ধীরে ধীরে আমেরিকার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন ফহিম। আমেরিকা এবং আফগান সেনাকে রসদ এবং সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পান তিনি। ক্রমে অস্ত্রের ঠিকাদার হয়ে ওঠেন তিনি। আফগান সেনাকে জুতো, জ্বালানি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর কাজ নেন। একেবারে শুরুতে আমেরিকার সেনাকে ৬০০ ডলারের বিছানার চাদর সরবরাহ করে যাত্রা শুরু করেন তিনি।

দোভাষী থেকে ধীরে ধীরে আমেরিকার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন ফহিম। আমেরিকা এবং আফগান সেনাকে রসদ এবং সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পান তিনি। ক্রমে অস্ত্রের ঠিকাদার হয়ে ওঠেন তিনি। আফগান সেনাকে জুতো, জ্বালানি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর কাজ নেন। একেবারে শুরুতে আমেরিকার সেনাকে ৬০০ ডলারের বিছানার চাদর সরবরাহ করে যাত্রা শুরু করেন তিনি।

০৭ ১২
দীর্ঘ দিন আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ন্যাটো বাহিনীর সংস্পর্শে থেকে তাদের আদবকায়দা শিখে নিয়েছিলেন ফহিম। পরবর্তীকালে বিদেশ থেকেও কাজের বরাত নিতে শুরু করেন তিনি। ব্যবসায়িক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে পরবর্তী কালে কোটিপতি হয়ে ওঠেন ফহিম। বর্তমানে হাশিমি গ্রুপের মালিক তিনি। আফগানিস্তানের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘১ টিভি’-এর মালিক ফহিম। এ ছাড়াও, একটি অন্তর্দেশীয় বিমান সংস্থা ‘ইস্ট হরাইজোন’-ও রয়েছে তাঁর। শুধুমাত্র টিভি চ্যানেলটির বাৎসরিক ব্যবসাই ২০ কোটি ডলারের বেশি।

দীর্ঘ দিন আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ন্যাটো বাহিনীর সংস্পর্শে থেকে তাদের আদবকায়দা শিখে নিয়েছিলেন ফহিম। পরবর্তীকালে বিদেশ থেকেও কাজের বরাত নিতে শুরু করেন তিনি। ব্যবসায়িক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে পরবর্তী কালে কোটিপতি হয়ে ওঠেন ফহিম। বর্তমানে হাশিমি গ্রুপের মালিক তিনি। আফগানিস্তানের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘১ টিভি’-এর মালিক ফহিম। এ ছাড়াও, একটি অন্তর্দেশীয় বিমান সংস্থা ‘ইস্ট হরাইজোন’-ও রয়েছে তাঁর। শুধুমাত্র টিভি চ্যানেলটির বাৎসরিক ব্যবসাই ২০ কোটি ডলারের বেশি।

০৮ ১২
তবে নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধিকে এর শ্রেয় দিতে চান না ফহিম। তাঁর যুক্তি, ‘‘আফগানিস্তানের বাজারে সে ভাবে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আবার ঝুঁকিও রয়েছে। যিনি ব্রিটেনে বিনিয়োগ করবেন, তিনি আফগানিস্তানে ঝুঁকি নিতে চান না। তাই নিশ্চিন্তে ব্যবসা করা যায়।’’ আফগানিস্তানের মন্ত্রীও হয়েছেন ফহিম। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সে দেশের টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন তিনি।

তবে নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধিকে এর শ্রেয় দিতে চান না ফহিম। তাঁর যুক্তি, ‘‘আফগানিস্তানের বাজারে সে ভাবে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আবার ঝুঁকিও রয়েছে। যিনি ব্রিটেনে বিনিয়োগ করবেন, তিনি আফগানিস্তানে ঝুঁকি নিতে চান না। তাই নিশ্চিন্তে ব্যবসা করা যায়।’’ আফগানিস্তানের মন্ত্রীও হয়েছেন ফহিম। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সে দেশের টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন তিনি।

০৯ ১২
কোটিপতি আফগানদের অনেকেই বিদেশ বিভুঁইয়ে সম্পত্তি কিনে রাখেন। দুবাই সৈকতের ধারে, পাম আইল্যান্ডে অবস্থিত বিলাসবহুল বাংলোগুলির অধিকাংশেরই আফগান ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিক। দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের দাবি, সেখানকার বিলাসবহুল সম্পত্তিগুলির সিকিভাগের মালিক আফগান ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিকরা।

কোটিপতি আফগানদের অনেকেই বিদেশ বিভুঁইয়ে সম্পত্তি কিনে রাখেন। দুবাই সৈকতের ধারে, পাম আইল্যান্ডে অবস্থিত বিলাসবহুল বাংলোগুলির অধিকাংশেরই আফগান ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিক। দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের দাবি, সেখানকার বিলাসবহুল সম্পত্তিগুলির সিকিভাগের মালিক আফগান ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিকরা।

১০ ১২
তবে বহির্বিশ্বে বিনিয়োগের ঘোর বিরোধী ফহিম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত বিনিয়োগ দেশের অন্দরেই করেছি। তার জন্য গর্বিত আমরা। অনেকে দেশ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন। এটাকে আমি সমর্থন করি না।’’

তবে বহির্বিশ্বে বিনিয়োগের ঘোর বিরোধী ফহিম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত বিনিয়োগ দেশের অন্দরেই করেছি। তার জন্য গর্বিত আমরা। অনেকে দেশ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন। এটাকে আমি সমর্থন করি না।’’

১১ ১২
শুধু তাই নয়, ঝামেলা এড়াতে, সন্তানের কথা ভেবে সম্পন্ন আফগানরা যখন দলে দলে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন, ফহিম, তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান কাবুলেই রয়েছেন। যদিও দুবাইয়ে তাঁর পরিবারের অনেকেই থাকেন।

শুধু তাই নয়, ঝামেলা এড়াতে, সন্তানের কথা ভেবে সম্পন্ন আফগানরা যখন দলে দলে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন, ফহিম, তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান কাবুলেই রয়েছেন। যদিও দুবাইয়ে তাঁর পরিবারের অনেকেই থাকেন।

১২ ১২
তবে ইংরেজি শিক্ষক থেকে শিল্প-সাম্রাজ্য, ৯/১১-ই তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছে বলে বিবিসি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন ফহিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেই সময় খুব কম লোকই ইংরেজি জানতেন। সৌভাগ্যবশত আমি ছিলাম তাঁদের এক জন। তাতেই জীবন পাল্টে গিয়েছে।’’

তবে ইংরেজি শিক্ষক থেকে শিল্প-সাম্রাজ্য, ৯/১১-ই তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছে বলে বিবিসি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন ফহিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেই সময় খুব কম লোকই ইংরেজি জানতেন। সৌভাগ্যবশত আমি ছিলাম তাঁদের এক জন। তাতেই জীবন পাল্টে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE