নেই হেলমেট। ফাইল চিত্র।
২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের বীরভূমে আক্রান্ত কর্তব্যরত পুলিশ। হেনস্থা করা হল ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকা এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ কর্মীকে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি শহরের রাস্তায়। যেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের অফিস। যাঁরা নাগরিকদের নিরাপত্তা দেবেন, সেই পুলিশের উপরেই বারবার আক্রমণের ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হেনস্থার ঘটনায় জাভেদ আনসারি নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দান, কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে আঘাতের মামলা রুজু করা হয়েছে। আজ, শনিবার ধৃতকে সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হবে। প্রসঙ্গত, বুধবার গভীর রাতেই রামপুরহাটের হাটতলায় টহলদারি দুই পুলিশ কর্মীকে শুধু মারধরই নয়, তাঁদের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ-পেটানোর ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল এক দল মদ্যপ যুবকের দিকে। তাদের ধরতে না পারলেও পুলিশ এক ভ্যানচালককে গ্রেফতার করে।
এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল?
সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া ওই ‘আক্রান্ত’ পুলিশকর্মী মির নজরুল আলি। তবে, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রোজকার মতো এ দিনও সকাল থেকে ডিএম অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়া রাজ্য সড়ক ও প্রশাসনিক ভবন যাওয়ার রাস্তার সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে ওই পুলিশকর্মী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। কাছাকাছি অন্য সহকর্মীরাও ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দু’টি মোটরবাইক দ্রুত ওই সড়ক দিয়ে এসে ডানদিকে প্রশাসনিক ভবনের দিকে বাঁক নিচ্ছিল। আরোহীদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। প্রথমত হেলমেট না থাকা এবং দ্বিতীয়ত আইনবিরুদ্ধ ভাবে একটি বাইকে তিন জন আরোহী রয়েছে দেখে নজরুল মোটরবাইকটিকে আটকান। অভিযোগ, পুলিশ ট্রাফিক পুলিশ পথ আটকানোতেও দমে না গিয়ে নজরুলের সঙ্গে ওই আরোহীরাই তর্ক জুড়ে দেন। দু’পক্ষের বাদানুবাদ চলার সময়ই ভিড় জমতে শুরু করে। ওই সময়ই দ্বিতীয় মোটরবাইকের আরোহী জাভেদ আনসারি নামে এক যুবক এগিয়ে আসে। পুলিশের অভিযোগ, ওই সময় জাভেদ হঠাৎ-ই কর্তব্যরত ওই পুলিশকর্মীর গায়ে হাত তোলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আবার দাবি, ওই যুবক পুলিশকর্মীর গালে একটি চড়ও কষিয়ে দেন। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে নজরুলের সহকর্মীরা অভিযুক্ত যুবককে ধরে ফেলেন। অবশ্য ওই একই সময়ে মওকা বুঝে তিন বাইক আরোহী পালাতে সক্ষম হয়।
পুলিশ ওই মোটরবাইক আরোহীদের আর খোঁজ না পেলেও পরে তাঁদেরই এক জন সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, “এ দিন আমরা সিউড়ি আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলাম। ওই পুলিশকর্মী আমাদের বাইক আটকালে আমরা ওঁকে জানাই, আদালতে জরুরি কাজ রয়েছে। প্রয়োজনে মোটরবাইকটি রেখে আমাদের যেতে দেওয়ার অনুরোধও করি। কিন্তু আমাদের কোনও কথা শোনেননি।” তাঁর অভিযোগ, জাভেদ এর প্রতিবাদ করলে উল্টে ওই পুলিশকর্মীই তাঁর জামার কলার ধরে নেন। তখনই ধস্তাধস্তি হয়। এর বেশি কিছু হয়নি বলেই তাঁর দাবি। ধৃত এই জাভেদ সম্পর্কে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগেও জাভেদ ছিল সিউড়ি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁকরখাদ, নজরুলপল্লির বাসিন্দা। সম্প্রতি সিউড়ি শহর সংলগ্ন মল্লিকপুর পঞ্চায়েত এলাকার মিনিস্টিল কারখানা লাগোয়া পল্লি থাকতে শুরু করেছে। পেশায় পুরনো মোটরবাইক কেনাবেচার কারবারে যুক্ত। শরীর চর্চার জন্য নিয়মিত জিমে যাওয়া এবং মাঝে মধ্যেই শরীর চর্চার বিভিন্ন প্রদর্শনীতেও ওই জাভেদ যোগ দিয়ে থাকে।
এমনিতে, সিউড়ি শহরে কমবয়সী কিছু বখাটে যুবকদের মোটরবাইকে দাপিয়ে বেড়ানো কোনও নতুন ঘটনা নয়। পুলিশের চোখের সামনে দিয়েই যাবতীয় ট্রাফিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই উপদ্রব চলে। মাথায় হেলমেট তো থাকেই না, এমনকী বহু ক্ষেত্রে তাদের নম্বরপ্লেটহীন মোটরবাইক চালাতেও দেখা যায়। তবে, শুধু ওই ধরনের যুবকেরাই নন, এই শহরে কমবেশি অনেককেই ট্রাফিক আঙুল ভাঙতে দেখা যায়। কোনও প্রতিরোধ না থাকার জন্যই এমন বেপরোয়া ভাব জন্মেছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। কিন্তু প্রতিরোধ করতে গেলেও তো বারবার ‘আক্রান্ত’ হতে হচ্ছে। পুলিশ নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের এই বেপরোয়া এই মনোভাব দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেক পুলিশকর্মীই। এ দিনের ঘটনার পরে অবশ্য জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, “এ বার আমাদের সতর্ক হতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy