Olga Kolobova, allegedly a female Russian spy who infiltrated NATO dgtl
Olga Kolobova
Spy: প্রেমের ‘ফাঁদে’ ফেলতেন নেটো কর্তাদের, রাশিয়ার এই গুপ্তচরের অস্তিত্বই জানত না এফবিআই!
ইটালিতে কাজকারবার জমিয়ে বসা মারিয়া আসলে নাকি রাশিয়ার গুপ্তচর। নেটোর আধিকারিকদের ফাঁসিয়ে তথ্য হাতানোই যাঁর কাজ ছিল বলে দাবি।
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২২ ০৮:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
বছরের পর বছর ধরে ইটালিতে কাজকারবার। সেখানেই বসবাস। সেখানকার অভিজাত সমাজে অনায়াস যাতায়াত। তবে ইটালির সেই বাসিন্দা মারিয়া অ্যাডেলা কুফেল্ড রিভেরার আসল পরিচয় নাকি অন্য। তা নাকি কখনই প্রকাশ্যে আসেনি। এমনই দাবি নেদারল্যান্ডসের একটি সাংবাদিকদের গোষ্ঠীর।
০২২১
মারিয়ার আসল পরিচয় কী? বেলিংক্যাট নামে ওই তদন্তমূলক গোষ্ঠীর দাবি, ইটালিতে কাজকারবার জমিয়ে বসা মারিয়া আসলে রাশিয়ার গুপ্তচর। ভ্লাদিমির পুতিনের সেনাবাহিনীর হয়ে নেটো এবং আমেরিকার এমন আধিকারিকদের সঙ্গে মেলামেশা করা ছিল তাঁর কাজের অঙ্গ, যাঁদের কাছে স্পর্শকাতর গোপন তথ্য রয়েছে। তাঁদের অনেককেই নাকি প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন মারিয়া। সবই তথ্য হাতানোর জন্য।
০৩২১
বেলিংক্যাটের দাবি, মারিয়া আসলে রাশিয়ার কুখ্যাত চরদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘ইললিগ্যালস’-এর সদস্য। তাঁর আসল নাম ওলগা কোলোবোভা। ক্রেমলিনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেই তাঁকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছিল।
০৪২১
ওলগা সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর গুপ্তচর সংস্থায় ২০০৬ সালে কাজ শুরু করেছিলেন ওলগা। সে সময় থেকে নিজের নাম-পরিচয় বদলে ফেলেন তিনি।
০৫২১
বেলিংক্যাটের তদন্তকারীদের দাবি, ওলগা আদতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর এক আধিকারিকের মেয়ে। তবে সর্বত্র নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলতেন, তিনি পেরুভিয়ান মা এবং জার্মান বাবার মেয়ে। পেরুতেই তাঁর জন্ম। ছোটবেলায় নাকি তাঁকে পরিত্যাগ করে মস্কোয় ফেলে রেখে আসেন মা-বাবা। সেখানকার এক দম্পতি তাঁকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন।
০৬২১
ওলগার সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে বেলিংক্যাট। তাদের দাবি, মারিয়া নামে বছরের পর বছর ধরে ইউরোপে সফর করেছেন ওলগা। মাল্টা থেকে রোমে পৌঁছন ২০১০ সালে। সেখানে এক ফ্যাশন পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক মার্সেল ডি’আর্জি স্মিথের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সেখান থেকে প্যারিসে একটি গয়নার দোকান খোলেন তিনি।
০৭২১
২০১২ সালে প্যারিস থেকে রোমে এসে বাসা বাঁধেন মারিয়া। সেখানকার এক রুশ-ইকুয়েডোরিয়ানের সঙ্গে সংসারও পাতেন। তবে বিয়ের বছরখানেকের মধ্যে রহস্যজনক ভাবে মারা যান মারিয়ার স্বামী। এর পর ইটালির নেপলসে পাড়ি দেন মারিয়া।
০৮২১
নেটোর জোটসঙ্গী জয়েন্ট ফোর্স কম্যান্ডের ঘরের মাঠ নেপলসে একটি গয়নার দোকান খুলেছিলেন মারিয়া। সে শহরে থাকাকালীন তিনি নেটো এবং আমেরিকার সেনাবাহিনীর অসংখ্য শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ পাতিয়েছিলেন বলে দাবি।
০৯২১
বেলিংক্যাটের দাবি, নেপলসে থাকাকালীন একটি নাইটক্লাব-সহ গয়নার কারিগর হিসাবে নাম কামিয়েছিলেন মারিয়া। সে সময়ই শহরের অভিজাতদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয়েছিল তাঁর। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নেটোর কর্মী থেকে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
১০২১
তদন্তকারীদের দাবি, ইউরোপীয় এবং আমেরিকার সুরক্ষা আধিকারিকদের ফাঁসিয়ে তাঁদের কাছ থেকে তথ্য হাতানোই ছিল মারিয়ার আসল উদ্দেশ্য। আর এ সবই তিনি করতেন ক্রেমলিনের নির্দেশে।
১১২১
‘ইললিগ্যালস’-এর সদস্য হিসাবে ওলগাকে নাকি দ্বৈত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলা হয়েছিল। তার অঙ্গ হিসাবে কড়া প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ভুয়ো পরিচয়ে বছরের পর বছর ধরে বিদেশে বসবাস করা বা সেখানকার পেশাদার হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলাও ছিল সংগঠনের পরিকল্পনার অঙ্গ। এ সবই দাবি করেছে বেলিংক্যাট।
১২২১
তদন্তকারীদের দাবি, নিজের মিশন শেষ হতে ২০১৮ সালে মস্কোয় ফিরেও গিয়েছিলেন মারিয়া। সে সময় নেপলসের বন্ধুবান্ধবদের তিনি জানিয়েছিলেন যে, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ায় কেমোথেরাপি করাতে শহর ছাড়ছেন। বেলিংক্যাট জানিয়েছে, এই অজুহাতে গায়েব হওয়ায় যাবতীয় সন্দেহের ঊর্ধ্বে চলে যান মারিয়া।
১৩২১
মাস কয়েক আগে ফেসবুকে শেষ বার দেখা গিয়েছে মারিয়াকে। মধ্য চল্লিশের এই মহিলার আর কোনও হদিস পাওয়া যায় না।
১৪২১
মারিয়ার আসল পরিচয় কী ভাবে প্রকাশ্যে এল, তা-ও জানিয়েছে বেলিংক্যাট। তাদের দাবি, মারিয়ার পরিচয় যে ভুয়ো, তা জানিয়েছে পেরুর বিচার মন্ত্রক।
১৫২১
মারিয়ার ‘মিশন’ সফল হয়েছিল কি না, তা অবশ্য জানায়নি বেলিংক্যাট। তবে তাদের তদন্তকারীদের দাবি, নেটো-সহ আমেরিকার নৌসেনাবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা ছিল তাঁর। নেটো এবং আমেরিকার নৌসেনার বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলিতেও হাজির ছিলেন মারিয়া। এ ছাড়া, নেটোর বহু আধিকারিকের বাড়িতেও ঘন ঘন যাতায়াত ছিল তাঁর।
১৬২১
নিজের ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার পাশাপাশি ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য-সহ ইটালিতে বার বার সফর করছেন মারিয়া— এমনই দাবি তদন্তকারীদের। যদিও মারিয়ার দাবি, ব্যবসায়িক কারণেই ওই সব দেশে যাতায়াত ছিল তাঁর। এমনকি, গয়নার ব্যবসার খাতিরে ওই উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বাড়িতে নানা অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।
১৭২১
বেলিংক্যাটের তদন্তকারীদের দাবি, বাহরাইনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজকুমার খালিফা বিন সলমন আল খলিফার সঙ্গে হাতে মেলাতেও দেখা গিয়েছে মারিয়াকে। যদিও ফেসবুক থেকে সেই ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হয়।
১৮২১
মারিয়ার নামে মস্কোয় সম্পত্তিও রয়েছে বলে দাবি বেলিংক্যাটের। ২০১৩ সালে মস্কোয় ফিরে গিয়ে সেটি কিনেছিলেন মারিয়া। এর পর ২০২০ সালেও আর একটি সম্পত্তির মালিকানা হাতে এসেছিল মারিয়ার।
১৯২১
বেলিংক্যাটের আরও দাবি, রাশিয়ান পেনশন ফান্ডের অফিস থেকে মারিয়া বহু বার খাবারের অর্ডার দিয়েছেন। সে রেকর্ডও হাতে এসেছে তাদের।
২০২১
বিদেশে গিয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সময় কখনও নাকি ধরা পড়েননি মারিয়া। উল্টে, আমেরিকা এবং ইউরোপীয় গোয়েন্দাদের নাকি ধারণাই নেই যে মারিয়ার মতো ভুয়ো নামের কোনও রুশ গুপ্তচর রয়েছেন।
২১২১
বেলিংক্যাটের রিপোর্টে দাবি, ‘নেটোর নিজস্ব সিকিউরিটি সার্ভিসের কাছে মারিয়ার অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। এমনকি, রুশ সেনাবাহিনীর এই চরকে যে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ন্যাটোর জয়েন্ট ফোর্স কম্যান্ডের কেন্দ্রস্থল ইউরোপে রাখা হয়েছিল, তা-ও অজানাই ছিল।’