Opposition leaders take a dig on Maldives President Mohamed Muizzu over his Government’s decisions dgtl
India-Maldives Row
মুইজ্জুর ‘ভারত-বিরোধী অবস্থান’ অত্যন্ত ক্ষতিকর! নিজের ঘরেই কোণঠাসা মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট
মলদ্বীপের তরফে চিনা জাহাজের নোঙর করার কথা প্রকাশ্যে আনার পরে পরেই মুইজ্জু সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সে দেশের বিরোধী নেতারা। জনগণের একাংশও সরকারের সমালোচনা শুরু করেছেন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
‘ভারত-বৈরিতা’র জেরে এ বার নিজের ঘরেই সমালোচিত মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু।
০২২৭
মলদ্বীপের ‘ভারত-বিরোধী অবস্থান’ দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ বলে মুইজ্জুকে আক্রমণ করলেন সে দেশের প্রধান দুই বিরোধী দলের নেতারা।
০৩২৭
নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়ে সম্প্রতি মুইজ্জু সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, মলদ্বীপে ঘাঁটি গাড়তে চলেছে চিনা গুপ্তচর জাহাজ।
০৪২৭
‘শিয়াং ইয়াং হং-৩’ নামে ওই জাহাজটি ইতিমধ্যেই দক্ষিণ চিন সাগর থেকে মলাক্কা প্রণালী পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভা এবং সুমাত্রা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যবর্তী সুন্দা প্রণালীতে পৌঁছেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেটি ভারত মহাসাগরে ঢুকে পড়তে পারে। ৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিনা জাহাজ মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে পৌঁছতে পারে।
০৫২৭
মলদ্বীপের তরফে চিনা জাহাজের নোঙর করার কথা প্রকাশ্যে আনার পরেই মুইজ্জু সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সে দেশের বিরোধী নেতারা। জনগণের একাংশও সরকারের সমালোচনা শুরু করেছেন।
০৬২৭
‘মলদ্বীভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি)’ এবং ‘দ্য ডেমোক্র্যাট’ দলের নেতাদের মতে, মুইজ্জুর ‘ভারত-বিরোধী অবস্থান’ দেশকে বড়সড় বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে। পাশাপাশি মলদ্বীপের ‘চিন-প্রীতি’ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিবর্তন আনতে পারে। যার ফলে আখেরে মলদ্বীপেরই ক্ষতি হবে বলে বিরোধী নেতাদের দাবি।
০৭২৭
এমডিপি এবং ডেমোক্র্যাট দলের তরফে একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এমডিপি এবং ডেমোক্র্যাট— উভয় দলই বিশ্বাস করে যে উন্নয়নে সাহায্য করে এমন বন্ধুকে দূরে সরিয়ে দেওয়া এবং বিশেষ করে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুকে দূরে ঠেলে দেওয়া আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্যও এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ক্ষতিকর।’’
০৮২৭
মলদ্বীপের বিরোধী দলগুলির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দাবি, মলদ্বীপের বিদেশ নীতি অনুয়ায়ী, সে দেশের সরকারের উচিত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, এমন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলা।
০৯২৭
ভারত মহাসাগরে স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা মালদ্বীপের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্যও অত্যাবশ্যক বলে বিরোধী দুই দল যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে।
১০২৭
পুরো বিষয়টি নিয়ে এমডিপির চেয়ারপার্সন ফইয়াজ ইসমাইল, মলদ্বীপের আইনসভার ডেপুটি স্পিকার আহমদ সেলিম, এবং ডেমোক্র্যাট প্রধান হাসান লতিফ এবং নেতা আলি আজিম যৌথ ভাবে একটি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজনও করেন।
১১২৭
মলদ্বীপের ৮৭ সদস্যের আইনসভায়, যৌথ ভাবে ৫৫টি আসন এমডিপি এবং ডেমোক্র্যাট নেতাদের দখলে।
১২২৭
ভারত-মলদ্বীপের টানাপড়েনের নতুন করে সূত্রপাত চলতি মাসের গোড়া থেকে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
১৩২৭
অভিযোগ, মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী, মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ কিছু ছবিতে মোদীকে ‘ক্রীড়নক’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়েছিল।
১৪২৭
মলদ্বীপের বিরোধী নেতাদের চাপের মুখে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কিন্তু সংঘাতের পরিস্থিতি তাতে প্রশমিত হয়নি। বরং মুইজ্জুর একের পর এক সিদ্ধান্তের কারণে ‘আগুনে ঘি’ পড়ে।
১৫২৭
চিনা গুপ্তচর জাহাজ মলদ্বীপে ঘাঁটি গাড়তে চলেছে প্রকাশ্যে আসার পর নয়াদিল্লি-মালে কূটনৈতিক টানাপড়েন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক চিন সফরের পরেই এই ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
১৬২৭
গত কয়েক বছরে চিনা নজরদার জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’, ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’ এবং ‘শি ইয়ান ৬’ ভারতের প্রতিবেশী আর এক দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে সাময়িক ঘাঁটি গেড়েছিল। যা নিয়ে নয়াদিল্লি-কলম্বো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ শুরু হয় বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর।
১৭২৭
‘শিয়াং ইয়াং হং-৩’-এরও হাম্বানটোটায় নোঙর করার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের আপত্তিকে মর্যাদা দিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের সরকার চিনা চর জাহাজকে সে দেশে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৮২৭
এই পরিস্থিতিতে মলদ্বীপের ‘চিনপন্থী’ মুইজ্জুর পদক্ষেপ সরাসরি ভারতের সঙ্গে সংঘাতের বার্তা বলে কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন।
১৯২৭
সরকারি ভাবে বেজিং অবশ্য গুপ্তচর জাহাজের অস্তিত্বই স্বীকার করেনি। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকারের দাবি, আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে ‘গভীর সমুদ্র সংক্রান্ত গবেষণা’র কাজে যুক্ত থাকবে ‘শিয়াং ইয়াং হং-৩’।
২০২৭
এর আগে শ্রীলঙ্কায় চর জাহাজের উপস্থিতি নিয়েও তারা ‘সমুদ্র গবেষণা’র কথা বলেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলির রিপোর্ট বলছে, অতীতে শ্রীলঙ্কার বন্দরকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করে ভারতীয় নৌসেনা গতিবিধি এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উপর নজরদারির কাজ করে ওই জাহাজগুলি। এ বার তার ঠিকানা মলদ্বীপ।
২১২৭
প্রসঙ্গত, গত ১১ জানুয়ারি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সে দেশের রাজধানী বেজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে মলদ্বীপের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন জিনপিং। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বৈঠকেই চিনকে তাঁদের ‘পুরনো বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বলেন মুইজ্জু।
২২২৭
ঘটনাচক্রে, চিন সফর থেকে ফিরেই মুইজ্জু মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর জন্য ১৫ মার্চের ‘চরম সময়সীমা’ ঘোষণা করেছেন। ২০১০ সাল থেকে একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে প্রায় ১০০ জন ভারতীয় সেনা মলদ্বীপে রয়েছেন।
২৩২৭
মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ‘চিনপন্থী’ নেতা মুইজ্জু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে একের পর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যা নিয়ে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
২৪২৭
প্রেসিডেন্ট হয়েই মলদ্বীপে মোতায়েন ভারতীয় সেনাকে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন মুইজ্জু। সম্প্রতি, তিনি নয়াদিল্লির সঙ্গে চার বছরের পুরনো জলচুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন।
২৫২৭
ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাহায্য করার জন্য মলদ্বীপের জলসীমায় ‘হাইড্রোগ্রাফিক’ সমীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলত। চুক্তি বাতিলের ফলে তা বন্ধ হয়েছে।
২৬২৭
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের মোকাবিলা করতে সক্রিয় মোদী সরকার। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়া কোয়াড-এ তারা প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কিন্তু মলদ্বীপের চিনা জাহাজকে প্রবেশাধিকার দেওয়ার কারণে সমুদ্রপথ নিয়ে ভারতের চিন্তা বেড়েছে বলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশের দাবি। মুইজ্জুর এই সিদ্ধান্তকেও ‘ভারত-বিরোধী’ বলে মনে করছেন অনেকে।
২৭২৭
এই ভাবে মুইজ্জুর ‘ভারত-বৈরিতা’ নিয়ে এ বার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সে দেশের বিরোধী নেতারা। মুইজ্জুর সিদ্ধান্ত দেশের ‘ক্ষতি’ করতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।