Some interesting facts about the 750 crore palace of Cyrus Poonawalla dgtl
Wankaner House
এই বাড়িটা চেনেন? ছিল প্রাসাদ, তারপর মার্কিন দূতাবাস, এখন এক ভারতীয় ধনকুবেরের দখলে
১৯৫৭ সালে দেনার দায়ে ডুবে ওয়াঙ্কানার রাজপ্রাসাদটি মার্কিন সরকারের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য লিজ দেন রাজা প্রতাপ সিংহ জী ঝালা। বিনিময়ে মেলে ১৮ লক্ষ টাকা। বহু বছর এই রাজপ্রাসাদই মার্কিন দূতাবাস হিসাবে পরিচিত ছিল মুম্বইবাসীর কাছে। দূতাবাস স্থানান্তরিত হওয়ায় সেই রাজপ্রাসাদের হাতবদল হল আবার, ফিরে এল এক ভারতীয়ের হাতেই।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ১৩:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
১৯৫৭ সালে দেনার দায়ে ডুবে ওয়াঙ্কানার রাজপ্রাসাদটি মার্কিন সরকারের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য লিজ দেন রাজা প্রতাপ সিংহজি ঝালা। বিনিময়ে মেলে ১৮ লক্ষ টাকা। বহু বছর এই রাজপ্রাসাদই মার্কিন দূতাবাস হিসাবে পরিচিত ছিল মুম্বইবাসীর কাছে। দূতাবাস স্থানান্তরিত হওয়ায় সেই রাজপ্রাসাদের হাতবদল হল আবার, ফিরে এল এক ভারতীয়ের হাতেই।
০২১৪
২০১১ সালে ঐতিহ্যশালী এই রাজপ্রাসাদ থেকে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্স অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আরও একবার বিক্রির জন্য বাজারে উঠে আসে এই প্রাসাদ। এ বার দাম ধার্য হয় ৮৫০ কোটি টাকা।
০৩১৪
৪ বছর ধরে বিস্তর দর কষাকষির পর ২০১৫ সালে বিক্রি হয় এই প্রাসাদ। ৭৫০ কোটি টাকা দিয়ে লিঙ্কন হাউস ওরফে ওয়াঙ্কানার হাউস কিনে নেন পুণের বিখ্যাত ব্যবসায়ী সাইরাস পুনাওয়ালা। তিনি সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান।
০৪১৪
সিরাম ইনস্টিটিউট মূলত বাচ্চাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা। সাপের কামড়ের প্রতিরোধক তৈরির সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানও হল এই সিরাম ইনস্টিটিউট। ১৯৬৬ সালে সাইরাস নিজেই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
০৫১৪
২০১৮ সালের ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে সপ্তম স্থানে ছিলেন সাইরাস। এ ছাড়াও তিনি ২০০৫ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হাত থেকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারও পান সাইরাস।
০৬১৪
সাইরাসের বাবা ঘোড়ার ব্রিডার ছিলেন। বাবার সেই শখ বজায় রেখেছেন সাইরাস। দামি ঘোড়া শুধু প্রতিপালনই নয়, তাদের দিয়ে রেসের মাঠে দৌড়ও করান তিনি। ঘোড়ার দৌড়ে তাঁর দখলে রয়েছে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও।
০৭১৪
শুধু রেসের মাঠেই নয়, তাঁর আনাগোনা রয়েছে বলিউডে-হলিউডেও। করিনা কপূর থেকে শুরু করে প্যারিস হিলটন সকলের সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক সাইরাসের।
০৮১৪
সাইরাসের কেনা এই বাড়ি এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে বেশি দামে কেনা বাড়ি হিসাবে গণ্য করা হয়। ২ একর জমির উপর তৈরি ৫০ হাজার বর্গফুটের এই বিশালাকার প্রাসাদটি মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি এলাকায় ভুলাভাই দেশাই রোডে অবস্থিত।
০৯১৪
এক সময়ে মার্কিন দূতাবাস থাকার কারণে এই প্রাসাদের বিষয়ে বিশেষ কিছু জানাতে নারাজ সাইরাসের বড় ছেলে আদার জানান, তাঁরা এই বাড়িটিকে নিজেদের বাসস্থান হিসাবেই ব্যবহার করবেন। তবে এই বাড়িটি যেহেতু গ্রেড-৩ হেরিটেজের তকমা পেয়েছে বহু বছর আগেই, তাই সংরক্ষণের জন্য মেরামতির কাজ চলবে আগে।
১০১৪
১৯৩৩ সালে এই রাজপ্রাসাদটি তৈরি করেন ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড ব্যাটলি। প্রাসাদটি ওয়াঙ্কানারের তৎকালীন রাজা মহারাণা রাজ শ্রী অমর সিংহজির আমলে তৈরি হয় এবং দেশভাগের সময় তিনি ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ওয়াঙ্কানারকে আলাদা প্রদেশ হিসাবে দাবি ছেড়ে গুজরাতের অন্তর্ভূক্ত হন। তাঁর মৃত্যুর পর রাজা হন তাঁর ছেলে প্রতাপ সিংহজি ঝালা ।
১১১৪
প্রতাপ সিংহজি ঝালা দেনা ও করের দায়ে ডুবে বাধ্য হয়ে মার্কিন সরকারের কাছে ৯৯৯ বছরের জন্য এই প্রাসাদকে লিজ দেন। বিগত কয়েক দশক ধরে এই জমির ক্রমবর্ধমান দাম দেখে রাজ পরিবারের আফশোস করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। প্রতাপ সিংহের ছেলে দিগ্বিজয় সিংহ ঝালা বর্তমানে ওয়াঙ্কানারের রণজিৎ বিলাস প্যালেসে থাকেন।
১২১৪
তিনি বলেন, “আমরা প্রাসাদ বিক্রির অন্যতম নিকৃষ্ট চুক্তি করেছি, যার আফসোস সারা জীবন থেকে যাবে। এই প্রাসাদেই আমার ছোটবেলা কেটেছে, সেই স্মৃতিজড়িত বাড়িটি হস্তান্তর হওয়া যেমন দুঃখের বিষয়, সেই চুক্তি লোকসানে পরিণত হওয়া আরও দুঃখের বিষয়।”
১৩১৪
রাজপ্রাসাদ ও তার থেকে পরিবর্তিত হয়ে এককালীন মার্কিন দূতাবাসটি সাইরাস পুনাওয়ালা কিনে নিলেও তার দখল নেওয়া সহজ ছিল না। কারণ ২০১৫ সালে পুনাওয়ালারা বাড়িটি কেনার পরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে এই জমিটি তাদের, তাই সাইরাস যেন এই জমিটি ছেড়ে দেন।
১৪১৪
সাইরাসও ছাড়ার পাত্র নয়। তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। সরকারি দাবির স্বপক্ষে ডেপুটি কালেক্টর বলেন, “সমস্ত নথিপত্র দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে জমিটি ভারত সরকারের। ১৯৩০ সালে এই জমিটি ওয়াঙ্কানারের রাজপরিবারকে দেওয়া হয়।” তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, এক সময়ে এই প্রাসাদ মার্কিন দূতাবাস থাকার কারণেই প্রতিরক্ষা দফতর এই জমি দখল করতে চায়।