How china could take charge of electric vehicle market dgtl
Electric Vehicles
দেশের সঙ্গে বিদেশেও খনির দখল নিচ্ছে চিন, লক্ষ্য কি শুধুই ব্যাটারিচালিত গাড়ির বাজার দখল?
২০২২ সালে বাজারে এসেছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি এমজি৪। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৫,২০০টি এই গাড়ি বিক্রি হয়েছে। বৈদ্যুতিন গাড়ি বিক্রির নিরিখে এমজি৪-এর উপরে রয়েছে টেসলার মডেল ওয়াই।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
দিন দিন বাড়ছে ব্যাটারিচালিত গাড়ির ব্যবহার। দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি অন্যতম পথ বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এই ব্যাটারিচালিত গাড়ির বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য আমেরিকার সংস্থা টেসলার। ক্রমেই কি তার প্রভাব কমবে? সে ক্ষেত্রে বাজার ধরবে কি চিনের কোনও সংস্থা?
০২১৯
২০২২ সালে বাজারে এসেছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি এমজি৪। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৫,২০০টি এই গাড়ি বিক্রি হয়েছে। বৈদ্যুতিন গাড়ি বিক্রির নিরিখে এমজি৪-এর উপরে রয়েছে টেসলার মডেল ওয়াই।
০৩১৯
তবে টেসলার ব্যাটারিচালিত গাড়ি থেকে এমজি৪ অনেকটাই সস্তা। এই গাড়ির দাম শুরু ২৭ হাজার পাউন্ড থেকে। ভারতীয় মুদ্রায় ২৮ লক্ষ টাকার মতো। সেখানে টেসলার গাড়ির দাম শুরু ৪৫ হাজার পাউন্ড থেকে। ভারতীয় মুদ্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা।
০৪১৯
এই এমজি ছিল ব্রিটেনের বিখ্যাত গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থা। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাড়ি তৈরি করেছে তারা। কিন্তু ২০০৫ সালে সেই সংস্থাই ভাঙনের মুখে পড়ে। ২০০৭ সাল থেকে এই সংস্থার দখল নেয় চিনের সব থেকে বড় গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থা এসএআইসি। মনে করা হচ্ছে, এই এমজি সংস্থার ব্যাটারিচালিত গাড়ির মাধ্যমে ক্রমেই বিশ্ব বাজার ধরার চেষ্টা করছে চিন।
০৫১৯
গত কয়েক বছর ধরে ব্যাটারিচালিত বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির বাজারে চিন যে ভাবে প্রভাব বিস্তার করছে তাতে শঙ্কিত আমেরিকা। চিনের সংস্থার তৈরি ব্যাটারিচালিত গাড়ির মান যথেষ্ট ভাল। দামও কম।
০৬১৯
খোদ চিনেও বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ব্যাটারিচালিত গাড়ির ব্যবহার। গত বছর চিনে যত গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার এক-চতুর্থাংশ ব্যাটারিচালিত। যেখানে গোটা পৃথিবীতে যত গাড়ি বিক্রি হয়েছে, তার ১৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত। ২০২২ সালে ইউরোপে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। তার অর্ধেকেরও বেশি এসেছে চিন থেকে।
০৭১৯
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের লক্ষ্য, ২০৬০ সালের মধ্যে সে দেশে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামানো। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই লক্ষ্যপূরণ করতে চায় ২০৫০ সালের মধ্যে। এই লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে চলেছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি।
০৮১৯
আর এই বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ব্যবহারের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে চিন। ২০২৫ সালের মধ্যে চিনের রাস্তায় যত যান চলবে, তার ১৩ শতাংশ হবে বিদ্যুৎচালিত। যেখানে গোটা দুনিয়ায় তা হবে ৬ শতাংশ।
০৯১৯
এই পরিস্থিতিতে চিনে তৈরি বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এ ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে ভৌগোলিক-রাজনৈতিক চাপানউতর।
১০১৯
এত দিন বৈদ্যুতিন গাড়ি তৈরিতে ভর্তুকি দিচ্ছিল চিন। ২০১০ থেকে ২০২০ সালে প্রায় ১৬৫০ কোটি পাউন্ড ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় এক লক্ষ ৭৪ হাজার কোটির আশপাশে। সে কারণে কম দামে বাজারে বিক্রি করতে পেরেছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি।
১১১৯
গত বছর থেকে তা বন্ধ করেছে বেজিং। তবে তার পরেও গাড়ির দাম বৃদ্ধি করেনি চিনের সংস্থাগুলি। উল্টে ২০২২ সালের থেকে ব্যাটারিচালিত গাড়ির দাম ১৫ শতাংশ কমিয়েছে তারা। সে কারণে ধাক্কা খায়নি তাদের গাড়ি বিক্রিও।
১২১৯
প্রতিযোগিতার কারণে একের পর এক সংস্থা তাদের গাড়ির দাম ক্রমেই কমিয়েছে। গত জুলাই মাসে এই বিষয়টির উপর রাশ টানে বেজিং। টেসলা, চিনের সব থেকে বড় গাড়ি উৎপাদনকারী সংস্থা বিওয়াইডি-সহ ১৬টি সংস্থা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে যে, প্রতিযোগিতার কারণে যথেচ্ছ দাম কমাবে না তারা।
১৩১৯
ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরিতে নগদ ভর্তুকি দেওয়া চিন বন্ধ করলেও কর ছাড়ের ব্যবস্থা এখনও রয়েছে। তার পর থেকে চিনের ব্যাটারিচালিত গাড়ি প্রস্তুত সংস্থাগুলির বৃদ্ধি হয়েছে রাতারাতি। সকলের উপরে রয়েছে বিওয়াইডি।
১৪১৯
শেনঝেনের এই সংস্থা ১৯৯৫ সাল থেকে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি তৈরি করত। ২০০০ সালে তারা গাড়ির ব্যাটারি তৈরির কাজে হাত দেয়। সস্তায় ব্যাটারি বিক্রি করে গ্রাহকদের পেট্রোল চালিত গাড়ি থেকে সরিয়ে ব্যাটারিচালিত গাড়ির দিকে টানে এই সংস্থা। তাতে সফলও হয়।
১৫১৯
ক্রমেই নিজেদের ব্যাটারির মান উন্নত করেছে বিওয়াইডি। তেমনই বেড়েছে তাদের লাভের অঙ্ক। চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে সংস্থার লাভের পরিমাণ ১৯২ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২৫ শতাংশ।
১৬১৯
বিওয়াইডির সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে খনিজ উত্তোলনকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে তাদের সম্পর্কে। ব্যাটারি তৈরিতে দরকার হয় লিথিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ। এগুলো যারা উত্তোলন করে, তারা সম্পূর্ণ ভাবে বিওয়াইডির নিয়ন্ত্রণে।
১৭১৯
শুধু নিজেদের দেশে নয়, বিদেশে খনি উত্তোলনকারী সংস্থাগুলিকেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছে চিনের এই সংস্থা। লিথিয়াম উত্তোলন নিয়ে চিলির সরকারের সঙ্গেও চুক্তি করেছে তারা।
১৮১৯
আর এটাই এখন আমেরিকার সংস্থার মাথাব্যথার কারণ। চিন যে ভাবে খনি উত্তোলনকারী দেশ এবং সংস্থাগুলোকে কুক্ষিগত করতে পেরেছে, তারা পারেনি। এমনকি পিছিয়ে পড়ছে ইলন মাস্কের সংস্থা টেসলাও। অভিযোগ, চিনের যে সব জায়গায় খনি রয়েছে, সেখানে টেসলার কর্তাদের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
১৯১৯
ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় লিথিয়াম প্রক্রিয়ার কাজ করেন জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু উইঘুরেরা। তাদের উপর জুলুম করে এই কাজ করায় চিনের সংস্থাগুলি। মানবাধিকার সংগঠনগুলিও সরব এই নিয়ে। যদিও চিনের সরকার মানেনি অভিযোগ। সংস্থাগুলোও মানেনি। তাদের লক্ষ্য একটাই, টেসলাকে টেক্কা দিয়ে বিশ্বের ব্যাটারিচালিত বাজার দখল।