খুব শীঘ্রই চিনের হাতের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ‘আকাশ ছোঁবে’ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ভবিষ্যতে পরমাণু শক্তিতে আরও চাঙ্গা হতেই নাকি এমন পদক্ষেপ করছে চিন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
পরমাণু অস্ত্রের নিরিখে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করছে ভারতের প্রতিবেশী চিন! এমন চলতে থাকলে চিন খুব শীঘ্রই বিপুল পরিমাণ পরমাণু অস্ত্রের মালিক হবে বলেও দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
০২২০
ভারত, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চিন, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইজ়রায়েল এবং উত্তর কোরিয়া— বর্তমানে এই ন’টি দেশের হাতে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র।
০৩২০
তবে এই নয় দেশের মধ্যে অন্য দেশগুলির তুলনায় চিন দ্রুত পরমাণু শক্তি বৃদ্ধি করছে বলেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে চিন যদি পরমাণু শক্তিতে মহাশক্তিধর হয়ে ওঠে, তা হলে তা বাকি দেশগুলির জন্য উদ্বেগ তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
০৪২০
মনে করা হচ্ছে, চিনের হাতে বর্তমানে ৫০০টি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড (এমন একটি অস্ত্র, যার সামনের অংশ জৈবিক, রাসায়নিক বা পারমাণবিক উপাদান থাকে। ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, টর্পেডোর সাহায্যে সেই উপাদান শত্রুদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয়।)’ রয়েছে।
০৫২০
তবে খুব শীঘ্রই চিনের হাতের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ‘আকাশ ছোঁবে’ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। ভবিষ্যতে পরমাণু শক্তিতে আরও চাঙ্গা হতেই নাকি এমন পদক্ষেপ করছে চিন।
০৬২০
বিজ্ঞান এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা সমস্যা সংক্রান্ত একটি অসরকারি সংস্থার ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা এবং নাগাসাকির পরমাণু বিস্ফোরণের পর থেকেই পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ‘স্বপ্ন’ দেখতে শুরু করে চিন।
০৭২০
‘ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্ট’-এর বিজ্ঞানী হ্যান্স এম ক্রিস্টেনসেন, ম্যাট কোর্দা, এলিয়ানা জনস এবং হার্বার্ট স্কোভিল সেই রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন।
০৮২০
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি অব্যাহত রেখেছে। তিনটি অত্যাধুনিক এবং কুশলী ক্ষেপণাস্ত্রও নাকি চিন তৈরি করছে।
০৯২০
পেন্টাগনকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থাৎ আর ছ’বছরের মধ্যে চিনের অস্ত্রাগারে প্রায় এক হাজার ওয়ারহেড থাকবে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি খুব উন্নত হবে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা থাকবে।
১০২০
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ফিসাইল ম্যাটেরিয়ালস’ সংস্থা মূল্যায়ন করেছে যে, ২০২২ সালের শেষে, চিনের কাছে প্রায় ১৪ টন ইউরেনিয়াম এবং প্রায় ২.৯ টন প্লুটোনিয়াম মজুত ছিল।
১১২০
ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম— উভয়ই অতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ। যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাজে লাগে।
১২২০
ওই রিপোর্টে বলা রয়েছে, ‘‘চিনের হাতে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম মজুত রয়েছে, তা তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা দ্বিগুণ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। রিপোর্টে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চিন তার অসামরিক চুল্লি ব্যবহার করে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্লুটোনিয়াম মজুত করতে পেরেছে।”
১৩২০
উপগ্রহচিত্রের কথা উল্লেখ করে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিনের উত্তর-পশ্চিমে স্বায়ত্তশাসিত জিনজিয়াং প্রদেশে লপ নুর পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাগার সম্প্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই পরীক্ষাগার নাকি আকারেও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৪২০
উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে যে, লপ নুরে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাগারের আশপাশে ছোটখাটো নগর তৈরি হয়েছে। ওই পরীক্ষাগারের কাজে সাহায্যের জন্যই গড়ে উঠেছে জনবসতি। পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে শক্তপোক্ত একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৫২০
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এও সে সব উপগ্রহচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল। তা থেকেই মনে করা হচ্ছে, চিন পুরোদমে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
১৬২০
পরীক্ষাগারে যে রকম সক্রিয়তা উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, চিন কিছু আধুনিক মানের ব্যালিস্টিক এবং জাহাজ থেকে ছোড়ার পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে। এ বার সেগুলি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
১৭২০
লপ নুরের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষাগারের উপগ্রহচিত্র নিয়ে বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে চলেছেন রেনি বাবিয়ার্জ। তিনি অতীতে পেন্টাগনের হয়ে কাজ করেছেন। সেই রেনিই এ বার লপ নুরের সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১৯৬৪ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম বার এই লুপ নুরে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করেছিল চিন।
১৮২০
যদিও পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে চিন। এ বারই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এই রিপোর্টের সত্যতা উড়িয়ে দিয়েছে। যদিও উপগ্রহচিত্র নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে লুপ নুরের অনেক উন্নতি ঘটেছে।
১৯২০
উল্লেখযোগ্য যে, পেন্টাগনকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, চিনের সামরিক বাহিনী, ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’র বায়ু সেনা লাগাতার পরমাণু হামলা সংক্রান্ত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২০
ফলে, পরমাণু অস্ত্রের নিরিখে শক্তিশালী হওয়ার জন্য চিন যে ক্রমাগত পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে, সেই জল্পনা আরও ঘনীভূত হয়েছে।