Philippines exits China’s Belt and Road Initiative dgtl
China Philippines Relation
চিনের প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, ‘ক্ষুদ্র’ পড়শি বিপদে ফেলল জিনপিংকে?
চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে ফিলিপিন্স। একাধিক প্রকল্প তারা বাতিল করে দিয়েছে। পরিবর্তে ফিলিপিন্সের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে আমেরিকার সঙ্গে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এশিয়ায় চিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পের নাম বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একাধিক পড়শি দেশে চিন তার প্রভাব বিস্তার করেছে। সম্প্রসারিত হয়েছে বাণিজ্য।
০২১৮
বিভিন্ন দেশকে বিআরআই-এর মাধ্যমে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে বেজিং। আর্থিক ভাবে তুলনামূলক দুর্বল দেশগুলিই এ ভাবে চিনের প্রকল্পের আওতায় এসেছে। ওই দেশে চিন আর্থিক বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
০৩১৮
আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান, চিনের প্রকল্পের সঙ্গে এশিয়ার অনেক দেশই যুক্ত হয়েছে। তবে সম্প্রতি চিনের এক পড়শি দেশ এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
০৪১৮
চিনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ চিন সাগরের পাশেই রয়েছে ফিলিপিন্স। ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দ্বীপরাষ্ট্র। এর পূর্বে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং উত্তরে তাইওয়ান।
০৫১৮
ফিলিপিন্সে প্রায় ১২ কোটি মানুষ বসবাস করেন। চিনের বিশালতার নিরিখে যাকে ‘ক্ষুদ্র’ বলাই যায়। কিন্তু এই ক্ষুদ্র পড়শিই জিনপিংয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বিআরআই থেকে সম্প্রতি বেরিয়ে গিয়েছে ফিলিপিন্স।
০৬১৮
ফিলিপিন্সের পরিবহণ দফতর থেকে বিআরআই-এর প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ফিলিপিন্স সেনেট জানিয়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চিনকে আর তারা বিশ্বাস করে না।
০৭১৮
দীর্ঘ দিন ধরে প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ফিলিপিন্স। দেশের পরিবহণ সচিব জেমি বাতিস্তা বলেন, ‘‘আমাদের তিনটি বড় প্রকল্পে আর চিনের টাকা নেওয়া হবে না। ৪৯০ কোটির ওই প্রকল্পের জন্য চিনের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছিল, তা বাতিল হচ্ছে।’’ কারণ হিসাবে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা তো সারা জীবন প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পারব না। আমাদের মনে হয় না চিন এ বিষয়ে আর আগ্রহী।’’
০৮১৮
ফিলিপিন্সের এই প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তের নেপথ্য অন্য পটভূমি রয়েছে। বিআরআই-এর অধীনে ফিলিপিন্সে মোট ২,৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং প্রকল্প সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চিন। গত ছয় বছরে অর্ধেক কাজও এগোয়নি বলে দাবি।
০৯১৮
ফিলিপিন্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রড্রিগো ডুটেরটে চিনপন্থী ছিলেন। বিভিন্ন নীতির জন্য তিনি দেশের অভ্যন্তরে সমালোচিতও হয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর কুর্সিতে বসেছেন বংবং মার্কোস। চিনের পরিবর্তে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলছেন তিনি।
১০১৮
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিপিন্স। এই সাগরের দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে সংলগ্ন দেশগুলির মধ্যে সংঘর্ষ, বিরোধ চলতেই থাকে। মদত দেয় আমেরিকাও। ফিলিপিন্স এবং চিন এই সংঘর্ষের মাঝেও বিআরআই-এর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। কিন্তু সেই সমঝোতায় ফাটল দেখা দিয়েছে।
১১১৮
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা বাহিনীর সঙ্গে ফিলিপিন্সের নৌসেনার ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে আসে প্রায়ই। তেমনই একটি সাম্প্রতিক বিরোধের পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, ফিলিপিন্সের সঙ্গে তাদের সমঝোতার কারণে ফিলিপিন্সের জাহাজ, সেনা কিংবা বিমানের উপর যে কোনও ধরনের চিনা হামলার জবাব দেবে আমেরিকান বাহিনী।
১২১৮
চিনের প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসে ফিলিপিন্স ঘোষণা করেছে, বেজিংয়ের বিকল্প হিসাবে তারা আমেরিকা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিনিয়োগের মাধ্যম হিসাবে দেখছে।
১৩১৮
বিআরআই-এর তিনটি প্রকল্প বাতিল ঘোষণার পর আরও ছ’টি চিনা প্রকল্পকেও খরচের খাতায় রাখা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ফিলিপিন্স। এর ফলে চিনের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে। সব মিলিয়ে চিনের সঙ্গে ফিলিপিন্সের সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
১৪১৮
শুধু ফিলিপিন্স নয়, সার্বিক ভাবেই চিনের বিআরআই কিছুটা থমকেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই প্রকল্পের অধীনে চিনের কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিআরআই-এ চিনের সক্রিয়তা ৪০ শতাংশ কমেছে। করোনা অতিমারি যার অন্যতম কারণ।
১৫১৮
করোনা অতিমারিতে চিনের অর্থনীতি যে বড় ধাক্কা খেয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিআরআই-এর মাধ্যমে চিন যে দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিল, অতিমারির পর তাদের বিপদে বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য করতে হয়েছে জিনপিংকে। পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা যার অন্যতম উদাহরণ।
১৬১৮
এই অর্থসাহায্য এবং চিনের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে সামলাতে গিয়েই বিআরআই-এর গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ফিলিপিন্সের সঙ্গে চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।
১৭১৮
চিনের বিআরআই থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে ইউরোপের একটি দেশও। ২০১৯ সাল থেকে ইটালি চিনের এই প্রকল্পের শরিক। চলতি বছরের জুলাই মাসে তারা প্রকল্প ত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে।
১৮১৮
একের পর এক দেশ বিআরআই থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। যা দেখে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি এশিয়া, ইউরোপে চিনের নিয়ন্ত্রণের মুঠি আলগা হচ্ছে? জিনপিংকে বিষয়টি চিন্তায় রেখেছে বলেই মত অনেকের।