উল্লেখ্য, গত এক দশক ধরে ভারত ও নিউ জ়িল্যান্ডের মধ্যে স্থগিত রয়েছে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এই নিয়ে ওয়েলিংটনকে বার বার অনুরোধ করেও তেমন কোনও সুরাহা করতে পারেনি নয়াদিল্লি। কিন্তু, এ বার ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া সেই বাণিজ্য চুক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে দুই দেশ। এর নেপথ্যে মূল কারণ হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধকেই দায়ী করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। নতুন নিয়মে যে দেশ আমেরিকার পণ্যে যত পরিমাণ শুল্ক নেবে, সেখান থেকে আমদানির উপর সমপরিমাণ শুল্ক চাপাবে ওয়াশিংটনও। এতে বিপুল আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা থাকায় ভারতের সঙ্গে দ্রুত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে নিউ জ়িল্যান্ড, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।
এখন প্রশ্ন হল, কী এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি? কেন এই ধরনের সমঝোতা করতে এতটা আগ্রহী ভারত ও নিউ জ়িল্যান্ড? দু’টি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে, তারা বিনা শুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে অধিকাংশ পণ্যের আমদানি এবং রফতানি করার সুযোগ পেয়ে থাকে। কোন কোন পণ্যকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আনা হবে, তা অবশ্য সংশ্লিষ্ট দু’টি রাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আর্থিক লাভের সুযোগ অনেকটা বেশি।
বর্তমানে ১০০ কোটি ডলারের সামান্য বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি ও রফতানি করে ভারত এবং নিউ জ়িল্যান্ড। ২০২৩-’২৪ আর্থিক বছরে কিউয়িভূমিতে ৫৩.৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে ওই আর্থিক বছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৩.৫ কোটি ডলারের পণ্য। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিউ জ়িল্যান্ডে ভারতের রফতানির অঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে ২১.৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ এ দেশ থেকে রফতানি হয়েছে ৪৯.৬ কোটি ডলারের পণ্য।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আখেরে লাভ হবে ভারতের। শুল্কের দিক থেকে ছা়ড় মেলায় আগামী দিনে ফের কিউয়িভূমিতে রফতানি বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, এফটিএকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এ দেশে নিয়ে আসার সুযোগ পাবে সরকার। এর হাত ধরে আসবে উন্নত প্রযুক্তি। দেশের মাটিতে তৈরি হবে কর্মসংস্থানও।
ভারত থেকে নিউ জ়িল্যান্ডে মূলত রফতানি করা হয় উন্নত মানের কাপড়, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং পরিশুদ্ধ পেট্রোলিয়াম। এই রফতানির পরিমাণ যথাক্রমে ৭২ শতাংশ, ৬৭ শতাংশ এবং ৫২ শতাংশ। কিউয়িভূমি থেকে আসা পণ্যের মধ্যে ২২ শতাংশ আপেল, ছ’শতাংশ অন্যান্য ফল, ১.৯ শতাংশ মাংস এবং ০.৫৭ শতাংশ দুগ্ধজাত সামগ্রী থাকে বলে জানা গিয়েছে।
তবে নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিউয়িরা এর মাধ্যমে ভারতের দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার দখল করতে ইচ্ছুক। পশুপালন এবং দুগ্ধজাত পণ্যের উপর এ দেশের প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। আর সেই কারণেই এত দিন এই ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এসেছে নয়াদিল্লি। এফটিএর জন্য সেখান থেকে কিছুটা পিছু হটতে হতে পারে মোদী সরকারকে।
অন্য দিকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে নিউ জ়িল্যান্ডের তথ্যপ্রযুক্তি বাজার দখলের পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। এর জন্য আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডায় কর্মদক্ষ ভারতীয়েরা যে ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন, কিউয়ি সরকারকে সেটা চালু করতে চাপ দিয়ে চলেছে মোদী সরকার। কিন্তু, এতে নিউ জ়িল্যান্ডে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ ব্যাপারে লুক্সন প্রশাসন কতটা রাজি হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
বর্তমানে ভারতীয় পণ্যে নিউ জ়িল্যান্ড সরকার মাত্র ২.৩ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে। অন্য দিকে কিউয়িভূমি থেকে আসা সামগ্রীর উপর ১৭.৮ শতাংশ শুল্ক নেয় নয়াদিল্লি। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে এই বিষয়টি নিয়ে সর্বাধিক আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমঝোতায় পৌঁছনো বেশ কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
একাধিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে ইতিমধ্যেই একাধিক চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। তার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক, উদ্যানপালন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং শিক্ষা সমঝোতা চুক্তি। এ ছাড়া ক্রী়ড়া ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে একাধিক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে দুই দেশ।
নিউ জ়িল্যান্ড ছাড়া আরও দু’টি ক্ষেত্রে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী ভারত। তার মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ান (ইইউ) এবং ব্রিটেন। দু’জায়গাতেই এ ব্যাপারে কয়েক দফায় আলোচনা সেরে ফেলেছে নয়াদিল্লি। এপ্রিলে ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু হলে দ্রুত এফটিএ চুক্তিগুলি সম্পন্ন হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy