রুকেয়া বলেন, “৭ ডিসেম্বর দিদির দেওর আমার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল। ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ১৪। বাড়ির লোকেরা ওর প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কিন্তু দিদির দেওর জেদ ধরে বসে ছিল। এর মধ্যে দিদির গর্ভপাতের খবর আসে। মায়ের সঙ্গে দিদির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আমিও কয়েক দিন ছিলাম ওকে দেখাশোনা করার জন্য। সেই সময় দিদির দেওর আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মা বারণ করেছিল।”
“এক দিন দিদির শ্বশুরবাড়ির উঠোনে বসেছিলাম। হঠাৎ মুখের উপর গরম চায়ের মতো কিছু এসে পড়ল। প্রথমে ঝুঝে উঠতে পারিনি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মুখের চামড়া গলে গলে পড়তে লাগল। জ্ঞান হারিয়েছিলাম ওই দৃশ্য দেখে,’’— বলছেন রুকেয়া। তাঁর কথায়, ‘‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলাম। এক মাস চিকিৎসায় একাধিক অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফিরি। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু দিদির শ্বশুরবাড়ি থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পুলিশে অভিযোগ জানালে দিদিকে ‘হামেশা’র জন্য বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। দিদির কথা ভেবেই আর অভিযোগ জানাইনি।”
কিন্তু রুকেয়ার একটাই আফসোস। গত ২০ বছর ধরে যা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এত বছর কেটে গেল, কিন্তু আমার এই হাল যে করেছে, তাকে শাস্তি দিতে পারলাম না। শাস্তি দেওয়া তো দূর, পুলিশের কাছে অভিযোগও জানাতে পারিনি।” রুকেয়ার বিয়ে হয়েছে। তাঁর একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ‘অ্যাসিড অ্যাটাক সার্ভাইভার ক্যাফে’তে কাজ করছেন তিনি। বিয়ে হয়েছে রুকেয়ার দিদির সেই দেওরেরও। বহাল তবিয়তে গাজিয়াবাদে রয়েছেন তিনি। তাঁরও বিয়ে হয়েছে। তিন সন্তানও আছে।
আগে অ্যাসিড হামলার ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় গুরুতর জখম হওয়ার মামলা দায়ের হত। কিন্তু পরে ওই ধারার সঙ্গে ৩২৬-এ এবং বি জুড়ে দেওয়া হয়। আর ওই ধারায় অ্যাসিড হামলার ঘটনাকে জামিন অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়। শুধু তাই-ই নয়, অভিযুক্তের কমপক্ষে দশ বছর সাজা অথবা আজীবন কারাদণ্ডের বিষয়টি যোগ করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy