Kim Jong un North Korean Supreme Leader reveals largest ever warship armed with vertical launch nuclear missile system dgtl
North Korean Warship
পরমাণু হামলায় আস্ত শহর ওড়ানোর ছক! আমেরিকার রক্তচাপ বাড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ‘পাগল রাজা’র রণতরী
পরমাণু হামলায় সক্ষম যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়ক কিম জং-উন। আমেরিকা না কি দক্ষিণ কোরিয়া, তাঁর পরবর্তী নিশানায় থাকছে কোন দেশ?
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
দ্রুত গতিতে চলছে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কাজ। এই রণতরী থেকে নিখুঁত নিশানায় করা যাবে পারমাণবিক হামলা। তবে কি বড় আকারের সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ‘পাগল রাজা’? তাঁর আগ্রাসনে রক্তে লাল হবে প্রশান্ত মহাসাগরের জল? স্বাধীনতা হারাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র? নতুন বছরের গোড়াতেই এ বার পূর্ব এশিয়ায় ছড়াল যুদ্ধের আতঙ্ক। অন্য দিকে রণতরী নির্মাণের খবর পেয়ে ভুরু কুঁচকেছে আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’ও।
০২১৮
গত বছরের (২০২৪) ২৯ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার সেন্ট্রাল টেলিভিশনে নির্মীয়মাণ যুদ্ধজাহাজের অন্তত চারটি ছবি সম্প্রচারিত হয়। ওই রণতরী পরিদর্শনে যান দেশের সর্বোচ্চ শাসক কিম জং-উন। সরকারি টেলিভিশনে তাঁর সেই সফরের ছবিও সম্প্রচারিত হয়েছে।
০৩১৮
উত্তর কোরিয়ার কিম প্রশাসন নির্মীয়মাণ রণতরীগুলির ছবি কবে এবং কখন তুলেছিল, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। যদিও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে ওই ছবি তোলা হয়েছে। একটি ছবিতে যুদ্ধজাহাজ তৈরির বিষয়টিকে গোপন রাখতে জাল দিয়ে সেটিকে ঘিরে রাখতে দেখা গিয়েছে।
০৪১৮
অন্য একটি ছবিতে রণতরীর উপরের অংশের অর্ধনির্মিত কাঠামো দেখা গিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ‘এনকে প্রো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধজাহাজের ছাদের অংশ তৈরির আগেই তার ছবি তোলা হয়। সেটা সম্ভবত অক্টোবরে তোলা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
০৫১৮
সূত্রের খবর, দক্ষিণ পিয়ংগান প্রদেশের নামপো শিপইয়ার্ডে অত্যাধুনিক ওই রণতরী তৈরি করছে উত্তর কোরিয়া। গত বছরের (২০২৪) ফেব্রুয়ারিতে কাজের অগ্রগতি দেখতে যান স্বয়ং কিম। তবে তাঁর সফরের বিষয়টি যথাসম্ভব গোপন রাখা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম বার কিমের নির্মীয়মাণ যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শনের ছবি প্রকাশ্যে আসে।
০৬১৮
গত বছরের ডিসেম্বরে একটি প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর আয়োজন করে পিয়ংইয়ং। সেখানে ফের এক বার কিমের রণতরী পরিদর্শনের ছবি প্রকাশ করে প্রশান্ত মহাসাগরের কমিউনিস্টশাসিত দ্বীপরাষ্ট্রের প্রশাসন। প্রদর্শনীতে চওড়া ভাবে তোলা যুদ্ধজাহাজটির কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল।
০৭১৮
উল্লেখ্য, ‘কোরীয় শ্রমিক দলে’র (ওয়ার্কার্স পার্টি অফ কোরিয়া) অষ্টম কংগ্রেসে নৌশক্তি বৃদ্ধির উপর জোর দেন দেশের সুপ্রিম লিডার কিম। সেখানেই অত্যাধুনিক এই রণতরী নির্মাণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটি প্রশান্ত মহাসাগরে দাপিয়ে বেড়াবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
০৮১৮
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই যুদ্ধজাহাজ উত্তর কোরিয়ার নৌশক্তির বিকাশে একটি মাইলফলক হতে চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ়ের গবেষক জোসেফ ডেম্পসির কথায়, ‘‘নামপো শিপইয়ার্ডের কাজকর্মের ক্ষেত্রে পিয়ংইয়ং গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। হঠাৎ করে একে সামনে এনে গোটা দুনিয়াকে চমকে দেওয়াই কিমের উদ্দেশ্য।’’
০৯১৮
সত্তরের দশকে কর্ভেট শ্রেণির বেশ কিছু রণতরী তৈরি করে পিয়ংইয়ং। সেগুলির সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘আমনোক’ এবং ‘তুমান’। এত দিন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া নির্মিত বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ বলতে এই দুই শ্রেণির কর্ভেটকেই বোঝাত। ৭৭ মিটার লম্বা ওই রণতরীগুলির তুলনায় এ বার অনেক বড় যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে চলেছে কিমের দেশ।
১০১৮
সূত্রের খবর, উত্তর কোরিয়ার নির্মীয়মাণ রণতরীটি ফ্রিগেট শ্রেণির। এটি প্রায় ১০০ মিটার লম্বা। যুদ্ধজাহাজটি থেকে খুব সহজেই শত্রু দেশে পারমাণবিক হামলা চালাতে পারবে পিয়ংইয়ং। এর আগে ‘আমনোক’ শ্রেণির কর্ভেট নিয়ে বড় দাবি করেন কিম। সেখান থেকেও পরমাণু অস্ত্র বহণকারী ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায় বলে জানিয়েছিলেন তিনি। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার নৌসেনা নতুন জাহাজ হাতে পেলে, তাঁদের শক্তি যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে, তা বলাই বাহুল্য।
১১১৮
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, নির্মীয়মাণ যুদ্ধজাহাজটিতে ফিক্সড প্যানেল রাডার এবং ক্রুজ় ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য রণতরীটিতে উল্লম্ব লঞ্চিং ব্যবস্থার (ভার্টিক্যাল লঞ্চিং সিস্টেম বা ভিএলএস) মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন কিম। কিন্তু, তার পরও একে কোনও ভাবেই আমেরিকা, রাশিয়া বা চিনের অতি শক্তিশালী দেশগুলির আধুনিকতম ফ্রিগেটের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না বলে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।
১২১৮
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নৌশক্তির দিক থেকে ওয়াশিংটনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উত্তর কোরিয়াকে এখনও লম্বা পথ পেরোতে হবে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পিয়ংইয়ংয়ের নির্মীয়মাণ যুদ্ধজাহাজে এখনও ভিএলএস প্রযুক্তির ইনস্টলেশনের কাজ শুরু হয়েনি। রণতরীটির নকশায় ডেকের উপর জানলার মতো দু’টি অংশ রয়েছে। সেখানে নৌযোদ্ধাদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বসানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের আরও দাবি, জাহাজটিকে আরও আধুনিক করতে শেষ মুহূর্তে নকশায় কিছু বদল করার পরামর্শ দিয়েছেন কিম।
১৩১৮
উত্তর কোরিয়ার নির্মীয়মাণ যুদ্ধজাহাজ নিয়ে মুখ খুলেছেন রুশ নৌ বিশেষজ্ঞ দিমিত্রিস মিৎসোপোলোস। তাঁর দাবি, চিনের তৈরি অ্যারে রাডার এই রণতরীতে ব্যবহার করতে চলেছে পিয়ংইয়ং। তবে তিনি একে ফ্রিগেট বলে মানতে নারাজ। উল্টে কিমের সাধের যুদ্ধজাহাজটিকে মস্কোর হাতে থাকা ‘স্টেরেগুশচি’ এবং ‘গ্রেম্যাশচি’ শ্রেণির কর্ভেটের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
১৪১৮
বর্তমানে যুদ্ধজাহাজে ‘ইগলা-এস’ নামের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করছে উত্তর কোরিয়ার নৌসেনা। এ ছাড়া মাঝারি পাল্লার কিছু ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের জলযোদ্ধাদের হাতে। এই একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে মায়ানমারের নৌবাহিনী।
১৫১৮
গোয়েন্দাদের অনুমান, সম্প্রতি পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরির দিকে নজর দিয়েছেন কিম। তবে এর চূড়ান্ত নকশা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেননি উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। পাশাপাশি, ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী জলযান এবং ক্ষেপণাস্ত্র নৌকা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। আর এ ভাবেই দেশের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করছেন পিয়ংইয়ংয়ের সর্বোচ্চ নেতা।
১৬১৮
গত বছরের (২০২৪) অক্টোবর থেকেই দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে একের পর এক উস্কানিমূলক পদক্ষেপ করে চলেছে উত্তর কোরিয়া। এর নবতম সংযোজন হল সীমান্তে ‘শব্দ দানব’-এর অত্যাচার! প্রশান্ত মহাসাগরের দুই প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রের সীমান্তে লম্বা জায়গা জুড়ে রয়েছে অসামরিক এলাকা বা ‘ডিমিলিটারাইজ়ড জ়োন’। ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই কোরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এর জন্ম হয়েছিল।
১৭১৮
সিওলের অভিযোগ, হঠাৎ করেই ওই এলাকায় পিয়ংইয়ংয়ের দিক থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসছে। এর তীব্রতা এতটাই যে, তাতে কানে তালা লাগার জোগাড় হচ্ছে। এ-হেন ‘শব্দ বোমা’র যন্ত্রণা সবচেয়ে বেশি সইতে হচ্ছে অসামরিক এলাকার একেবারে কাছের গ্রাম ডাংসানের বাসিন্দাদের।
১৮১৮
সিওল ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলা বন্ধ করে দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়ক কিম। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলেছেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধে সৈনিক দিয়ে মস্কোকে সাহায্যও করছেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে সামরিক চুক্তিও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধজাহাজের নির্মাণ এবং সীমান্তে উত্তেজনা দুই কোরিয়াকে ফের এক বার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সেটা বুঝতে পেরেই নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে পিয়ংইয়ং।