Hero MotoCorp approves Rs 525 crore in electric three wheeler amid CEO and other senior executives step down dgtl
Hero MotoCorp
কমছে শেয়ারের দর, পর পর ইস্তফায় ডামাডোল, বড় লগ্নি করে খেলা ঘোরাতে চাইছে দেশের সর্ববৃহৎ বাইক সংস্থা
একের পর এক পদস্থ আধিকারিকের ইস্তফার জেরে বিপাকে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ দু’চাকার গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা হিরো মোটোকর্প। গত কয়েক মাসে হু-হু করে নেমে যায় স্টকের দর। কিন্তু, তার পরই ঘুরল খেলা। কী ভাবে?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ১৪:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
দেশের সর্ববৃহৎ দু’চাকার গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা হিরো মোটোকর্পে ডামাডোল। চলতি আর্থিক বছরের (পড়ুন ২০২৪-’২৫) শেষে একসঙ্গে পদত্যাগ করলেন তিন শীর্ষ আধিকারিক। গত কয়েক মাস ধরে এমনিতেই নামছিল সংস্থার শেয়ারদর। তবে এই সব ঘটনায় দমে না গিয়ে উল্টে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা লগ্নি করেছে হিরো মোটোকর্প।
০২১৮
সম্প্রতি দু’চাকার গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাটি থেকে পদত্যাগ করেন ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টের এইচআর প্রধান সমীর পাণ্ডে। এ ছাড়া ইস্তফা দিয়েছেন হিরো মোটোকর্পের প্রধান তথ্য ও ডিজিটাল কর্মকর্তা এবং এগ্জ়িকিউটিভ ম্যানেজমেন্ট দলের সদস্য রিমা জৈন-সহ আরও এক শীর্ষ আধিকারিক।
০৩১৮
চলতি বছরের গোড়াতেই সংস্থার পরিচালন বোর্ডের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) নিরঞ্জন গুপ্ত। আগামী ৩০ এপ্রিল তাঁর কর্মদিবস শেষ হবে বলে জানিয়েছে হিরো মোটোকর্প। তাঁর জায়গায় ১ মে থেকে ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসাবে কাজ করবেন এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশনস) বিক্রম কাসবেকার।
০৪১৮
সিইও নিরঞ্জন পদ ছাড়তেই হিরো মোটোকর্পে শুরু হয় অস্থিরতা। তাঁর রাস্তা ধরে চাকরি ছেড়েছেন পর পর তিন জন পদস্থ আধিকারিক। এই তিন জনের পদত্যাগ নিয়েই অবশ্য বিবৃতি দিয়েছে দু’চাকার বৃহত্তম গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের মতো বৃহৎ গতিশীল প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিবিশেষের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। হিরো মোটোকর্প এই নিয়ে আলাদা করে কোনও মন্তব্য করবে না।’’
০৫১৮
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, একের পর এক পদস্থ কর্তার পদত্যাগের সঙ্গে নামতে থাকে হিরো মোটোকর্পের শেয়ারের দরও। গত ১৯ মার্চ এই স্টকে দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন ০.৭ শতাংশের পতন দেখা যায়।
০৬১৮
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল হিরো মোটোকর্পের শেয়ারের দাম। ওই সময়ে গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাটির প্রতিটি স্টকের দর ছিল ৬,২৪৬ টাকা। ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখান থেকে বর্তমানে এতে ৪৩ শতাংশের পতন দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
০৭১৮
বর্তমানে হিরো মোটোকর্পের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩,৬৩৩ টাকায়। এতে মাত্র এক শতাংশের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। মাস ছয়েক আগে গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাটির স্টকের দর ছিল ৬,১৯০ টাকা। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩,৮৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে হিরো মোটোকর্পের এক একটি শেয়ার।
০৮১৮
এই পরিস্থিতিতে গত ২০ মার্চ ইউলার মোটর্স প্রাইভেট লিমিটেডে ৫২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমোদন দেয় হিরো মোটোকর্পের পরিচালন বোর্ড। এর মাধ্যমে তিন চাকার বৈদ্যুতিন গাড়ির (ইলেকট্রিক ভেহিকল বা ইভি) বাজারে পা রাখল বাইক ও স্কুটার নির্মাণকারী এই জনপ্রিয় সংস্থা। হিরোর এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত সাহসী বলে উল্লেখ করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
০৯১৮
ইউলার মোটর্সে বিপুল লগ্নির পর এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে হিরো মোটোকর্প। একটি বিবৃতিতে বাইক এবং স্কুটার নির্মাণকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, কয়েকটি ধাপে ধীরে ধীরে ওই বিনিয়োগ করা হবে। কারণ ভবিষ্যতে গাড়ির বাজারের ৩৫ শতাংশ দখল করবে তিন চাকার ইভি।
১০১৮
ইউলারের লগ্নিকে কৌশলগত বিনিয়োগ বলে উল্লেখ করেছে হিরো মোটোকর্প। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই বৈদ্যুতিন গাড়ির দুনিয়ায় পা জমাতে চাইছে দেশের বৃহত্তম বাইক এবং স্কুটার নির্মাণকারী এই সংস্থা।
১১১৮
ইভি নির্মাণকারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পর হিরো মোটোকর্পের শেয়ারের দর কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বাইক ও স্কুটার নির্মাণকারী সংস্থাটির এগ্জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান পবন মুঞ্জল বলেছেন, ‘‘জ্বালানিযুক্ত এবং ব্যাটারিচালিত দু’ধরনের গাড়ির দুনিয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেই কারণেই অন্য সংস্থার হাত ধরছি আমরা।’’
১২১৮
হিরোর দাবি, এই ধরনের লগ্নির মাধ্যমে অত্যাধুনিক ইভি তৈরির দিকে নজর দিতে পারবেন তাঁরা। অন্য দিকে বর্তমানে ভারতের ৩০টি শহরে ছড়িয়ে রয়েছে ইউলার মোটর্সের ব্যবসা। তিন চাকার বৈদ্যুতিন গাড়ির নকশা, উৎপাদন এবং বিক্রির প্রক্রিয়ার উপর দখল রয়েছে তাদের।
১৩১৮
ইউলার মোটর্সে লগ্নির খবর ছড়িয়ে পড়তেই ২১ মার্চ একবারে তিন শতাংশ বৃদ্ধি পায় হিরো মোটোকর্পের শেয়ারের দাম। ওই দিন বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (বিএসই) একটা সময়ে এর দর ওঠে ৩,৭১৩ টাকা। পরে অবশ্য কিছুটা নেমে ৩,৬৩৩ টাকায় নেমে এসেছে দাম।
১৪১৮
এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তিন চাকার বৈদ্যুতিন গাড়িতে বিপুল বিনিয়োগ করছে হিরো মোটোকর্প। এর আগে অ্যাথার এনার্জির ৪০ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল দেশের বৃহত্তম বাইক এবং স্কুটার নির্মাণকারী সংস্থা। এ বার ইউলারের ৩২.৫ শতাংশ স্টকের দখল নিল হিরো মোটোকর্প।
১৫১৮
২০১৮ সালে সৌরভ কুমারের হাত ধরে বাজারে আসে ইউলার মোটর্স। তিন চাকার বৈদ্যুতিন গাড়ির মডেলটির নাম হাইলোড ইভি রেখেছে তারা। ১৭০ কিলোমিটার পাল্লার এই গাড়িগুলির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
১৬১৮
ইউলার মোটর্সের সদর দফতর রয়েছে নয়াদিল্লিতে। কিছু দিন আগে চার চাকার বৈদ্যুতিন গাড়িও বাজারে আনে এই সংস্থা। গত আর্থিক বছরে (পড়ুন ২০২৩-’২৪) ইউলারের বার্ষিক আয় ছিল ১৭২ কোটি টাকা। এই অঙ্ক তার আগের বছরের ৪৯ কোটি টাকার চেয়ে অনেকটাই বেশি।
১৭১৮
তিন চাকার ইভি নির্মাণকারী সংস্থাটির দাবি, হিরো মোটোকর্পের বিনিয়োগের ফলে উৎপাদন গতিশীলতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভারতের তিন চাকার ইভির বাজার অনেকটাই তাঁদের দখলে থাকবে বলে মনে করছে ইউলার মোটর্স।
১৮১৮
তিন চাকার বৈদ্যুতিন গাড়ির বাজারে অবশ্য ইউলারের একাধিক প্রতিযোগী রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম হল আলটিগ্রিন। এ ছাড়াও মাহিন্দ্রা ইলেকট্রিক, পিয়াজিও, কাইনেটিক গ্রিন এবং টাটা ইভি গুরুত্বপূর্ণ।