উল্লেখ্য, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘কেনিয়া ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সমিশন কোম্পানি’র (কেট্রাকো) চুক্তি হয়েছিল। এই প্রকল্পের জন্য আদানি এনার্জিকে ৭৩ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার দিতে রাজি ছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটির সরকার। পরিকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে ‘ট্রান্সমিশন লাইন’ তৈরির কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। আদালতের রায়তে যা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঠান্ডা ঘরে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
আফ্রিকার বিখ্যাত মাসাই উপজাতিদের দেশটিতে বেশ কিছু অদ্ভুত নিয়ম রয়েছে। যার অন্যতম হল, ২০২১ সালের সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা সংক্রান্ত আইন। তাতে বলা হয়েছে, বেসরকারি সহযোগিতায় করা সরকারি প্রকল্পের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সেখানকার আমজনতার যোগদান বাধ্যতামূলক। কেট্রাকো এবং আদানি এনার্জির মধ্যে হওয়া চুক্তিতে সেই নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে কেনিয়া ল’ সোসাইটি।
এ প্রসঙ্গে কেনিয়ার হাই কোর্ট বলেছে, এই মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত চুক্তিটি নিয়ে এগোতে পারবে না কেনিয়ার সরকার। ৩০ বছরের মেয়াদে কেট্রাকো ও আদানি গোষ্ঠীর মধ্যে ওই চুক্তি হয়েছিল। শুনানি চলাকালীন ল’ সোসাইটির তরফে একে ‘সাংবিধানিক প্রতারণা’ ও ‘গোপনীয়তার সঙ্গে অবিচার’ বলে উল্লেখ করা হয়। এই প্রকল্পে কেনিয়াবাসীর ‘অর্থপূর্ণ যোগদান’ না থাকার যুক্তিও খাড়া করা হয়েছে।
দেশের বিদ্যুৎ পরিকাঠামো উন্নত করতে দরপত্র জারি করে কেনিয়ার জ্বালানি মন্ত্রক। আদানি এনার্জি সেই বরাত পেয়েছিল। এর পরই চলতি বছরের অক্টোবরের গোড়ায় কেট্রাকোর সঙ্গে ভারতীয় সংস্থার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিদ্যুতের ঘাটতি মিটবে বলে দাবি করেছিল জ্বালানি মন্ত্রক। যার জেরে মাঝেমধ্যেই ব্ল্যাকআউটের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিকে।
শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যাপক বিক্ষোভে শেষমেশ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে সেদেশের আদালত। চুক্তিতে বিমানবন্দর সংস্কার এবং একটি অতিরিক্ত রানওয়ে তৈরির কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। কিন্তু সেই দায়িত্ব ‘আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিং লিমিটেড’-এর হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় স্থগিতাদেশের ফলে কেনিয়ায় আদানি গোষ্ঠী পা রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
অন্য দিকে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে কেনিয়ার সরকার। তাঁদের দাবি, বিমানবন্দর বিক্রি করা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বিমানবন্দর সংস্কার চুক্তির ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটি আসলে একটা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ। বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে তা-ও চূড়ান্ত নয়। ৩০ বছরের মেয়াদে আদানি এয়ারপোর্টের সঙ্গে ১৫ হাজার ৫২৬ কোটি টাকার চুক্তি করেছিল কেনিয়া সরকার।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, বিমানবন্দরের চুক্তি নিয়ে কেনিয়ার এই কর্মী অসন্তোষের পিছনে রয়েছে চিনের উস্কানি। বেজিংয়ের ঋণের জালে বর্তমানে আটকে পড়েছে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশ। আমেরিকার সংবাদপত্রগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনের কাছে কেনিয়ার ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চড়া সুদে ঋণ নেওয়ার ফলে সেই ধার শোধ করতে বেশ কয়েক বার কেনিয়াকে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার থেকে ঋণ নিতে হয়েছে।
চিনের ঋণের ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য মোম্বাসা বন্দর বা অন্য একটি বিমানবন্দরের ৯০ শতাংশ মালিকানা চিনের হাতে তুলে দেবে কেনিয়া। সম্প্রতি এমনই একটি খবর সেখানকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দেয় সরকার। ঋণ মেটাতে কোনও ভাবেই বিদেশি রাষ্ট্রকে জাতীয় সম্পত্তি হস্তান্তর বা লিজ় দেওয়া হবে না। স্পষ্ট জানিয়েছে কেনিয়ার সরকার।
এই প্রসঙ্গে, শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বিমানবন্দরের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চিনা ব্যাঙ্ক থেকেই উচ্চ সুদে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যা তৈরি করেছে দ্বীপরাষ্ট্রের সরকার। খুব কম উড়ান ওঠানামা করায় যা বিশ্বের অন্যতম ‘খালি’ বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। সূত্রের খবর, ভারত এবং রাশিয়ার দুই সংস্থাকে হামবানটোটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লিজ় দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy