কোথাও সন্দেশখালির মতো এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে!
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়িতে ইডির হানা নতুন ঘটনা নয়। নিয়োগ ও রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন ইডির হাতে। গ্রেফতার হওয়া মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (নিয়োগ মামলা) এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (রেশন মামলা)।
০২১৮
তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবনকৃষ্ণ সাহাও গ্রেফতার হয়েছেন নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে। কিন্তু কোথাও সন্দেশখালির মতো এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে!
০৩১৮
সেখানে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে এমন বাধার মুখে পড়তে হল যে, শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হল ইডি আধিকারিকদের দল ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। শুধু তা-ই নয়, বিক্ষোভের মুখে পড়ে এক ইডি আধিকারিকের মাথাও ফেটেছে বলে খবর।
০৪১৮
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় পাঁচ ইডি আধিকারিকের একটি দল। সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীও ছিল।
০৫১৮
স্থানীয় সূত্রে খবর, সরবেড়িয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়ির দিকে তাঁরা যাওয়ার চেষ্টা করলেই রুখে দাঁড়ান গ্রামবাসীদের একাংশ। যাঁরা শাহজাহানের অনুগামী বলে দাবি।
০৬১৮
ইডি আধিকারিকেরা তৃণমূল নেতার বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। এর পরেই তাঁরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, সেই সময়েই তাঁদের ঘিরে ফেলে মারধর করা হয়।
০৭১৮
এমনকি, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও। শেষমেশ ধাওয়া করে ইডি আধিকারিকদের এলাকাছাড়া করা হয়। ভাঙচুর করা হয় তাঁদের গাড়িতে। সেই সময়েই তিন আধিকারিক জখম হয়েছেন বলে খবর।
০৮১৮
ইডি সূত্রে খবর, সন্দেশখালিতে যে তিন আধিকারিক জখম হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন সহকারী ডিরেক্টর রাজকুমার রাম। তিনি বাইরে থেকে এসেছিলেন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে তাঁর সিটি স্ক্যান করানো হবে। জখম হওয়া বাকি দুই আধিকারিকের নাম অঙ্কুর এবং সোমনাথ দত্ত।
০৯১৮
পাশাপাশি অভিযোগ, আক্রান্ত হয়েছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। তাঁদের গাড়ি ও ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে বলে দাবি।
১০১৮
ইডির তল্লাশি অভিযানে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যে ‘সাংবিধানিক পরিকাঠামো’ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
১১১৮
এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসকদল। কিন্তু যাঁর বাড়িতে ইডির হানা ঘিরে এত বিতর্ক, সেই শাহজাহান আসলে কে? স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্দেশখালি বিধানসভায় তৃণমূলের কনভেনর তিনি।
১২১৮
এ ছাড়াও জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন শাহজাহান। এলাকায় তিনি রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। জ্যোতিপ্রিয় রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি। শাহজাহানের বাড়িতেও ইডি আধিকারিকেরা রেশন ‘দুর্নীতি’র তদন্তে গিয়েছিলেন বলে খবর।
১৩১৮
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির ঘটনায় ইডিরই প্ররোচনা দেখছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, তাদের বেইজ্জত করতে বিজেপির নির্দেশে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তদন্তের নামে প্ররোচনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তারই ফলশ্রুতি শুক্রবার সকালের ওই ঘটনা বলে মত তাদের।
১৪১৮
দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “সন্দেশখালির ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু শুধু তৃণমূলকে বেইজ্জত করবে বলে বিজেপির নির্দেশে কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তল্লাশির নামে প্ররোচনা দিচ্ছে।” এটি ধারাবাহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করেন কুণাল।
১৫১৮
বিজেপির উদ্দেশেও আক্রমণ শানিয়েছেন কুণাল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘রেজিস্টার্ড চোর’ বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “বিজেপি নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি হয় না। কিন্তু যেখানেই বিজেপি সংগঠনে পাল্লা দিতে পারছে না, সেই জায়গায় গিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষকে প্ররোচিত করা হচ্ছে, গন্ডগোল তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।”
১৬১৮
অন্য দিকে, এই ঘটনায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনার ছবি এবং ভিডিয়ো নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে (এনআইএ) দিয়ে এই ঘটনার তদন্তেরও দাবি তুলেছেন তিনি।
১৭১৮
সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে ধরে এক্স হ্যান্ডলে শুভেন্দু লেখেন, “বর্বরোচিত। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে ঠেকেছে। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে হামলা মুখে পড়তে হল ইডি এবং সিআরপিএফ আধিকারিকদের।”
১৮১৮
এর পরই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সেই এক্স বার্তা ট্যাগ করে সন্দেশখালির এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন। সেই এক্স বার্তায় তিনি জুড়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, ইডির অধিকর্তা এবং সিআরপিএফকেও।