China is demolishing skyscrapers as property crisis worsened dgtl
China Property Sector Crisis
থাকার লোক নেই, পর পর বহুতল বানিয়ে আবার ভেঙে ফেলছে চিন! কোন সঙ্কটে জিনপিং?
চিনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গেই জুড়ে আছে নির্মাণসঙ্কট। সেই দেশের অর্থনীতির একটি বড় ভরসার জায়গা ছিল নির্মাণশিল্প। গত কয়েক মাসে সেই খাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বেজিং।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
চিনের চিন্তা কমছে না। সময়টা ভাল যাচ্ছে না প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। অর্থনীতি থেকে ভূ-রাজনীতি, নানা চিন্তার ভাঁজ পড়ছে তাঁর কপালে। খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তেমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
০২১৭
চিনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা সকলের জানা। গত কয়েক মাস ধরে অর্থনীতি টালমাটাল জিনপিংয়ের দেশে। চিন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। তাদের সঙ্কট অন্য দেশেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
০৩১৭
চিনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গেই জুড়ে আছে নির্মাণসঙ্কট। চিনের অর্থনীতির একটি বড় ভরসার জায়গা ছিল নির্মাণশিল্প। গত কয়েক মাসে সেই খাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বেজিং।
০৪১৭
সমস্যার সূত্রপাত সরকারের নীতি নির্ধারণেই। দেশের অর্থনীতিকে জোরদার করতে জিনপিং যে নীতি নিয়েছিলেন, সেখানেই গোড়ায় গলদ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
০৫১৭
যে কোনও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি লুকিয়ে থাকে সে দেশের বাজারের সক্রিয়তার উপরে। সাধারণ মানুষ যত কেনাকাটা করবেন, বাজারে যত লেনদেন হয়, তত মুদ্রাস্ফীতি কমে।
০৬১৭
এই মুদ্রাস্ফীতি রোধ নিশ্চিত করতে চিন সরকার নির্মাণশিল্পে বিনিয়োগ করেছিল। সাধারণ মানুষের হাতে কাঁচা টাকা তুলে দিতে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল নির্মাণের মহাযজ্ঞ।
০৭১৭
সারে সারে বহুতল নির্মাণ করিয়েছিল চিন। রাজপথ থেকে অলিগলি, শুরু হয়েছিল নির্মাণকাজ। বড় বড় আবাসন, বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। সবটা পরিকল্পনামাফিক এগোয়নি।
০৮১৭
চিন সরকারের পরিকল্পনা ছিল, নির্মাণকাজে সাধারণ শ্রমিকদের নিয়োগ করে পরিশ্রমের বিনিময়ে তাঁদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার। সেই টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠবে বাজার। মুদ্রাস্ফীতি ঠেকানো যাবে।
০৯১৭
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বাড়িঘর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এত নতুন বহুতল তৈরি হয়েছে যে, সেখানে থাকার লোক নেই! সাধারণ মানুষ গাঁটের কড়ি খরচ করে সেখানে থাকার কথা ভাবছেনই না।
১০১৭
চিনের মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে সম্প্রতি সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব লক্ষ করা গিয়েছে। করোনা অতিমারির পর থেকেই চিনা নাগরিকেরা হয়ে উঠেছেন অতি সচেতন এবং সঞ্চয়ী।
১১১৭
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চিনারা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের হার। যে কারণে নতুন করে বিয়ে, সংসার, সন্তানের পরিকল্পনাও অনেকে ত্যাগ করেছেন।
১২১৭
একই ভাবে, নতুন বাড়ি কিনতে চাইছেন না চিনারা। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা না থাকায় মোটা টাকা খরচে কেউ এগিয়ে আসছেন না। মার খাচ্ছে জিনপিংয়ের নির্মাণশিল্প।
১৩১৭
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, চিন সরকার নিজেদের তৈরি বহুতল নিজেরাই ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে। একের পর এক বহুতল, আবাসন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে। ধসে গিয়েছে নির্মাণশিল্পের মতো অর্থনীতির শক্ত ঘাঁটি।
১৪১৭
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই সঙ্কটের পরিস্থিতি থেকে খুব শীঘ্র মুক্তি পাওয়ার আশা নেই। বরং, আরও খারাপ দিন জিনপিংয়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে। ব্লুমবার্গ নিউজের একটি সমীক্ষায় প্রতি ১৫ জন চিনার মধ্যে অন্তত ন’জনের দাবি, ২০২৩ সালের শেষ দিকে চিনের অর্থনীতিতে আরও বড় সঙ্কট অপেক্ষা করছে। এই ন’জনের মধ্যে ছ’জন আবার এর জন্য দায়ী করেছেন নির্মাণশিল্পকে। এর পরে রয়েছে ভূ-রাজনীতিগত সমস্যা।
১৫১৭
নির্মাণশিল্পের এই করুণ দশা চিনের শেয়ার বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। নির্মাণ সংস্থাগুলির শেয়ার হু হু করে পড়েছে। গত ১২ বছরে এই পরিস্থিতি দেখা যায়নি। নির্মাণসঙ্কট না মেটাতে পারলে শেয়ার বাজারের উন্নতি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
১৬১৭
এর মাঝে চিনের বড় বড় নির্মাণসংস্থা আইনি জটে জড়িয়ে আছে। চিন এভারগ্রান্ডে গ্রুপ দেশের অন্যতম বড় রিয়েল এস্টেট গোষ্ঠী। তাঁরা ঋণগ্রস্ত। এই গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বড়সড় অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
১৭১৭
চিনের আরও একটি বড় নির্মাণসংস্থা কান্ট্রি গার্ডেন হোল্ডিংস। সেই সংস্থাও বর্তমানে দেউলিয়া হতে বসেছে। আদালতে লড়াই চালাচ্ছেন সংস্থার কর্তৃপক্ষ। নির্মাণশিল্পের এই দুর্দশা কাটাতে না পারলে আগামী দিনে জিনপিংকে আরও ভুগতে হবে, মত বিশেষজ্ঞদের।