How Odisha government taking precaution to face cyclone dana dgtl
Cyclone Dana
শুরু দুর্যোগ, সরানো হচ্ছে লক্ষ লক্ষ বাসিন্দাকে! সুপার সাইক্লোনের স্মৃতি নিয়ে কোমর বাঁধছে ওড়িশা
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওড়িশার বিজেপি সরকার ১৪টি জেলায় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৫১টি দল, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২০টি দল এবং দমকল বাহিনীর ১৭৮টি দল মোতায়েন করেছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১০:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আর ২৪ ঘণ্টাও বাকি নেই। তার আগেই শুরু হয়েছে দুর্যোগ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সর্বশক্তি নিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’। ভিতরকণিকা এবং ধামারার মধ্যে ‘ল্যান্ডফল’ হওয়ার কথা এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের।
০২১৯
ডেনার হানা মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে ওড়িশা প্রশাসন। মনে করা হচ্ছে ওড়িশার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ডেনার প্রকোপের মুখে পড়তে পারেন। তার মধ্যে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে তিন লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। বাকিদেরও সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর কাজ চলছে।
০৩১৯
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওড়িশার বিজেপি সরকার ১৪টি জেলায় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৫১টি দল, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২০টি দল এবং দমকল বাহিনীর ১৭৮টি দল মোতায়েন করেছে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে।
০৪১৯
ঘূর্ণিঝড় ডেনার কারণে ভারতীয় রেল, ওড়িশার দমকল বাহিনী এবং পরিবহণ দফতরের তরফে সাধারণ জনগণের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।
০৫১৯
ভারতীয় রেল মোট ১৭টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ ১৭টি স্টেশনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং সাহায্য পেতে পারেন। একই ভাবে হেল্পলাইন চালু করেছে ওড়িশার দমকল বাহিনীও।
০৬১৯
ওড়িশার পরিবহণ দফতর, ‘স্টেট ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (এসটিএ)’ কটক এবং ভুবনেশ্বরে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত জনগণকে সর্ব ক্ষণ পরিষেবা দেওয়ার জন্য দু’টি কন্ট্রোল রুম খুলেছে।
০৭১৯
ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর (বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) ঘূর্ণিঝড় ডেনার কারণে উড়ান চলাচল বন্ধ থাকার ঘোষণা করেছে। ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরের ডিরেক্টর প্রসন্ন প্রধান জানিয়েছেন, আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিমান পরিষেবা স্থগিত থাকবে। তিনি আরও যোগ করেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হওয়ার পরে আকাশ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে কোনও বিমান উড়বেও না, অবতরণও করবে না।
০৮১৯
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ডেনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ওড়িশা হাই কোর্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
০৯১৯
উল্লেখ্য, বুধবার মধ্যরাতেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ডেনা। গত সাত ঘণ্টায় উপকূলের দিকে আরও ৯০ কিলোমিটার এগিয়েছে ঘূর্ণিঝড়।
১০১৯
উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বর্তমানে সাগরদ্বীপ থেকে মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে এটি ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে।
১১১৯
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমে উত্তর-পশ্চিম দিকে সরছে ‘ডেনা’। ঘূর্ণিঝড়টির মতিগতি থেকে আবহবিদদের অনুমান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হবে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি কখনও কখনও ১২০ কিলোমিটারও হতে পারে।
১২১৯
বুধবার রাত থেকেই ওড়িশার উপকূলবর্তী এবং উত্তরের জেলাগুলিতে দুর্যোগ শুরু হয়েছে। উত্তাল রয়েছে সমুদ্রও। বৃষ্টি হচ্ছে কেন্দ্রাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বরে।
১৩১৯
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভিতরকণিকা জাতীয় উদ্যান এবং ধামারা বন্দরের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে ‘ডেনা’। ওই বন্দরের যাবতীয় কাজ ইতিমধ্যেই স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মীরাও বন্দর ছেড়েছেন। ওই অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী অংশে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন রেখেছে ওড়িশা প্রশাসন।
১৪১৯
বুধবারই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও তিনি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখছেন। বুধবার বিশেষ ত্রাণ কমিশনারের দফতরে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি পর্যালোচনা করার সময় ওড়িশাবাসীকে আশ্বস্ত করে মোহনচরণ বলেন, ‘‘আপনারা সকলে নিরাপদ হাতে আছেন।”
১৫১৯
ওড়িশা আর ঘূর্ণিঝড় এখন যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। গত ২৫ বছরে ডজনখানেক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে সে রাজ্যে। ফলে আবারও ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানির আশঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে। ‘ডেনা’ যত উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, ততই ভয় বাড়ছে উপকূলবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের।
১৬১৯
১৯৯৯ সালে ওড়িশার বুকে ‘সুপার সাইক্লোন’ আছড়ে পড়েছিল। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল জগৎসিংহপুর। সমুদ্রের অদূরে হওয়ায় পদমপুর গ্রাম তছনছ হয়ে গিয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের অভিঘাতে। বহু প্রাণহানি হয়েছিল এই গ্রামে। সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিলেন অনেকে। এই ঘূর্ণিঝড়ে যে জেলাগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছিল জগৎসিংহপুরে। এই জেলায় ‘সুপার সাইক্লোন’-এ মৃত্যু হয়েছিল ৮,১১৯ জনের। তার পরই ছিল কটক (৪৭১) এবং কেন্দ্রাপাড়া (৪৬৯)।
১৭১৯
আবার একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসতেই ১৯৯৯ সালের স্মৃতি রোমন্থন শুরু হয়ে গিয়েছে জগৎসিংহপুরের পরমপুর-সহ বহু গ্রামে। তাই সমুদ্রে ‘ডেনা’ বাঁধার খবর পাওয়ার পর থেকেই এই সমুদ্রলাগোয়া এলাকাগুলিতে ঘুম উড়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের। গত কয়েক দিন ধরেই বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা।
১৮১৯
ওড়িশার পাশাপাশি ডেনা নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। এ ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
১৯১৯
ল্যান্ডফলের সময় উপকূলে হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। কলকাতায় ঝড়ের বেগ সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার থাকতে পারে।