চিনাদের থেকে মেশিনগান ছিনিয়ে ফিরছিলেন যশোবন্ত সিংহ। এমন সময় চিনাদের গুলির আঘাতে মৃত্যু হয় ত্রিলোক সিংহের। গুলিতে আহত হয়ে গোপাল সিংহ কোনওমতে নিজেদের ট্রেঞ্চে ফিরে আসেন। কিন্তু বেঁচে ফেরা হল না যশোবন্তের। ট্রেঞ্চে পৌঁছনোর ঠিক আগে তাঁর মাথায় গুলি লাগে। মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু চিনাদের মেশিনগান তত ক্ষণে ভারতের দখলে।

১৫ মিনিটের মিশন। তাতেই ঘুরে যায় এই লড়াইয়ের মোড়। আরও দু’বার হামলা চালিয়েও ভারতের ওই পোস্ট দখল করতে পারেনি চিনারা। নুরানাংয়ের এই লড়াইয়ে ৩০০ চিনা সেনার মৃত্যু হয়। উল্টো দিকে দুই ভারতীয় সেনা প্রাণ হারান, আহত হন ৮ জন। বিকেল ৩টে নাগাদ পিছু হঠার সিদ্ধান্ত নেয় চিনা সেনা।

অসামান্য বীরত্বের জন্য মরণোত্তর মহাবীর চক্রে সম্মানিত হন যশোবন্ত। ত্রিলোক সিংহ নেগি আর গোপাল সিংহ গুসেইন পান বীর চক্র। গাড়ওয়াল রাইফেলস-এর ওই ব্যাটালিয়ন পায় ব্যাটেল হনার। বাষট্টির যুদ্ধে সেনা সম্মান পাওয়া সেনাবাহিনীর একমাত্র ইউনিট।

সে দিন যশোবন্ত সিংহ রাওয়াত মারা গেলেও, সেখান থেকেই জন্ম নেয় তাঁকে ঘিরে থাকা কিংবদন্তি, যা তাঁকে করে রেখেছে অমর। লোকমুখে তিনি পেয়েছেন অরুণাচলের রক্ষাকর্তার স্বীকৃতি।

একটা বড় অংশের মানুষ বিশ্বাস করেন, এক দিন নয়, টানা তিন দিন চলেছিল সেই যুদ্ধ। এক বাঙ্কার থেকে অন্য বাঙ্কারে গিয়ে একা লড়েছিলেন যশোবন্ত। আর তাকে সাহায্য করেছিলেন স্থানীয় দুই আদিবাসী মেয়ে সেলা আর নুরা। তিন দিক থেকে গুলি আসছে দেখে চিনারা বুঝতেই পারেনি যে একা লড়ছেন যশোবন্ত। তাদের ধারণা ছিল বিপক্ষে বেশ বড় বাহিনী রয়েছে।

সেই কিংবদন্তি অনুযায়ী এর পর চিনাদের হাতে ধরা পড়ে যান সেই ব্যক্তি, যিনি যশোবন্তকে রসদ জোগাচ্ছিলেন। যশোবন্ত যে একা আছেন, রহস্য ফাঁস হয়ে যায়। তাঁকে ঘিরে ফেলা হয় চারদিক থেকে। ধরা পড়ে নুরা, সেলা মারা যায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে।

লোকগাথা বলে, ৩০০ চিনা সেনাকে মেরে শেষে আত্মঘাতী হন যশোবন্ত। যাতে শত্রুপক্ষের হাতে তাঁকে ধড়া পড়তে না হয়। রাগে ফুটতে থাকা চিনারা তাঁর মরদেহের মাথা কেটে নিয়ে চলে যায়। কেউ কেউ আবার বলেন তাঁকে ফাঁসিতেও ঝোলানো হয়। কিন্তু তাঁর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে এক চিনা সেনা কমান্ডার কাটা মস্তক সসম্মানে ভারতের হাতে তো তুলে দেনই, সেই সঙ্গে উপহার দেন তাঁর একটি পিতলের আবক্ষ মূর্তি।

লোকে এই গল্পে বিশ্বাস করলেও সরকারি কাগজপত্রে এমন কোনও ঘটনার উল্লেখ নেই। তবে যেখানে এই লড়াই হয়েছিল, নুরানাংয়ের সেই জায়গার নাম আজ যশোবন্ত গড়। তাঁর নামে রয়েছে স্মৃতিসৌধ। এখনও তাঁর সেনা ইউনিফর্ম ধোপদুরস্ত রাখা হয়। পালিশ করে রাখা হয় বুটজোড়া।

তাওয়াংয়ে এলে পর্যটকরা এক বার ঘুরে যান এখানে। অনেকে চিঠিও লিখে যান তাঁর উদ্দেশে। আর এ ভাবেই মৃত্যু অনেক অনেক বছর পরেও অমর হয়ে থাকেন যশোবন্ত সিংহ রাওয়াত, থুঁড়ি বাবা যশোবন্ত সিংহ, মাত্র ২১ বছর বয়সে যিনি দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন।