Rahul Gandhi’s choice of dressing evolves with time dgtl
Lok Sabha Election 2024
রূপবদলের রাহুল, পোশাকের মতো দাড়িও বদলান, রাজনীতির অঙ্গনে প্রথম দর্শনে কেমন ছিলেন রাজীব-পুত্র!
রাহুল গান্ধী রাজনীতিতে এসে স্যুট-কোট থেকে দূরেই থেকেছেন। তা বলে শুধুই কুর্তা-পাজামায় সীমাবদ্ধ থাকেননি। বয়স বেড়েছে। বদলেছে পোশাক-আশাক। এমনকি, দাড়ির দৈর্ঘ্যেরও হেরফের হয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ১৪:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
সাজপোশাকের জন্য বার বার প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন রাহুল গান্ধী। দামি স্যুট নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বার বার বলেছেন, ‘স্যুট-বুট কি সরকার’। সে কারণেই কি স্যুট-কোট থেকে দূরত্ব রেখে চলেছেন? যদিও রাজনীতিতে আসার পর প্রথম দিকে তাঁকে খুব একটা স্যুট-বুটে দেখা যায়নি। তবে বয়স বেড়েছে। বদলেছে পোশাক-আশাক। এমনকি, দাড়ির দৈর্ঘ্যেরও হেরফের হয়েছে কংগ্রেস সাংসদের।
০২২১
সাজপোশাকে রাহুল বরাবরই সাধারণ। তবু বার বার সকলের মধ্যে নজর কেড়েছেন। কংগ্রেসের একাংশ বলে, পরিপাটি সাজপোশাক রাহুলের রক্তে। পূর্বসূরিদের থেকেই এই গুণ পেয়েছেন।
০৩২১
জওহরলাল নেহরুর বাবা মতিলাল নেহরু পরিচ্ছন্ন সাজপোশাকের জন্য পরিচিত ছিলেন। পাশ্চাত্য পোশাক যেমন অনায়াসে তাঁকে মানিয়ে যেত, দেশীয় পোশাকেও তেমনই ততটাই সাবলীল ছিলেন।
০৪২১
তাঁর ছেলে তথা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল পোশাকশৈলীকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। মাথায় টুপি, চোস্ত পাজামা, গলাবন্ধ লম্বা কোট, উপরে হাতকাটা গলাবন্ধ জ্যাকেট, যা তাঁর নামেই পরিচিত— এটাই ছিল জওহরলালের ‘স্টাইল’।
০৫২১
রাহুলের মা সনিয়া গান্ধী, ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীও বরাবর নজর কেড়েছেন। মূলত ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সুতির শাড়িই পরতে দেখা গিয়েছেন তাঁদের।
০৬২১
ঘনিষ্ঠেরা বলেন, পোশাকের ক্ষেত্রে রাহুল তাঁর বাবা রাজীব গান্ধী দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন প্রথম জীবনে। ঠাকুমা ইন্দিরার শেষকৃত্যের সময় প্রথম বার তাঁকে দেখেছিল গোটা দেশ। সাদা কুর্তা-পাজামা। উপরে হাতকাটা সোয়েটার। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা।
০৭২১
কখনও বাবার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিশোর রাহুল। কখনও তাঁকে জড়িয়ে ধরে রয়েছেন। এর আগে মা সনিয়ার কোলে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল তাঁর।
০৮২১
ক্রমে বয়স বেড়েছে। ইন্দিরার মৃত্যুবার্ষিকীতে বাবা-মায়ের পাশে তাঁর ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তখনও রাহুলের পরনে সেই সাদা কুর্তা-পাজামা। রাজীবের মৃত্যুর পর মা সনিয়া এবং বোন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল, জিন্স, হালকা গোলাপি রঙের শার্ট পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রাহুল। চোখে সেই গোল কালো ফ্রেমের চশমা।
০৯২১
এর পরে প্রায় দু’দশক তাঁকে আর তেমন জিন্স -টিশার্টে দেখা যায়নি। কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া। বাবা রাজীবের মতোই সাদা কুর্তা-পাজামাতে নামতেন প্রচারে। এমনকি সংসদেও। চোখে তখন রিমলেস চশমা। পায়ে কালো চটি বা জুতো।
১০২১
২০০৪ সালে মা সনিয়ার ছেড়ে দেওয়া অমেঠী লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন রাহুল। সেই থেকে তিনি সাংসদ। তখন প্রচার, জনসভা থেকে নিজের কেন্দ্র, সর্বত্রই তাঁকে দেখা যেত সাদা কুর্তা-পাজামায়। কখনও কখনও দুধসাদা কুর্তার উপর চাপাতেন কালো জওহর কোট।
১১২১
গালে তখন দাড়ি রাখতেন না রাহুল। হাসলে কামানো গালে টোল দেখা যেত স্পষ্ট। চোখে সব সময়ের সঙ্গী রিমলেস চশমা। হাতে থাকত লাল তাগা।
১২২১
সক্রিয় রাজনীতিতে আসার পর মাঝেমধ্যে অন্য পোশাকে দেখা গিয়েছিল রাহুলকে। বিদেশ সফরে সে সব ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কখনও কালো টিশার্টে, কখনও জ্যাকেটে। সে সময় বার বার ‘পাপ্পু’ বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। ২০১৪ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পর সেই কটাক্ষের সুর চড়েছে।
১৩২১
সংসদে বা নিজের কেন্দ্রে সাদা কুর্তা-পাজামা পরলেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে অন্য পোশাকে দেখা যেতে থাকে রাহুলকে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে ভাব আদানপ্রদানের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে পরেছিলেন কালো ট্রাউজার, সাদা শার্ট। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। মহিলামহলেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।
১৪২১
কংগ্রেসে রাহুল-ঘনিষ্ঠেরা বলেন, কোথায় কোন পোশাক পরতে হবে, তা সনিয়া-পুত্রের থেকে ভাল কম লোকই জানেন। যখনই গোবলয়ের রাজ্যে গিয়েছেন, তখন পরেছেন খাদির কুর্তা-পাজামা। আবার যখন দক্ষিণে গিয়েছেন, পরেছেন দক্ষিণী নেতাদের মতোই সাদা শার্ট, সঙ্গে ধুতির বদলে ট্রাউজার। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে পরেছেন টিশার্ট।
১৫২১
এ হেন রাহুলের পোশাকআশাকে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেশের সময়ও কুর্তা-পাজামাতেই দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
১৬২১
যদিও নিজের কেন্দ্র ওয়েনাড়ে প্রচারের সময় প্রায়ই পরে যেতেন টিশার্ট। গত লোকসভা ভোটের পর থেকে ক্রমেই তাঁকে দেখা যায় জিনস-টিশার্টে। কানাঘুষো ছিল, ২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবিই নাকি রাহুলের পোশাক-পছন্দ বদলে ফেলার কারণ।
১৭২১
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করেন। পরনে সাদা-টিশার্ট আর ট্রাউজ়ার। তার পর থেকে রাহুলকে কবে আর কুর্তা-পাজামায় দেখা গিয়েছে, হাতে গুনে বলা যায়।
১৮২১
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীরের আগে পর্যন্ত সেই টিশার্টেই ঘুরতে দেখা গিয়েছে রাহুলকে। ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডাতেও। কাশ্মীরে শেষ হয় যাত্রা। তখন তাঁকে জ্যাকেট পরতে দেখা গিয়েছিল। যদিও কংগ্রেস জানিয়েছিল, রেনকোট পরেছেন রাহুল।
১৯২১
তার আগে পর্যন্ত কেন পরেননি, সেই প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে রাহুল বলেছিলেন, কেন দেশের গরিব কৃষক, শ্রমিক, তাঁদের ছেলেমেয়েরা গরম জামা পরতে পায় না? ছেঁড়া জামায় কাটাতে হয় তাঁদের? এর পরেই প্রধানমন্ত্রীকে পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করেন রাহুল।
২০২১
যদিও মাঝেমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে দামি জ্যাকেট পরার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এমনকি দাবি করেছে, রাহুল যে ব্র্যান্ডের সাদা টিশার্ট পরে যাত্রা করছেন, তার দাম প্রায় ৪১ হাজার টাকা।
২১২১
যাত্রায় আরও একটি বিষয় নজর কেড়েছিল দেশবাসীর— রাহুলের দাড়ি। যাত্রা যত এগিয়েছে, ততই বৃদ্ধি পেয়েছে রাহুলের দাড়ির দৈর্ঘ্য। যাত্রা শেষ হলেও দাড়ি পুরোপুরি কামিয়ে ফেলেননি রাহুল। গালে রয়েই গিয়েছে সাদা-কালো চাপদাড়ি। পাক ধরেছে তাঁর লালচে চুলেও। এই লোকসভা ভোটের পরেও কি নতুন কোনও রূপে দেখা যাবে রাহুলকে? প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।