Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
KGF

Kolar Gold Field: কেজিএফ ১: সোনার খনি মিলতেই ঝলমল করে উঠেছিল কোলার, এক স্বপ্ন-শহরের উত্থানের ইতিহাস

কন্নড় ভাষার বক্স অফিসে ঝড় তেলা ছবির দৌলতে এখন কেজিএফ পরিচিত নাম। অথচ ২০০১ সালের পর গত ২১ বছর কেজিএফের কথা মনেই রাখেননি দেশের মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ১৩:৪৩
Share: Save:
০১ ১৯
সোনার তালুক! এমন একখানি জায়গা যে খানে ‘সোনা’ ফলে। সোনার ফসল নয়। আসল সোনা। চোখ ধাঁধানো সোনালি রঙা কম ক্ষয়বিশিষ্ট বিরল ধাতু। বছর বিশেক আগেও কেজিএফ বা কোলার গোল্ড ফিল্ড ছিল সেই সোনার আঁতুড়ঘর।

সোনার তালুক! এমন একখানি জায়গা যে খানে ‘সোনা’ ফলে। সোনার ফসল নয়। আসল সোনা। চোখ ধাঁধানো সোনালি রঙা কম ক্ষয়বিশিষ্ট বিরল ধাতু। বছর বিশেক আগেও কেজিএফ বা কোলার গোল্ড ফিল্ড ছিল সেই সোনার আঁতুড়ঘর।

০২ ১৯
কন্নড় ভাষার বক্স অফিসে ঝড় তেলা ছবির দৌলতে এখন কেজিএফ পরিচিত নাম। অথচ ২০০১ সালের পর গত ২১ বছর কেজিএফের কথা মনেই রাখেননি দেশের মানুষ।

কন্নড় ভাষার বক্স অফিসে ঝড় তেলা ছবির দৌলতে এখন কেজিএফ পরিচিত নাম। অথচ ২০০১ সালের পর গত ২১ বছর কেজিএফের কথা মনেই রাখেননি দেশের মানুষ।

০৩ ১৯
যাঁরা কেজিএফকে এখন দেখছেন তাঁরা শহরটির নাম দিয়েছেন ‘ভুতুরে শহর’। কন্নড় সিনেমা কেজিএফেও বহু বার এলাকাটিকে ‘নরক’ বলে উল্লেখ করতে দেখা গিয়েছে ।

যাঁরা কেজিএফকে এখন দেখছেন তাঁরা শহরটির নাম দিয়েছেন ‘ভুতুরে শহর’। কন্নড় সিনেমা কেজিএফেও বহু বার এলাকাটিকে ‘নরক’ বলে উল্লেখ করতে দেখা গিয়েছে ।

০৪ ১৯
অথচ এই কেজিএফ নিয়েই এককালে গর্বের অন্ত ছিল না কেন্দ্রীয় সরকারের। কেজিএফকে দেখিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।

অথচ এই কেজিএফ নিয়েই এককালে গর্বের অন্ত ছিল না কেন্দ্রীয় সরকারের। কেজিএফকে দেখিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।

০৫ ১৯
কর্নাটকের কোলার গোল্ড ফিল্ড ওরফে কেজিএফে এক সময়ে ছিল কোলার নামের একটি গ্রাম। মাটির নীচে তো বটেই, সবাই জানতেন এবং মানতেন যে এ গ্রামের ধুলোতেও সোনা মিশে থাকে।

কর্নাটকের কোলার গোল্ড ফিল্ড ওরফে কেজিএফে এক সময়ে ছিল কোলার নামের একটি গ্রাম। মাটির নীচে তো বটেই, সবাই জানতেন এবং মানতেন যে এ গ্রামের ধুলোতেও সোনা মিশে থাকে।

০৬ ১৯
এই বিশ্বাস থেকেই সম্ভবত চোল-চালুক্যদের রাজত্বের সময় থেকে কোলারকে সব সময় দখলে রেখে এসেছে শাসকেরা। এক একটি শাসনকাল ৮০০ থেকে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে। শাসকের নীতির জোরে কখনও বিস্তৃত কখনও কমে এসেছে রাজ্যপাট। তবু কোলার হাতছাড়া হতে দেয়নি কেউ।

এই বিশ্বাস থেকেই সম্ভবত চোল-চালুক্যদের রাজত্বের সময় থেকে কোলারকে সব সময় দখলে রেখে এসেছে শাসকেরা। এক একটি শাসনকাল ৮০০ থেকে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে। শাসকের নীতির জোরে কখনও বিস্তৃত কখনও কমে এসেছে রাজ্যপাট। তবু কোলার হাতছাড়া হতে দেয়নি কেউ।

০৭ ১৯
তবে কোলারের দখল নিলেও সেই সময়ে চোল, চালুক্য রাজারা সোনা খনন করাতেন কি না তা জানা যায় না। সরকারি নথি অনুযায়ী সে কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৭৫ সালেই।

তবে কোলারের দখল নিলেও সেই সময়ে চোল, চালুক্য রাজারা সোনা খনন করাতেন কি না তা জানা যায় না। সরকারি নথি অনুযায়ী সে কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৭৫ সালেই।

০৮ ১৯
মাইকেল ফিৎজগেরাল্ড লাভেল নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সৈনিক প্রথম কোলারের মাটির নীচ থেকে সোনা তোলার কাজ শুরু করেন।

মাইকেল ফিৎজগেরাল্ড লাভেল নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সৈনিক প্রথম কোলারের মাটির নীচ থেকে সোনা তোলার কাজ শুরু করেন।

০৯ ১৯
কোলারের সোনার ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ একটি বই লিখেছিলেন ব্রিটেনের এক ইতিহাসবিদ। সেই বই লাভেলের হাতে আসে। কোলারের পুরনো ইতিহাস জেনে তিনি ঠিক করেন, কোলারের মাটির নীচে সোনা  সত্যিই আছে কি না তার খোঁজ শুরু করবেন। প্রাথমিক ভাবে সফলও হন লাভেল।

কোলারের সোনার ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ একটি বই লিখেছিলেন ব্রিটেনের এক ইতিহাসবিদ। সেই বই লাভেলের হাতে আসে। কোলারের পুরনো ইতিহাস জেনে তিনি ঠিক করেন, কোলারের মাটির নীচে সোনা সত্যিই আছে কি না তার খোঁজ শুরু করবেন। প্রাথমিক ভাবে সফলও হন লাভেল।

১০ ১৯
তবে খনি থেকে সোনা তোলার কাজে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। মাইকেলের সেই সামর্থ ছিল না। তিনি জন টেলর অ্যান্ড সনস নামে ব্রিটেনেরই একটি সংস্থাকে বিক্রি করে দেন কোলারের সোনার খনি।

তবে খনি থেকে সোনা তোলার কাজে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। মাইকেলের সেই সামর্থ ছিল না। তিনি জন টেলর অ্যান্ড সনস নামে ব্রিটেনেরই একটি সংস্থাকে বিক্রি করে দেন কোলারের সোনার খনি।

১১ ১৯
১৮৮০ সালে ওই ব্রিটিশ সংস্থার হাত ধরে শুরু হয় কেজিএফের শ্রীবৃদ্ধি। তখনও বেঙ্গালুরুই কর্নাটকের রাজধানী। কিন্তু সেখান থেকে ১০০ কিলেমিটার দূরে হঠাৎ শহর হয়ে ওঠা একটি গ্রামই হয়ে উঠতে থাকে দক্ষিণের রাজ্যটির প্রাণকেন্দ্র।

১৮৮০ সালে ওই ব্রিটিশ সংস্থার হাত ধরে শুরু হয় কেজিএফের শ্রীবৃদ্ধি। তখনও বেঙ্গালুরুই কর্নাটকের রাজধানী। কিন্তু সেখান থেকে ১০০ কিলেমিটার দূরে হঠাৎ শহর হয়ে ওঠা একটি গ্রামই হয়ে উঠতে থাকে দক্ষিণের রাজ্যটির প্রাণকেন্দ্র।

১২ ১৯
একে কর্নাটকের মনোরম আবহাওয়া। তার উপর আধুনিক সুযোগ সুবিধার অন্ত ছিল না কোলারে। সেখানকার বাসিন্দা ব্রিটিশ কর্মচারীরা ‘মিনি ইংল্যান্ড’ বলে ডাকতে শুরু করেছিল কোলারকে।

একে কর্নাটকের মনোরম আবহাওয়া। তার উপর আধুনিক সুযোগ সুবিধার অন্ত ছিল না কোলারে। সেখানকার বাসিন্দা ব্রিটিশ কর্মচারীরা ‘মিনি ইংল্যান্ড’ বলে ডাকতে শুরু করেছিল কোলারকে।

১৩ ১৯
কোলার ছিল দেশের প্রথম শহর যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছিল। শুধু দেশে নয়, জাপানের টোকিয়োর পর কোলারই ছিল এশিয়ার দ্বিতীয় শহর যেখানে বিদ্যুতের সুবিধা  মিলেছিল।

কোলার ছিল দেশের প্রথম শহর যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছিল। শুধু দেশে নয়, জাপানের টোকিয়োর পর কোলারই ছিল এশিয়ার দ্বিতীয় শহর যেখানে বিদ্যুতের সুবিধা মিলেছিল।

১৪ ১৯
খনির কাজের জন্য কাছেই কাবেরী নদীর ঝরনায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি, খনিতে জল সরবরাহ করার জন্য কোলারে একটি বিশাল হ্রদও খুঁড়ে ফেলেছিল তারা।

খনির কাজের জন্য কাছেই কাবেরী নদীর ঝরনায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। পাশাপাশি, খনিতে জল সরবরাহ করার জন্য কোলারে একটি বিশাল হ্রদও খুঁড়ে ফেলেছিল তারা।

১৫ ১৯
কী ছিল না কেজিএফে! নিজস্ব গল্ফ খেলার মাঠ, হাসপাতাল, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজ, ছেলে এবং মেয়েদের কনভেন্ট স্কুল, ক্লাব, মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা— সব। এমনকি কেজিএফে বসবাসকারী ব্রিটিশ এবং ভারতীয় হর্তাকর্তাদের জন্য ব্রিটেনের স্থাপত্যের ছাঁদের বড় বড় বাংলোও তৈরি হয়েছিল।

কী ছিল না কেজিএফে! নিজস্ব গল্ফ খেলার মাঠ, হাসপাতাল, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজ, ছেলে এবং মেয়েদের কনভেন্ট স্কুল, ক্লাব, মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা— সব। এমনকি কেজিএফে বসবাসকারী ব্রিটিশ এবং ভারতীয় হর্তাকর্তাদের জন্য ব্রিটেনের স্থাপত্যের ছাঁদের বড় বড় বাংলোও তৈরি হয়েছিল।

১৬ ১৯
যদিও কোলারের এই ‘মিনি ইংল্যান্ডে’ প্রবেশাধিকার ছিল না খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের। তাঁরা থাকতেন কোলারের ঝকঝকে আলোর বাইরে। ছোট ছোট খুপড়ির মতো ঘরে। সেই সব এলাকাকে বলা হত কুলি লেন। ঘরগুলিকে বলা হতে শান্টি।

যদিও কোলারের এই ‘মিনি ইংল্যান্ডে’ প্রবেশাধিকার ছিল না খনিতে কাজ করা শ্রমিকদের। তাঁরা থাকতেন কোলারের ঝকঝকে আলোর বাইরে। ছোট ছোট খুপড়ির মতো ঘরে। সেই সব এলাকাকে বলা হত কুলি লেন। ঘরগুলিকে বলা হতে শান্টি।

১৭ ১৯
সেখানে কষ্ট করেই থাকতেন খনি শ্রমিকরা। তবু বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতেন কোলারে কাজ করতে। কারণ কোলারই তখন উন্নতির কেন্দ্র।

সেখানে কষ্ট করেই থাকতেন খনি শ্রমিকরা। তবু বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতেন কোলারে কাজ করতে। কারণ কোলারই তখন উন্নতির কেন্দ্র।

১৮ ১৯
১৯০২ সাল পর্যন্ত দেশের মোট সোনা উৎপাদনের ৯৫ শতাংশই আসত কোলার থেকে। এই শতকের গোড়া পর্যন্তও সোনা উত্তোলন হত কেজিএফ থেকে। শেষ বার কেজিএফ থেকে সোনা উত্তোলন হয় ২০০১ সালে।  তবে গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।

১৯০২ সাল পর্যন্ত দেশের মোট সোনা উৎপাদনের ৯৫ শতাংশই আসত কোলার থেকে। এই শতকের গোড়া পর্যন্তও সোনা উত্তোলন হত কেজিএফ থেকে। শেষ বার কেজিএফ থেকে সোনা উত্তোলন হয় ২০০১ সালে। তবে গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।

১৯ ১৯
গত ১০০ বছরে ১০০ থেকে শূন্যে পরিণত হয় কেজিএফ। গৌরবের শহর আজ ‘ভুতুড়ে’। কী ভাবে গৌরব হারাল কেজিএফ? এখন সেখানকার অবস্থা কী? চোখ রাখুন পরের পর্বে।

গত ১০০ বছরে ১০০ থেকে শূন্যে পরিণত হয় কেজিএফ। গৌরবের শহর আজ ‘ভুতুড়ে’। কী ভাবে গৌরব হারাল কেজিএফ? এখন সেখানকার অবস্থা কী? চোখ রাখুন পরের পর্বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy