Bilkis Bano: পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েও রেহাই পাননি বিলকিস, আছড়ে মারা হয়েছিল তিন বছরের মেয়েকে
১৫ অগস্ট জেল থেকে মুক্তি পায় বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষক। তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। কেন এই নিয়ে এত আপত্তি? কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সেই গণধর্ষণ?
সংবাদ সংস্থা
আমদাবাদশেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২২ ০৯:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। গোধরা স্টেশনে সাবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন ধরানো হয়েছিল। ট্রেনে ছিলেন করসেবক এবং পুণ্যার্থীরা। অযোধ্যা থেকে ফিরছিলেন তাঁরা। ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ৫৯ জন করসেবক এবং পুণ্যার্থী।
০২২৪
সেই ঘটনার জেরে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বলে উঠেছিল গুজরাতে। নিশানা করা হয়েছিল সংখ্যালঘুদের। দাহোড় জেলার রাধিকপুর গ্রামে থাকতেন বিলকিস বানো। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের শিশু কন্যা সালেহা আর ১৫ জন আত্মীয়ের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান বিলকিস।
০৩২৪
গ্রাম ছাড়ার দিন কয়েক আগে ছিল বকরি ইদ। ইদকে কেন্দ্র করে গ্রামে হিংসার আবহ তৈরি হয়েছিল। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছিলেন বিলকিসরা।
০৪২৪
বিলকিসের বয়স তখন ১৯ বছর। পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন তিনি।
০৫২৪
দু’দিন পর ৩ মার্চ ছাপাড়ভাড় জেলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বিলকিস ও তাঁর পরিবার। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা ও বোন।
০৬২৪
চার্জশিটে বলা হয়েছিল, ছাপাড়ভাড়ে যখন আশ্রয় নিয়েছিলেন বিলকিসরা, তখন ২০-৩০ জনের একটি দল হামলা চালায়। ওই দলেই ছিলেন বিলকিসের ১১ জন ধর্ষকও। হামলাকারীদের হাতে ছিল কাস্তে, তরোয়াল, লাঠি।
০৭২৪
বিলকিস, তাঁর মা, বোন এবং ওই দলে থাকা অন্য মহিলাদের গণধর্ষণ করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকেও রেয়াত করেনি তারা।
০৮২৪
এখানেই শেষ নয়। বিলকিসের চোখের সামনে তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরের উপর আছড়ে ফেলেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সালেহা।
০৯২৪
রাধিকপুর গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছিল ১৭ জনের যে দল, তাঁদের মধ্যে আট জনের দেহ মেলে। ছ’জন নিখোঁজ। জীবিত ছিলেন বিলকিস আর একটি শিশু।
১০২৪
চোখের সামনে শিশুকন্যাকে খুন হতে দেখেছিলেন। তার পরেও চলেছিল গণধর্ষণ। ঘটনার জেরে প্রায় তিন ঘণ্টা অচেতন ছিলেন বিলকিস।
১১২৪
জ্ঞান ফিরলে এক আদিবাসী মহিলার থেকে শরীরে জড়ানোর মতো একটা কাপড় চেয়ে নিয়েছিলেন বিলকিস। দ্বারস্থ হয়েছিলেন হোমগার্ডের। সেই হোমগার্ড লিমখেরা থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন বিলকিসকে।
১২২৪
সিবিআই জানিয়েছে, থানায় গিয়ে অভিযোগ লিখিয়েছিলেন বিলকিস। কিন্তু হেড কনস্টেবল সোমাভাই গোরি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ‘বিকৃত রিপোর্ট লিখেছিলেন তিনি।’
১৩২৪
থানা থেকে বিলকিসকে গোধরা ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। তার পর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছিল।
১৪২৪
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিলকিসের বিষয়টি নিয়ে লড়াই শুরু করে। হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই বিলকিস গণধর্ষণের তদন্তে নামে সিবিআই।
১৫২৪
তদন্ত করে সিবিআই জানিয়েছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। অভিযুক্তদের বাঁচানোর জন্যই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল।
১৬২৪
ঘটনার ভয়াবহতায় চমকে উঠেছিলেন সিবিআই তদন্তকারীরাও। রাধিকপুর থেকে পালিয়ে আসা দলটির মধ্যে যে সাত জনের দেহ মিলেছিল, তাঁদের প্রত্যেকের খুলি মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এমন ভাবে ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল যে, ওই সাত জনকে পরে আর শনাক্ত করা যায়নি।
১৭২৪
গুজরাটের আদালতে মামলা ওঠে। ২০০৪ সালে বিলকিস সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ করেছিলেন, প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন। গত দু’বছরে ২০টি বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
১৮২৪
২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মুম্বইয়ের আদালতে সরানো হয় বিলকিসের মামলা। ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ছ’জন পুলিশ অফিসার এবং এক জন সরকারি চিকিৎসক।
১৯২৪
এক জন অন্তঃসত্ত্বাকে গণধর্ষণের প্রায় ছ’বছর পর রায় ঘোষণা হয় বিশেষ আদালতে। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি। ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রমাণের অভাবে বাকি সাত জন বেকসুর খালাস পান।
২০২৪
শুনানি চলাকালীন এক জন অভিযুক্ত মারা যান। ১১ জন ধর্ষককে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।
২১২৪
শুনানি চলাকালীন প্রত্যেক অভিযুক্তকেই শনাক্ত করেছিলেন বিলকিস। জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তেরা সকলেই তাঁর পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের থেকে দুধ কিনতেন অপরাধীরা।
২২২৪
২০১৭ সালের মে মাসে বম্বে হাই কোর্ট ১১ জন ধর্ষকের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখে। ২০১৯ সালে গুজরাত সরকারকে বিলকিসের হাতে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সু্প্রিম কোর্ট।
২৩২৪
১৫ অগস্ট জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান বিলকিসের ১১ জন ধর্ষক। তাঁদের মিষ্টিমুখ করিয়ে স্বাগত জানায় পরিবার। ঘটনায় হতবাক বিলকিসের স্বামী ইয়াকুব রুসুল।
২৪২৪
ইয়াকুব রুসুল বলেন, ‘‘আমাদের ছোট মেয়ে-সহ যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন সেদিন, তাঁদের রোজ স্মরণ করি।’’ স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান নিয়ে সংসার ইয়াকুবের। কিন্তু কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই।