এর আগে দেশের দ্বাদশ প্রধান বন্দর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে তালিমনাড়ুর ‘কামরাজার বন্দর’। ওই বন্দর চালু হওয়ার আড়াই দশকের মধ্যে গ্রেট নিকোবরে নতুন সমুদ্র বন্দর তৈরিতে হাত দিতে চলেছে নয়াদিল্লি। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গালাথিয়ায় ‘আন্তর্জাতিক কন্টেনার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর’ (ইন্টারন্যাশনাল কন্টেনার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট বা আইসিটিপি) হতে যাচ্ছে বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে ভারতের হাতে একটি মাত্র কন্টেনার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর রয়েছে। যা কেরলে তৈরি করেছে আদানি গোষ্ঠী। সাধারণ বন্দরের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের পার্থক্য রয়েছে। একটি বাণিজ্য রুটে অনেক বন্দর থাকে। যে বন্দর থেকে একাধিক জায়গার জন্য জাহাজে পণ্য তোলা বা নামানো হয়, তাকে বলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর। এত দিন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বাণিজ্যে এই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের জন্য অন্য দেশের সাহায্য নিতে হত ভারতকে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, আইসিটিপি নির্মাণের জন্য কৌশলগত দিক থেকে একটি চমৎকার জায়গা বেছে নিয়েছে ভারত। গ্রেট নিকোবরের গালাথিয়ার অবস্থান পূর্ব-পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সমুদ্রপথের উপর। ফলে এখান থেকে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও ক্লাংয়ের মতো ট্রান্সশিপমেন্ট টার্মিনালগুলির সুবিধা পাওয়া যাবে। বন্দরটির স্বাভাবিক গভীরতা হবে ২০ মিটার। ফলে বড় জাহাজ অনায়াসেই এতে ঢুকতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, গত কয়েক বছর ধরে দ্রুত খবরের শিরোনামে চলে আসা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলের একটি অংশ হতে চলেছে গালাথিয়া বন্দর। একে ওই এলাকার প্রবেশদ্বার হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যা ভারতের পূর্ব দিকের সমস্ত সমুদ্র বন্দরের জন্য ট্রান্সশিপমেন্টের কাজ করবে। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতা, হলদিয়া, ধামরা, পারাদ্বীপ, বিশাখাপত্তনম ও চেন্নাই। এ ছাড়া বাংলাদেশের মঙ্গলা, চট্টগ্রাম এবং মায়ানমারের ইয়াঙ্গনকেও সংযুক্ত করবে এই গালাথিয়া বন্দর।
গালাথিয়া উপসাগরীয় বন্দর নির্মাণে রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ। কারণ, যে এলাকায় এটিকে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পরিবেশগত ভাবে তা অত্যন্ত সংবেদনশীল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিশেষজ্ঞদের এই নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করতে হবে। যার উপর ভিত্তি করে পরিবেশ সংবেদনশীলতাকে মাথায় রেখে বন্দরটির নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে। তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
প্রথম পর্যায়ে বন্দর নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেজ়িং, ব্রেকওয়াটার তৈরি, পণ্য রাখার এলাকা, একাধিক ভবন এবং যন্ত্রপাতি ইনস্টলেশনের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। পাশাপাশি, বন্দরটিকে কেন্দ্র করে একটি পোর্ট কলোনি তৈরি করবে কেন্দ্র। এলাকাটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এখানে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা নেই।
সমীক্ষক সংস্থা ‘ক্রিসিল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিকস’-এর সিনিয়র ডিরেক্টর ও গ্লোবাল হেড (ট্রান্সপোর্ট, মোবিলিটি অ্যান্ড লজিস্টিক কনসাল্টিং) জগনারায়ণ পদ্মনাভন জানিয়েছেন, গালাথিয়া উপসাগরীয় বন্দর প্রকল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এটি পশ্চিমা়ঞ্চলীয় পণ্যবাহী জাহাজগুলিকে আকর্ষণ করবে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার অন্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলিকে এটি প্রতিযোগিতার মুখে ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, এর জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে কেন্দ্রকে। গালাথিয়ায় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার দিকেও নজর দেওয়া উচিত। যা বন্দরটিকে সর্ব ক্ষণ পণ্য সরবরাহ করে যাবে। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এখানে বিমানবন্দর থাকাটাও জরুরি হতে পারে। তা ছাড়া সরকারের শুল্ক নীতি বন্দরটির উন্নতিতে অনেকাংশেই প্রভাবিত করবে।
গালাথিয়া বন্দর তৈরির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণ। উদাহরণ হিসাবে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের কথা বলা যেতে পারে। যার জন্য প্রচুর পরিমাণে পাথরের দরকার হবে। যা বেশ দূর থেকে আনতে হবে ঠিকাদার সংস্থাকে। এ ছাড়া এই এলাকাটি যথেষ্ট ভূমিকম্পপ্রবণ। ২০০৪ সালের কম্পনে ইন্দিরা পয়েন্ট সমুদ্রের জলরাশির তলায় চলে গিয়েছিল। পরে অবশ্য জল সরলে সেটি ফের উপরে জেগে ওঠে।
সমীক্ষক সংস্থা ‘ইনভেস্টমেন্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি’ বা আইসিআরএ-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বরুণ গগিয়ার কথায়, ‘‘গালাথিয়া ভারতের অর্থনীতির নতুন মাইলফলক হতে যাচ্ছে। কারণ, রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক থেকে চেন্নাই পর্যন্ত সমুদ্র বাণিজ্যের রাস্তা তৈরি করছে নয়াদিল্লি। সেই পথেই থাকছে এই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy