Four days work week is going to introduce from April 2025 to improve fertility rate in Tokyo Japan dgtl
Japan’s Work Week
সন্তানধারণের সুযোগ দিতে ‘আজব’ সিদ্ধান্ত, সরকারি কর্মচারীদের সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দিচ্ছে যে দেশ
সাপ্তাহিক কাজের দিনে বড় বদল করছে জাপানের রাজধানী টোকিয়োর পুর প্রশাসন। চার দিন অফিস আর তিন দিন ছুটি, এই নিয়মে চলতে হবে টোকিয়োর পুরকর্মীদের।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সপ্তাহে তিন দিন ছুটি, চার দিন কাজ। নতুন বছরে এতটাই ‘সুখের’ হতে চলেছে সরকারি চাকরি! ইতিমধ্যেই রীতিমতো ঢেঁড়া পিটিয়ে সেই ঘোষণা করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ‘সূর্যোদয়ের দেশে’র এ-হেন কাণ্ডকারখানায় যথেষ্টই হতবাক বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশ। আগামী দিনে দুনিয়া জুড়ে এই নিয়ম চালু করা উচিত কি না, তা নিয়ে উঠে গিয়েছে প্রশ্ন।
০২১৮
সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের সাপ্তাহিক কাজের দিন চারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। রাজধানী টোকিয়োতেই এই নিয়ম সর্বপ্রথম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রের। সেই মতো বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে টোকিয়ো মেট্রোপলিটাল গভর্মেন্ট। এর আওতাভুক্ত পুরকর্মীরা সপ্তাহে তিন দিন ছুটি পাবেন।
০৩১৮
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন টোকিয়োর গভর্নর ইউরিকো কোইকে। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন নিয়ম আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫) এপ্রিল থেকে চালু হবে। চলতি অর্থবর্ষের (পড়ুন ২০২৪-’২৫) শেষ দিন, অর্থাৎ ৩১ মার্চ পর্যন্ত সাপ্তাহিক কাজের দিনের কোনও বদল করা হচ্ছে না। নতুন আর্থিক বছরের (২০২৫-’২৬) প্রথম দিন থেকে সপ্তাহে চার দিন কাজ এবং তিন দিন ছুটি ভোগ করবেন পুরকর্মীরা।’’
০৪১৮
টোকিয়ো মেট্রোপলিটাল গভর্মেন্টের আওতাভুক্ত সরকারি দফতরে কর্মীসংখ্যা যে অস্বাভাবিক বেশি, এমনটা নয়। কিন্তু তার পরও কিছুটা বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে জাপানি প্রশাসনকে। এর জন্য মূলত জন্মহার কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’-এর পদস্থ কর্তারা।
০৫১৮
কোইকে জানিয়েছেন, কর্মরত মেয়েদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের প্রবণতা রয়েছে। তাঁদের সন্তানধারণের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে নিম্নমুখী হয়েছে জন্মহারের সূচক। আর সেই কারণেই কর্মক্ষেত্রকে আরও নমনীয় করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই জায়গা থেকেই সপ্তাহের কাজের দিন চারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
০৬১৮
চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর এই ইস্যুতে জাপান মেট্রোপলিটাল গভর্মেন্টের আইনসভায় বক্তব্য রাখেন টোকিয়োর গভর্নর কোইকে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ‘জাপান টাইমস্’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময়েই সংসারের জন্য কেরিয়ার বিসর্জন দিতে হয় মেয়েদের। ফলে ছোটবেলা থেকে মনের গভীরে পুষে রাখা স্বপ্নগুলি হঠাৎ করেই মরে যায়। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। সন্তানপ্রসব বা তার লালন-পালনের জন্য একজন মা যাতে চাকরি ছেড়ে চলে না যান, তার জন্যেই নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে।’’
০৭১৮
বিগত কয়েক বছর ধরেই লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে জাপানের জন্মহার। দ্বীপরাষ্ট্রটির স্বাস্থ্য, শ্রম এবং কল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর (পড়ুন ২০২৩) সন্তানধারণের ক্ষমতা মহিলা প্রতি ১.২ নেমে এসেছে। শেষ এক দশকের নিরিখে জাপানি মহিলাদের এই উর্বরতা ক্ষমতা সর্বনিম্ন।
০৮১৮
বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে হলে ‘সূর্যোদয়ের দেশে’র মহিলাপিছু সন্তানধারণের ক্ষমতা অন্তত ২.১ হওয়া উচিত। টোকিয়ো পুর প্রশাসনের দাবি, সপ্তাহে চার দিন কাজের নিয়ম দম্পতিদের জন্মহার বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করবে। আগামী দিনে অন্যান্য সরকারি দফতরেও একই নিয়ম চালু হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
০৯১৮
এ ছাড়া আরও একটি নিয়ম ঘোষণা করেছে টোকিয়োর পুর প্রশাসন। যে সমস্ত মায়ের ছেলে-মেয়েরা স্কুল যাওয়া শুরু করেছে, তাঁরা দ্রুত কাজ থেকে ওঠার সুযোগ পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে বেতনের একটি জমা করতে হবে তাঁদের। সন্তানের বয়স এক থেকে তিন বছরের মধ্যে হলে তবেই এই সুযোগ মিলবে।
১০১৮
সপ্তাহে তিন দিন ছুটির সুবিধা আগামী বছর (পড়ুন ২০২৫) প্রথম বার জাপানে চালু হচ্ছে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ২০১৯ সালের অগস্টে একই নিয়ম চালু ছিল বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘মাইক্রোসফট্’-এর দ্বীপরাষ্ট্রের দফতরগুলিতে। টেক জায়ান্ট কোম্পানির ওই প্রকল্পের নাম ছিল ‘ওয়ার্ক লাইফ চয়েস চ্যালেঞ্জ সামার’।
১১১৮
এই প্রকল্পের আওতায় কোনও কর্মীর বেতনে কাটছাঁট করেনি ‘মাইক্রোসফট্’। মোট ২,৩০০ জনকে পর পর পাঁচটি ছুটির প্রস্তাব দেয় সংশ্লিষ্ট টেক জায়ান্ট সংস্থা। পরে একটি বিবৃতিতে ‘মাইক্রোসফট্’ জানায়, কর্মদিবস হ্রাস সত্ত্বেও ৪০ শতাংশ বেড়েছে উৎপাদন। অন্য দিকে বিদ্যুতের খরচ কমেছে ২৩ শতাংশ।
১২১৮
২০১৯ সালের পর থেকে জাপানের দফতরগুলিতে সাপ্তাহিক কর্মদিবস পাঁচের বদলে চারই রেখে দিয়েছে ‘মাইক্রোসফট্’। ফলে বিশ্বের অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থার একাংশ একই মডেল অনুসরণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সপ্তাহিক কর্মদিবসের সংখ্যা কম হওয়ার অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষজ্ঞেরা।
১৩১৮
জাপানি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ওয়াকহার্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ও গবেষক অনিকেত মুলে। তাঁর কথায়, ‘‘এর সব থেকে সুবিধা হল মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি। সাপ্তাহিক কর্মজীবন সংক্ষিপ্ত হলে একজন ব্যক্তি নিজের শখ পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন। ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা তাঁর পক্ষে অনেক সহজ হবে।’’
১৪১৮
দ্বিতীয়ত, কর্মজীবন সংক্ষিপ্ত হলে স্বাস্থ্য ভাল রাখার দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ থাকবে। রুটিনমাফিক ব্যায়াম করতে পারেন তিনি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক এবং শারীরিক ভাবে তাঁকে অনেক বেশি তাজা রাখবে। নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকেও কাজে লাগতে পারবেন ওই ব্যক্তি। এতে আখেরে লাভ হবে নিয়োগকারী সংস্থা বা সরকারের।
১৫১৮
তবে এর উল্টো যুক্তিও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, সাপ্তাহিক কর্মজীবন কমলে কাজের চাপ বৃদ্ধি পাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিনের কাজ শেষ করা কর্মীদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, দ্রুত কাজ করতে গিয়ে বড় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
১৬১৮
পাশাপাশি, সাপ্তাহিক কর্মদিবস কমিয়ে বছরের ছুটির কোটা কমাতে পারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা সরকার। তখন প্রয়োজনে লম্বা ছুটির থেকে বঞ্চিত হবেন কর্মীরা। সপ্তাহে চার দিন হাড়ভাঙা খাটুনি হলে সন্তানধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার বদলে কমতে পারে। এতে মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
১৭১৮
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, সাপ্তাহিক কর্মদিবস চার দিনে নেমে এলে কর্মীদের উপর স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বাড়বে। তা ছাড়া স্বরাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষার মতো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দফতরে এই নিয়ম চালু করা একরকম অসম্ভব। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এই বৈষম্য অন্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
১৮১৮
টোকিয়োর পুর প্রশাসন তাই পরীক্ষামূলক ভাবে এই নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলাফল ভাল ভাবে পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে জাপান সরকার। জন্মহার কতটা বৃদ্ধি পেল, নজর থাকবে সে দিকেও। মেয়েদের সন্তান ধারণের সংখ্যায় কোনও হেরফের হলে, পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’।