আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারদরে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পরই বিবৃতি দিয়েছে টিওটি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কারচুপির অভিযোগ মুছে ফেলতেই কি অডিট করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন গৌতম আদানি?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
নিজের ব্যবসায় নাকি অডিট করানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন গৌতম আদানি। এ দাবি অবশ্য আদানি নিজে করেননি। শুক্রবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তেমন দাবি করেছে আদানি গোষ্ঠীর অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সংস্থা টোটাল এনার্জিস (টিওটি)।
০২২০
টিওটি-র দাবি, আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায় অডিট করানোর দায়িত্ব পেতে পারে কোনও একটি ‘বিগ ফোর’ খ্যাত বহুজাতিক সংস্থা। যদিও ফ্রান্সের ওই সংস্থার বিবৃতি প্রকাশের পরেই এ নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানায়নি আদানি গোষ্ঠী।
০৩২০
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারদরে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পরই এই বিবৃতি দিয়েছে টিওটি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কারচুপির অভিযোগ মুছে ফেলতেই কি অডিট করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন গৌতম আদানি? ওই অডিট রিপোর্টকেই হাতিয়ার করে এগোবেন তিনি?
০৪২০
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিজেদের সংস্থার শেয়ারদর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বেশি করে দেখানোর অভিযোগ করেছে লগ্নি গবেষণাকারী আমেরিকান সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।
০৫২০
নিউ ইয়র্কের ওই সংস্থার দাবি, সেই ‘ভুয়ো’ দরের শেয়ার বন্ধক রেখেই বিপুল অর্থ ঋণ নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এই মুহূর্তে গোষ্ঠীর মোট দেনার পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি।
০৬২০
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ৩২ হাজার শব্দের রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। রবিবার তা খণ্ডন করে পাল্টা হিসাবে ৪১৩ পাতার উত্তর দেয় আদানি গোষ্ঠী। সেই সঙ্গে তাদের দাবি ছিল, সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।
০৭২০
আদানি গোষ্ঠীর আরও দাবি ছিল, ভারতের অখণ্ডতাকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত ভাবে এ হেন রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। এমনকি, ভারতীয় বাজার সম্পর্কেও অনভিজ্ঞ আমেরিকার সংস্থাটি।
০৮২০
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ অবশ্য চুপ করে থাকেনি। তারা জানিয়ে দিয়েছে, রিপোর্টে মূল অভিযোগগুলি থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গ টেনে এনেছে আদানি গোষ্ঠী। তবে তাতে কারচুপি লুকিয়ে রাখতে পারবে না তারা।
০৯২০
কারচুপির অভিযোগ নস্যাৎ করলেও একাধিক সংস্থার শেয়ারদরে পড়তি রুখতে পারেনি আদানি গোষ্ঠী। সোমবার শেয়ার বাজার খোলামাত্র হু হু করে পড়তে থাকে গোষ্ঠীর মুখ্য সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজ়েস-এর দর।
১০২০
২৪ জানুয়ারী হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার ১০ দিনের মধ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজ়েস-এর শেয়ারদরে ৫১ শতাংশ পড়ে গিয়েছে।
১১২০
আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন আদানি পোর্টস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি পাওয়ার, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি উইলমার, আদানি ট্রান্সমিশন-সহ বেশ কিছু সংস্থার শেয়ার অনেকটাই পড়েছে। ফলে ওই সংস্থাগুলিরও সম্পত্তিহানি হয়েছে।
১২২০
নিজের গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় শেয়ারদর পড়তে থাকায় বুধবার রাতে আদানি এন্টারপ্রাইজ়েস-এর ২০,০০০ কোটি টাকার দ্বিতীয় দফার শেয়ার (এফপিও) ছাড়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করে আদানি গোষ্ঠী। পরের দিন এফপিও স্থগিত রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে তারা।
১৩২০
একটি বিবৃতি জারি করে আদানি গোষ্ঠী দাবি করেছিল, শেয়ার বাজারের অস্থিরতার কারণে অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্যই এফপিও-র অর্থ ফেরত দিচ্ছেন তারা।
১৪২০
একটি ভিডিয়োবার্তায় স্বয়ং গৌতম আদানির দাবি ছিল, শেয়ার বাজারে দর এ ভাবে পড়ে যাওয়ায় এফপিও প্রক্রিয়া নিয়ে এগোনোকে উচিত বলে মনে করেনি তাঁর গোষ্ঠীর বোর্ড। এ ধরনের অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে তা নৈতিক ভাবে ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
১৫২০
আদানি গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে শেয়ার বাজারে এই ডামাডোলের মধ্যে সংসদের উভয় কক্ষেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে, যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবিও করেছে বিরোধীরা।
১৬২০
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ঠিক কী পরিমাণ সম্পত্তিহানি হয়েছে আদানির? রিপোর্টের দাবি, গত ১০ দিনে আদানির মালিকানাধীন গোষ্ঠী হারিয়েছে মোট ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪০১ কোটি টাকা)। অন্য দিকে, ব্লুমবার্গ পত্রিকার বিচারে শুক্রবার বিশ্বের ১৬তম ধনী আদানি নেমে গিয়েছেন ২২তম স্থানে।
১৭২০
এই আবহে টিওটি-র দাবি, ‘বিগ ফোর’-এর একটি সংস্থাকে অডিটের জন্য নিয়োগের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ডিলইট, আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং (ইওয়াই), কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার (পিডব্লিউসি)— একত্রে ‘বিগ ফোর’ নামে পরিচিত। আড়েবহরে এবং খ্যাতির নিরিখে বিশ্বের অ্যাকাউন্টিং নেটওয়ার্কের মধ্যে এই ৪টি সংস্থাই অন্যতম।
১৮২০
গোষ্ঠীর অন্যতম মূল সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজ়েস তাদের বার্ষিক রিপোর্টে জানিয়েছিল, শাহ ধনধারিয়া অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি সংস্থাকে দিয়ে ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে সংস্থার অ্যাকাউন্ট অডিট করা হয়েছিল। যদিও আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-এর দাবি, শাহ ধনধারিয়া অ্যান্ড কোম্পানির ঠিকানা অবৈধ।
১৯২০
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ওই অডিট সংস্থারটির মাত্র ১১ জন কর্মী এবং ৪টি অংশীদার রয়েছে।
২০২০
আদানি গোষ্ঠীতে ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে টিওটি-র। শুক্রবার নিজেদের বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থানও স্পষ্ট করেছে তারা। টিওটি আরও জানিয়েছে, ভারতীয় আইনের পাশাপাশি নিজেদের সংস্থার প্রক্রিয়া মেনেই আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছে তারা।