বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন আমেরিকার কিংবদন্তি বাজার বিশ্লেষক ও লগ্নিকারী জিম রজার্স। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর স্টক মার্কেটের দিকে সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, শেয়ার ছেড়ে সোনা বা রুপোর মতো নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন জিম। উল্লেখ্য, আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫ সাল) জানুয়ারিতে শুরু হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় বারের কার্যকাল।
ডোনাল্ডের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কড়া সমালোচনা করতে গিয়ে জিম বলেছেন, ‘‘এটা কখনওই আমাদের দেশের জন্য ভাল নয়। বিশ্ব অর্থনীতিও এতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের এই নীতি বাণিজ্য যুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। যা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলবে। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে দুনিয়া জু়ড়ে আসবে আর একটা মন্দা।’’
নির্বাচনী প্রচারে আমেরিকাকে ফের এক বার ‘মহান দেশ’-এ পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। আর জন্য আমদানি সামগ্রীর উপর শুল্ক বৃদ্ধির কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি, ঘরের মাটিতে যাবতীয় শিল্পসামগ্রী নির্মাণের কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। এক কথায়, আমেরিকাকে উৎপাদন শিল্পকেন্দ্রে পরিণত করার স্বপ্ন দেখিয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির এই নেতা।
আর এইখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের যুক্তি, প্রেসিডেন্ট হয়ে আমদানি শুল্ক অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিলে অন্যান্য দেশও সেই রাস্তায় হাঁটতে শুরু করবে, যা অভ্যন্তরীণ মূল্যবৃদ্ধির আগুনে ঘি ঢালার শামিল হবে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক (পড়ুন ফেডারেল ব্যাঙ্ক) সুদের হার বৃদ্ধি করতে বাধ্য হবে।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আগামী বছর (পড়ুন ২০২৫ সাল) আমেরিকার শেয়ার বাজারে বড় পতন দেখা যাবে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। গত দু’বছরে বাজার যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, স্টকের সূচক তার চেয়ে বেশি নামতে পারে বলে মিলেছে সতর্কবার্তা। সেই অবস্থায় আমেরিকা ফার্স্ট নীতির জেরে আর্থিক মন্দা শুরু হলে বাজারের ঊত্থান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেই মত তাঁদের।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে ভারতের ফার্মা, গাড়ি নির্মাণ এবং বস্ত্রশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, এই সমস্ত পণ্যের ভারী শুল্কের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এইচ ১-বি ভিসার নিয়ম কঠোর করতে পারেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এই বিষয়টি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পগুলিকে লোকসানের মুখে ফেলতে পারে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হতেই বিশ্বব্যাপী ডলার শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। কিন্তু তাঁর আমেরিকা ফার্স্ট নীতির জেরে আর্থিক মন্দা এলে সেই জায়গা ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে আমেরিকান মুদ্রা। অন্য দিকে, রাশিয়া, ভারত, চিনের মতো ব্রিকস দেশগুলি ডলারকে সরাতে আলাদা একটি মুদ্রা নিয়ে এলে তা ওয়াশিংটনের পক্ষে একেবারেই ভাল হবে না। তা বলাই বাহুল্য।
ট্রাম্পের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির নীতির কেন সমালোচনা করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা? তাঁদের যুক্তি, বিদেশ, বিশেষত চিন থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কারখানা নিজের দেশে সরিয়ে আনলে অন্য সমস্যা দেখা দেবে। শ্রম আইনের নিরিখে সে ক্ষেত্রে পণ্য উৎপাদনে অনেক বেশি খরচ করতে হবে ওয়াশিংটনকে। এত দিন সস্তা দরে যা করে এসেছে বেজিং।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, মুখে আমেরিকা ফার্স্ট নীতির কথা বললেও তা কেবলমাত্র চিনের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে পারেন ট্রাম্প। বেজিংয়ের আর্থিক আধিপত্য ভাঙার নীল নকশা ছকতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। অন্য দেশের পণ্যের উপর শুল্ক চাপিয়ে আর্থিক মন্দা ডেকে আনার মতো বোকামি করবেন না এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।
অন্য দিকে, ভারতের অর্থনীতি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন জিম রজার্স। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘এত বছর পর বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বুঝেছে যে সমৃদ্ধি মোটেই খারাপ ব্যাপার নয়। আর তাই নয়াদিল্লির নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।’’ ভারতীয় শেয়ার বাজারে লগ্নির পরামর্শও দিয়েছেন এই আমেরিকান বিনিয়োগকারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy