Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
Mass extinction

মহাপ্লাবনে গণবিলুপ্তি! ‘ছত্রে ছত্রে প্রমাণ’ দিয়ে লেখা বই রাতারাতি গায়েব করে আমেরিকার গুপ্তচরেরা

মহাপ্লাবনে মানবসভ্যতার ধ্বংসের পূর্বাভাস দিয়ে বই লেখেন আমেরিকার বায়ুসেনার ই়ঞ্জিনিয়ার। সেই বই বাজারে আসতে না আসতেই রাতারাতি গায়েব করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:১৬
Share: Save:
০১ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

মানবজাতির অন্তিম সময় আগত! প্রাকৃতিক চাবুকের ঘায়ে এ বার মুছে যাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী! ভয়ঙ্কর বন্যায় ভাসবে গ্রাম-শহর। সুনামির ঢেউতে চাপা পড়বে আস্ত মহাদেশ। আমেরিকার এক পদস্থ কর্তার করা এ হেন ‘গণবিলুপ্তি’র পূর্বাভাসে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।

০২ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

গত বছরের (পড়ুন ২০২৩) ২৪ জুন। যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’র (সিআইএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ‘অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ স্টোরি’ নামের একটি বই। সেখানে মানবজাতির বিলুপ্তির উল্লেখ রয়েছে। বইটি লেখেন আমেরিকার বায়ুসেনার ইঞ্জিনিয়ার চ্যান থমাস।

০৩ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

মানুষ কী ভাবে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে, ‘অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ স্টোরি’তে তারই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন থমাস। এর জন্য মূলত বন্যা এবং সুনামিকেই দায়ী করেছেন তিনি। মজার বিষয় হল, গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এই বইটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছিল সিআইএ। এর একটা কপিও ছাপতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা।

০৪ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় থমাসের লেখা ‘অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ স্টোরি’। বইয়ে মানবজাতির সম্ভাব্য ধ্বংসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেন তিনি। ব্যাপারটা কানে যেতেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা। দ্রুত বইটিকে নিষিদ্ধ করে রাতারাতি তা বাজার থেকে গায়েব করে দেয় সিআইএ।

০৫ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরদের এ হেন পদক্ষেপের নেপথ্যে অনুঘটকের কাজ করেছিল কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ঠান্ডা লড়াইকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে তখন চলছিল তুমুল রেষারেষি। এই পরিস্থিতিতে হাভানায় ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা ওয়াশিংটনের গলার কাঁটা হয়ে ওঠে।

০৬ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

কিউবায় ফিদেল সরকার প্রতিষ্ঠার পর সেখানে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে মস্কো। সালটা ছিল ১৯৬২। ফলে সোভিয়েত আক্রমণের আতঙ্ক গোটা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। সিআইএর কর্তারা ভেবেছিলেন, এই পরিস্থিতিতে ‘অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ স্টোরি’ আমজনতার হাতে গেলে আরও বেশি ভয় পাবেন তাঁরা। সেখান থেকে জন্ম নেবে সামাজিক অস্থিরতা।

০৭ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

কিউবার সঙ্কট কাটার ৫৭ বছর পর ‘তথ্যের স্বাধীনতা’ আইনের উপর ভিত্তি করে ২০১৩ সালে থমাসের লেখা বই প্রকাশের অনুমতি দেয় ওয়াশিংটন। সেটি হাতে পেতেই পাঠকদের চোখ কপালে ওঠে। বইটিতে দুনিয়ার সেরা পৌরাণিক কাহিনিগুলিতে বর্ণিত মানুষের গণবিলুপ্তিকে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে সত্যি বলে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন চ্যান।

০৮ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

থমাসের দাবি, পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত গণবিলুপ্তির ঘটনাগুলি কল্পনা নয়। বরং বাস্তবে ওই সব ঘটনা ঘটেছিল। এর প্রমাণ হিসাবে কাহিনিগুলির মধ্যে হুবহু তথ্যগত এবং বর্ণনায় মিল থাকার উল্লেখ করেছেন তিনি। সেগুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজারও চেষ্টা করেছেন আমেরিকার বায়ুসেনার ওই ইঞ্জিনিয়ার।

০৯ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

উদাহরণ হিসাবে খ্রিস্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’ বর্ণিত নোয়ার নৌকার গল্পের কথা বলেছেন চ্যান। এর সঙ্গে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ‘বিষ্ণু পুরাণ’-এর সাদৃশ্য রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বিষ্ণুর প্রথম অবতার হল মৎস্য। সেই রূপে আবির্ভূত হয়ে মানবসমাজকে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেন তিনি। নোয়ার গল্পতেও একই রকমের প্লাবনের উল্লেখ রয়েছে।

১০ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

শুধু তাই নয়, বাইবেল এবং পুরাণ— দুই পৌরাণিক কাহিনিতেই মানবজাতিকে প্লাবনের হাত থেকে রক্ষার জন্য সুবিশাল নৌকার কথা লেখা রয়েছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক সুনামির উল্লেখ রয়েছে অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার পৌরাণিক উপাখ্যানেও। এর মধ্যে ব্যাবিলনের ‘গিলগামেশ’, মিশরের ‘জিউসুদ্রা’, চিনের ‘গিনিউ’ এবং গ্রিসের ‘ডিউক্যালিয়ন’র নাম সর্বজনবিদিত।

১১ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

থমাস জানিয়েছেন, পৃথিবীর ৪০টি আলাদা আলাদা সংস্কৃতির পৌরাণিক উপাখ্যানে সামুদ্রিক প্লাবনের ফলে গণবিলুপ্তির কথা লেখা আছে। একে কাকতালীয় মানতে নারাজ তিনি। সংশ্লিষ্ট কাহিনিগুলি রচনার সময়কালের মধ্যেও অদ্ভুত সামঞ্জস্য রয়েছে। সাত থেকে ন’হাজার বছর আগে সেগুলি লেখা হয় বলে নিজের বইয়ে স্পষ্ট করেছেন চ্যান।

১২ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

প্লাবনের জেরে সভ্যতা ধ্বংসের পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণের নেপথ্যে আজীবন ছুটে বেড়িয়েছেন থমাস। নিজের বইয়ে তেমনই দু’টি হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার উল্লেখ করেছেন তিনি। এর প্রথমটির নাম ‘আটলান্টিস’। তাঁর দাবি, আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে ছিল এর অবস্থান। বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর লেখা ‘টাইমেউস’ এবং ‘ক্রিটিয়াস’ বইতেও আটালান্টিস সভ্যতার উল্লেখ রয়েছে।

১৩ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

প্লেটোর রচনা অনুযায়ী, সমুদ্রের মাঝে চক্রবৎ গোলাকার নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা ছিল আটলান্টিস। প্লাবনের জেরে এর পুরোপুরি সলিলসমাধি ঘটে। ১৯৬৫ সালে আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়াতে অদ্ভুত গোলাকার প্রাচীন ধ্বংসস্তূপের হদিস পান পুরাতাত্ত্বিকেরা। গবেষকেরা এর নামকরণ করেন ‘রিচ্যাট কাঠামো’।

১৪ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

পুরাতত্ত্ববিদেরা অবশ্য ওই কাঠামোকে প্লেটো বর্ণিত হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস শহরের ধ্বংসাবশেষ বলে মেনে নেননি। উল্টে সেটি প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেন তাঁরা। থমাসও হাল ছাড়ার পাত্র নন। কিছু দিনের মধ্যে জাপানের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে নিমজ্জিত পিরামিড আকারের বিশাল মন্দির শহরের খোঁজ মিলতেই তাঁর তত্ত্বে ফের সিলমোহর পড়ে।

১৫ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

কিন্তু এ বারও চ্যানের দাবি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বৈজ্ঞানিকদের একাংশ সমুদ্রের গভীরে থাকা এই কাঠামোকে পিরামিড মন্দির বলে মান্যতা দেননি। উল্টে সেটিও প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়েছে বলে একাধিক প্রমাণ দাখিল করেছেন তাঁরা। ফলে আরও পোক্ত প্রমাণের পিছনে ছুটতে হয় থমাসকে।

১৬ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

চ্যানের পরিশ্রম পুরোপুরি বৃথা যায়নি। খুঁজতে খুঁজতে নাকি আস্ত একটা পৌরাণিক শহরের হদিস পান তিনি। থমাসের দাবি, সংশ্লিষ্ট শহরটি পূর্ব-পশ্চিমে ফিলিপিন্স থেকে ইস্টার্ন আইল্যান্ড এবং উত্তর-দক্ষিণে হাওয়াই থেকে কুক দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর মধ্যে ইস্টার্ন আইল্যান্ডে সমুদ্রের তীরে মাটিতে পোঁতা অবস্থায় পড়ে থাকা অদ্ভুত কিছু মূর্তির খোঁজ পান তিনি।

১৭ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

নিজের তত্ত্বকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করতে মূর্তিগুলিকে মাটি কেটে উপরে তোলেন থমাস। সেগুলিকে নিয়ে চলে দীর্ঘ গবেষণা। সেখানেই জলের অস্বাভাবিক চাপে মূর্তিগুলির কিছু অংশ মাটির তলায় চাপা পড়েছে বলে উঠে আসে। মূর্তিগুলি পৌরাণিক শহরে শোভা পেত বলে নিজের বইয়ে উল্লেখ করেছেন থমাস।

১৮ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

চ্যান এই মূর্তিগুলিকে ‘মোয়াই’ বলেছেন। পাশাপাশি, ওই এলাকার ‘রাপা নুই’ উপজাতির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ‘এবরিজিনিস’ এবং আমেরিকার ‘রেড ইন্ডিয়ান’দের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পান তিনি। নিজের বইয়ে গণবিলুপ্তির নেপথ্যে থাকা প্লাবনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মেরু পরিবর্তনের (পোল শিফ্‌ট) তত্ত্বও প্রকাশ্যে আনেন তিনি।

১৯ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

থমাস বলেছেন, পৃথিবীর নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মান থাকায় সমুদ্র এবং স্থলভাগের মধ্যেও একটা গতি রয়েছে। কোনও কারণে স্থলভাগের গতি পরিবর্তন হলে সমুদ্রে তার প্রভাব পড়ে। এরই ফলস্বরূপ আসতে পারে মহাপ্লাবন। ফলে সাগরের বিপুল জলরাশির তলায় চাপা পড়তে পারে আস্ত মহাদেশ।

২০ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

এ ব্যাপারে প্রাচীন যুগের লম্বা দাঁতওয়ালা হাতিসদৃশ ‘ম্যামথ’ বিলুপ্তির উদাহরণ দিয়েছেন থমাস। তুষার যুগে পৃথিবীর বুক থেকে এই প্রাণীগুলি চিরতরে হারিয়ে যায়। ম্যামথের জীবাশ্ম মিলেছে উত্তর রাশিয়ার সাইবেরিয়ায়। সেখান থেকে সুমেরুর দূরত্ব প্রায় সাড়ে ছ’হাজার কিলোমিটার।

২১ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

আর তাই চ্যানের দাবি, একটা সময়ে একই জায়গার মধ্যে ছিল সুমেরু ও সাইবেরিয়া। দ্বিতীয় প্রমাণ হিসাবে আন্টার্টিকায় ইকুয়েডরের উদ্ভিদের জীবাশ্মের খোঁজ পাওয়ার কথাও লিখেছেন তিনি। আর এ ভাবেই দুই মেরু অবস্থান বদল করেছে বলে নিজের তত্ত্বে উল্লেখ করেছেন থমাস।

২২ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

অন্য দিকে, ১৯১২ সালে মহাদেশের জন্ম সংক্রান্ত নতুন তত্ত্ব নিয়ে আসেন জার্মান ভূবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড ওয়েগনার। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। একে কেন্দ্র করে সামনে আসে প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বে পৃথিবীর উপরিভাগ একাধিক প্লেটের সমন্বয়ে তৈরি বলে উল্লেখ করা হয়।

২৩ ২৩
Mass extinction through ocean flood theory why CIA is hiding end of human civilization dates

প্লেট টেকটনিকে থমাসের মেরু পরিবর্তনের তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়। ফলে তাঁর বইয়ের পৌরাণিক কাহিনির প্লাবন এবং গণবিলুপ্তির সাদৃশ্য কল্পবিজ্ঞান হিসাবেই থেকে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও ‘অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ স্টোরি’ চাহিদা কমেনি। বেস্ট সেলারের সারিতে জায়গা করে নিয়েছে এই বই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy