All need to know about wind speeds of past 12 cyclones in Odisha dgtl
Cyclone Dana
ফণী, বুলবুল, আমপান... ২৫ বছরে ডজনখানেক ঘূর্ণিঝড় দেখেছে ওড়িশা! কতটা ভয়ঙ্কর হবে ‘ডেনা’র হানা?
ওড়িশা আর ঘূর্ণিঝড় এখন যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। আবারও একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বাংলার প্রতিবেশী রাজ্যে। ফলে আবারও ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানির আশঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে ধেয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’। আর তা নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
০২২২
ওড়িশা আর ঘূর্ণিঝড় এখন যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। আবারও একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বাংলার প্রতিবেশী রাজ্যের দিকে। ফলে আবারও ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানির আশঙ্কায় উদ্বেগ বাড়ছে ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে। ‘ডেনা’ যত উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, ততই ভয় বাড়ছে উপকূলবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের।
০৩২২
১৯৯৯ সালে ওড়িশার বুকে ‘সুপার সাইক্লোন’ আছড়ে পড়েছিল। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল জগৎসিংহপুর। সমুদ্রের অদূরে হওয়ায় পদমপুর গ্রাম তছনছ হয়ে গিয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের অভিঘাতে। বহু প্রাণহানি হয়েছিল এই গ্রামে। সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিলেন অনেক গ্রামবাসী।
০৪২২
ঘটনাচক্রে, এই ঘূর্ণিঝড়ে যে জেলাগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছিল জগৎসিংহপুরে। এই জেলায় ‘সুপার সাইক্লোন’-এ মৃত্যু হয়েছিল ৮,১১৯ জনের। তার পরই ছিল কটক (৪৭১) এবং কেন্দ্রাপাড়া (৪৬৯)।
০৫২২
ফলে আবার একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসতেই ১৯৯৯ সালের স্মৃতি রোমন্থন শুরু হয়ে গিয়েছে জগৎসিংহপুরের পরমপুর-সহ বহু গ্রামে। তাই সমুদ্রে ‘ডেনা’ বাঁধার খবর পাওয়ার পর থেকেই এই সমুদ্রলাগোয়া এলাকাগুলিতে ঘুম উড়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের। গত কয়েক দিন ধরেই বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা।
০৬২২
পাশাপাশি, ওড়িশার উপকূলবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, কোথায় এবং কত গতিবেগে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’?
০৭২২
১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের পর থেকে ওড়িশা এ পর্যন্ত ১২টি ঘূর্ণিঝড় দেখেছে। এই আবহে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শেষ ১২টি ঘূর্ণিঝড় কত গতিবেগে আছড়ে পড়েছিল ওড়িশার বুকে।
০৮২২
‘সুপার সাইক্লোন’ ওড়িশার জগৎসিংহপুর জেলার পারাদ্বীপে আছড়ে পড়েছিল ১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল সেই ঘূর্ণিঝড়। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অকল্পনীয়। তবে অত ক্ষতির একমাত্র কারণ ছিল ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ। ২৬৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে সেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়।
০৯২২
২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’ আঘাত হানে ওড়িশায়। সেই ঝড়ে ঘরবাড়ি, চাষবাস, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বিশেষ করে গঞ্জাম, পুরী এবং খুর্দা জেলায় ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল ‘ফাইলিন’। গঞ্জাম জেলার গোপালপুরের কাছে ২৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে আছড়ে পড়েছিল সেই ঘূর্ণিঝ়ড়।
১০২২
২০১৪ সালে ওড়িশায় যে ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডব চালিয়েছিল তার নাম ছিল ‘হুদহুদ’। সে বছরের ১২ অক্টোবর বিশাখাপত্তনমের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি। ওড়িশার গজপতি, কোরাপুট, নবরংপুর এবং মালকানগিরিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল হুদহুদের প্রকোপে। সেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার।
১১২২
২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ওড়িশায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘দায়ে’। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওড়িশার গোপালপুরে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মালকানগিরি জেলায়ও। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সময় এর বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
১২২২
২০১৮ সালের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ অন্ধ্রপ্রদেশের পালাসায় আছড়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছিল ওড়িশার গোপালপুরে। গঞ্জাম ও গজপতি জেলাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার।
১৩২২
২০১৯ সালের ৩ মে ওড়িশার পুরীর কাছে স্থলপতন হয় ‘ফণী’র। ২০৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে আছড়ে পড়েছিল সেই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
১৪২২
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপে আছড়়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এর প্রভাবে ওড়িশার বালেশ্বর জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া এবং ভদ্রকের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে আছড়ে পড়েছিল ‘বুলবুল’।
১৫২২
২০২০ সালের ২০ মে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা এবং হাতিয়ার মধ্যে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ওড়িশার বালেশ্বর, ভদ্রক, জগৎসিংহপুর এবং কেন্দ্রাপাড়ার মতো উপকূলীয় জেলাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। হাজার হাজার গাছ উপড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার।
১৬২২
পরের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৬ মে ওড়িশার ভিতরকণিকা জাতীয় উদ্যানের কাছে স্থলপতন হয় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর। ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে তাণ্ডব চালায় এই ঘূর্ণিঝড়। ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক।
১৭২২
ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ প্রতিবেশী অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলায় ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আছড়ে পড়লেও ক্ষতি হয় ওড়িশাতেও। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রায় ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
১৮২২
ঘূর্ণিঝড় ১০০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়লেও ওড়িশাকে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছিল। ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর আছড়ে পড়া সেই ঘূর্ণিঝড় দ্রুত শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল।
১৯২২
গভীর নিম্নচাপে থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ‘অশনি’ অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং নরসাপুরমের মাঝে আছড়ে পড়েছিল ২০২২ সালের ১১ মে। এর প্রভাব পড়েছিল ওডিশাতেও। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
২০২২
তবে এ বার ওড়িশাকে ভয় দেখাতে শুরু করেছে ‘ডেনা’। পুরী এবং সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা দিয়ে স্থলভাগে ঢোকার কথা সেই ঘূর্ণিঝড়ের। হাওয়ার গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় হতে পারে ১২০ কিলোমিটার।
২১২২
মৌসম ভবন জানিয়েছে, গত ছ’ঘণ্টায় ‘ডেনা’ ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে এগিয়েছে। এই মুহূর্তে ওড়িশার পারাদ্বীপ উপকূল থেকে প্রায় ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ‘ডেনা’।
২২২২
২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকার নেবে সে। উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ঝড়ের গতিবেগ পৌঁছবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটারে।