প্লে স্টোর, অ্যাপ স্টোরে টিকটক পাওয়াও যাচ্ছে না। তার আগেই অবশ্য টিকটক ইউজারদের নিয়ে মিমের বন্যা শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কী চলছে দেখুন সেখানে।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৯:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
সীমান্তে ভারত-চিন উত্তেজনা যত বাড়ছে, দেশের মধ্যে চিন বিরোধী মনোভাব ততই হাওয়া পাচ্ছে। আর চিনের তৈরি অন্যান্য সামগ্রীর পাশাপাশি সব থেকে বেশি বিপদে পড়েছে চিনা অ্যাপগুলি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশবাসীর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবারই টিকটক, শেয়ারইট-সহ ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। এমনকি প্লে স্টোর, অ্যাপ স্টোরে টিকটক পাওয়াও যাচ্ছে না। তার আগেই অবশ্য টিকটক ইউজারদের নিয়ে মিমের বন্যা শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কী চলছে দেখুন সেখানে।
০২২২
কোথাও দেখা যাচ্ছে, এক কিশোরের কান্নার নানান মুহূর্ত নিয়ে একটি কোলাজ বানানো হয়েছে। যেন টিকটক ব্যবহারকারীরা এমন ভাবে অঝোরে কান্নাকাটি শুরু করেছেন। আর মজা করে তাঁদের যেন সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, কান্নাকাটি না করতে বলছেন সবাই।
০৩২২
টিকটক ব্যবহারকারীদের মনে অবস্থা তুলে ধরতে ব্যবহাকরা হয়েছে পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে তৈরি ধারাবাহিকের দৃশ্যও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক মুকুট পরা প্রৌঢ় বলছেন, “আজ আমার দুঃখ, নিরাশার কোনও সীমা নেই।”
০৪২২
আর নেট দুনিয়ায় এই ‘বয়কট বয়কট’ হাওয়া শুরুর পর টিকটকও যেন একটু অভিমানী। সে যেন বলতে চাইছে, “ঠিক আছে তোমরা চাইছো না তো, আমি চলে যাচ্ছি।” এমনই একটি মিম ঘুরছে। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ফিল্মে রণবীর কপূরের একটি গানের দৃশ্য নিয়ে। সেখানে রণবীরের মুখের উপর টিকটকের লোগো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। টিকটক যেন বলছে, “আচ্ছা চলতা হুঁ দুয়ায়ো মেঁ ইয়াদ রখ না।”
০৫২২
টিকটক নিষিদ্ধ করা হলেও অনলাইন গেম পাবজিকে এই তালিকায় রাখা হয়নি। তা নিয়েও মিম তৈরি করে ফেলেছেন নেটাগরিকরা। সেখানে অক্ষয় কুমার ও সলমন খানের ‘মুঝসে শাদি করোগি’ ফিল্মের একটি দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
০৬২২
টিকটক ব্যান হয়ে গেলেও পাবজি যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি, তাই পাবজি প্লেয়াররা যেন ‘হেরাফেরি’ ফিল্মের পরেশ রাওয়াল আর সুনীল শেট্টির মতো নাচতে নাচতে বলছেন, “আমরা বেঁচে গেলাম।”
০৭২২
একদিকে ইউটিউবার অন্যদিকে টিকটক ইউজার, আসলে দু’টি প্ল্যাটফর্মই মূলত ভিডিয়ো শেয়ার করার জন্য। যাঁরা এতদিন টিকটকে ফলোয়ার বাড়িয়ে ফেলেছিলেন, তাঁরা এবার বিপদে পড়লেন। কিন্তু ইউটিউবারদের কোনও সমস্যা হয়নি। ফলে ভিডিয়ো শেয়ারের জন্য টিকটক ইউজারদের এবার হয়তো ইউটিউবে আসতে হবে। ফলোয়ার পেতে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। সেই পরিস্থিতিতে ইউটিউবারদের অবস্থা যেন ‘লগান’ ফিল্মের শেষের দৃশ্যের আমির খান ও তাঁর ক্রিকেট টিমের মতো, জয়ের আনন্দে নাচতে শুরু করেছেন তাঁরা।
০৮২২
একটি মিমে তো আবার ইউটিউবার আর টিকটক ইউজারদের এই, ‘কারও সর্বনাশ কারও পৌষ মাস’ -পরিস্থিতিতে বিরাট কোহালির ছবিও পোস্ট করে দিয়েছেন। সেখানে বিপক্ষকে প্যাঁচে ফেলার পর দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হাসাহাসি করে যেন বলছেন, “কেমন দিলাম?”
০৯২২
আর একটি মিম বানানো হয়েছে শাহরুখ খানের ‘বাদশা’ ফিল্মের একটি দৃশ্য ব্যবহার করে। সেখানে জনি লিভারকে দেখা যাচ্ছে, ডাক্তারের বেশে ‘অপারেশন থিয়েটর’ থেকে বেরিয়ে এসে বলছেন, “অপারেশন সাকসেসফুল।” যেন ইউটিউবাররা বহু দিন ধরে এই অপেক্ষাতেই ছিলেন, কবে টিকটক বন্ধ হবে। সেই লক্ষ্য যেন পূরণ হয়ে গিয়েছে।
১০২২
কিন্তু এমনই কিছু নেটাগরিক আছেন, যাঁরা না টিকটক ব্যবহার করতেন, না খেলতেন পাবজি। এই মিম যুদ্ধে তাঁদের ভাবখানা এমন, “আর আমাদের কী এল গেল।”
১১২২
আবার পাবজি নিষিদ্ধ না করে টিকটক নিষিদ্ধ করায় এই দুই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অবস্থা শাহিদ কপূর, পরেশ রাওয়াল অভিনীত ‘চুপকে চুপকে’ ছবির রচপাল যাদবের কুস্তি লড়তে যাওয়ার অবস্থা। যেখানে তাঁর প্রথমে আনন্দ আর আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যেন পাবজি প্লেয়াররা আনন্দে নাচছেন, আর কান্নাকাটি শুরু করেছেন টিকটক ইউজাররা।
১২২২
কেউ কেউ তো আবার সরাসরি টিকটকের ছবিতে মালা পরিয়ে দিয়েছেন। যেমনটা করা হয় কারও মৃত্যুর পর।
১৩২২
কোনও কোনও টিকটক ইউজার আবার নাকি বলতে শুরু করেছেন, তাঁরা ইউটিবেও একই রকম জনপ্রিয়তা তৈরি করে ফেলবেন, দখল নেবেন ইউটিউব। সেই দাবি নিয়েও মিম বানাতে ছাড়েননি নেটাগরিকরা।
১৪২২
একজন তো আবার একটি টিকটক ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, “এই কারণেই টিকটক নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” ভিডিয়োটিতে দুই যুবককে অদ্ভুত সাজে, হাতে ঝাঁটা নিয়ে নাচতে দেখা যাচ্ছে।
১৫২২
শাহরুখের ‘বাদশা’ ফিল্মের আর একটি দৃশ্য ব্যবহার করে তৈরি করা মিম ঘুরছে। সেখানে ভিলেন, নায়ক ও তার সঙ্গীদের বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম টিপছেন। কিন্তু সেই বোমা তাঁদের কাছেই পড়ে ছিল। ফলে বিস্ফোরণে তাঁরাই একপ্রকার উড়ে যান। যে ভাবে টিকটক দেশ থেকে প্রায় উড়ে গেল।
১৬২২
যাঁরা এতদিন টিকটকের ভিডিয়ো পছন্দ করতেন না, তাঁরা যেন ভারত সরকারের এই ঘোষণায় বেজায় খুশি হয়েছেন। খুশিতে তাঁদের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসছে। সলমন খান ও গোবিন্দার ‘পার্টনার’ ফিল্মের একটি স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে খুশিতে কেঁদে ফেলছেন গোবিন্দা আর বলছেন, “এত খুশি আমার আজ পর্যন্ত হয়নি।”
১৭২২
আর যা হল তাতে টিকটক ইউজাররা কী বলছেন? তাঁদের মনের ভাব, পঙ্কজ তিওয়ারির অভিনীত একটি দৃশ্য দিয়ে বুঝিয়েছেন এক মিমার। টিকটক ইউজাররা যেন বলছে, “এটা ঠিক হল না।”
১৮২২
এক মিমে আবার ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর দৃশ্য ব্যবহার করে টিকটক ইউজারদের চিমটি কাটা হয়েছে, “তাঁদের মধ্যে যেন এখন কোনও অনুভূতিই নেই। তাঁরা যেন ভিতর থেকে নিজেদের মৃত বলে মনে করছেন।”
১৯২২
যে পড়ুয়ারা দিনের বেশির ভাগ সময়টা টিকটক করে কাটাতেন, তাঁদের যেন এবার পড়াশোনা করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর তার জন্য ‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজের একটি দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
২০২২
এমন একটি ইস্যুতে মিম তৈরি হবে আর টম অ্যান্ড জেরি আসবে না, তা কখনও হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যেন এখানে টম, আর দরজা খুলে দিয়ে জেরি তথা টিকটককে বেরিয়ে যেতে বলছে দেশ থেকে।
২১২২
দ্য কপিল শর্মা শো-তে সুনীল গ্রোভার-কে গুথ্থি নামক এক মহিলা চরিত্রে প্রায়ই বলতে শোনা যেত, “জিন্দেগি বরবাদ হো গিয়া।” মিমে টিকটক ইউজারদের চিমটি কেটে যেন সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন সবাই।
২২২২
এমনকি অক্ষয় কুমার, নানা পটেকর, অনিল কপূর, ক্যাটরিনা কাইফের ফিল্ম ‘ওয়েলকাম’-এর এক সংলাপও উঠে এসেছে মিমারদের দৌলতে। সেখানে অনিল কপূর ওরফে মজনু ভাই যেন টিকটক ইউজারদের দুঃখ অনুভব করে নিজের সঙ্গীদের বলছেন, “বলতে দে... খুব কষ্ট হয়েছে বেচারার।”