Bollywood actress and dancer Bela Bose who came to fame in the 1960s passes away quietly dgtl
Bollywood Actress Bela Bose Death
সর্বস্ব হারিয়ে পাড়ি দেন মুম্বই, আপন দক্ষতায় বলিউড জয় করেন বাঙালি কন্যা
ষাটের দশকে আপন দক্ষতায় বলিউড জয় করে নিয়েছিলেন বাঙালি কন্যা বেলা। তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা লোকের মুখে মুখে ফিরত। নাচে হেলেন, অরুণা ইরানিদের মতো তারকার সঙ্গে উচ্চারিত হত বেলার নামও।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
নীরবে প্রয়াত হলেন একদা বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী বেলা বসু। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বর্ষীয়ান এই শিল্পী সোমবার রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
০২১৬
বেলা বসুকে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো চেনেন না। তবে ষাটের দশকে আপন দক্ষতায় বলিউড জয় করে নিয়েছিলেন এই বাঙালি কন্যা। তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা লোকের মুখে মুখে শোনা যেত। তবে বেলার পারদর্শিতা ছিল নাচে।
০৩১৬
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে বলিউডের গান, সব নাচেই সমান পারদর্শী ছিলেন বেলা। নৃত্যশিল্পী হিসাবে তিনি এক সময় এতই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন যে, অনেকে তাঁকে হেলেনের সঙ্গে তুলনা করতেন। হেলেন, অরুণা ইরানিদের মতো তারকার সঙ্গে উচ্চারিত হত বেলার নামও।
০৪১৬
১৯৪১ সালের ১৮ এপ্রিল কলকাতায় জন্ম বেলার। তাঁর বাবা অমূল্যরতন বসু কাপড়ের ব্যবসা করতেন। আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে ১৯৫১ সালে পরিবার নিয়ে পাড়ি দেন মুম্বই। কিন্তু নতুন শহরে সংসার গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই ছন্দপতন। ১৯৫৩ সালে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বেলার বাবার।
০৫১৬
অমূল্যরতনের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন বেলার মা লীলাবতীদেবী। নার্স হিসাবে হাসপাতালে যোগ দেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বেলা। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি মায়ের পাশে দাঁড়ান। চার ভাইবোনের সংসারের ভার আসে তাঁর কাঁধেও।
০৬১৬
হিন্দি ছবিতে গ্রুপ ডান্সার হিসাবে ছোটখাটো সুযোগ পেতেন বেলা। পেশা হিসাবে সেটাই আঁকড়ে ধরেন। কিশোরী বেলার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না। বেলার গুণ ছিল, যে কোনও নাচ তিনি এক লহমায় আয়ত্ত করে নিতে পারতেন।
০৭১৬
এই নাচের সূত্রেই বলিউডে কাজের সুযোগ এসে গিয়েছিল বেলার কাছে। একাধিক ছবিতে নাচের দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু বয়সের তুলনায় বেলা ছিলেন লম্বা এবং রোগা। ছিপছিপে চেহারা নাচের দলে বাকিদের সঙ্গে বেমানান হয়ে উঠেছিল। ফলে বার বার তিনি নাচ থেকে বাদ পড়তেন।
০৮১৬
বলিউডে একক নৃত্যশিল্পী হিসাবে বেলার প্রথম ব্রেক ছিল ‘ম্যাঁয় নশে মে হুঁ’ ছবিতে। রাজ কপূর এবং মালা সিনহা অভিনীত ছবিটিতে বেলার নাচ নজর কেড়েছিল। এর পর ১৯৬২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে বলিউডে প্রথম নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন বেলা।
০৯১৬
১৯৬২ সালে ‘সওতেলা ভাই’ ছবিতে গুরু দত্তের বিপরীতে নায়িকা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল নৃত্যশিল্পী বেলাকে। সে বছরই তিনি ‘হাওয়ামহল’ ছবিতে অভিনয় করেন হেলেনের বোনের ভূমিকায়। নাচের মতোই অভিনয়ের জগতেও দাপিয়ে কাজ করেছেন বেলা। পরিচালক, প্রযোজকদের হতাশ করেননি কখনও।
১০১৬
১৯৬৬ সালে ‘নাগিন অউর সপেরা’ ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বেলা। বিপরীতে নায়ক ছিলেন মনোহর দেশাই। বেলার কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘আম্রপালী’, ‘শিকার’, ‘প্রেমপত্র’, ‘জিদ্দি’, ‘চিত্রলেখা’, ‘পুনম কে রাত’, ‘বক্সার’, ‘অভিনেত্রী’ এবং ‘জয় সন্তোষী মা’।
১১১৬
১৯৬৭ সালে অভিনেতা তথা পরিচালক আশিস কুমারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন বেলা। বিয়ের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কমিয়ে দেন। দুই সন্তানের জননী বেলা ক্রমে বলিউডকে সম্পূর্ণ বিদায় জানান।
১২১৬
বেলার অভিনয় এবং নৃত্যকলায় দক্ষতার কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু তাঁর আরও অনেক গুণ ছিল। প্রচারের আলোর আড়ালেই থেকে গিয়েছে সেগুলি।
১৩১৬
বেলা ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। অবসর পেলেই বসে যেতেন খাতা আর রং, তুলি নিয়ে। এই বলি অভিনেত্রীকে দক্ষ চিত্রশিল্পীও বললেও অত্যুক্তি হয় না। এমনকি, বেলা কবিতাও লিখতেন। বেশ কিছু মৌলিক কবিতা লিখেছেন তিনি।
১৪১৬
বেলার আরও একটি গুণ অজানা থেকে গিয়েছে। তিনি দক্ষ সাঁতারু ছিলেন। জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার কেটে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বেলা। তবে বলিউডে কেরিয়ার গড়ার দিকেই ছিল তাঁর মন। তাই সাঁতারের প্রতিভা আড়ালে চলে যায়।
১৫১৬
বেলার মেয়ে মঞ্জুশ্রী প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ছেলে অভিজিৎ একটি আর্থিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী। তাঁর স্বামী আশিস ২০১৩ সালে প্রয়াত হন। শেষ জীবনে পরিবার, নাতি-নাতনি নিয়ে দিব্যি সময় কাটিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের জগৎ থেকে দূরে সরে এসেও তাঁর জৌলুস ফিকে হয়নি।
১৬১৬
অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার পর প্রচারের আলো থেকে ইচ্ছা করেই দূরে থেকেছেন বেলা। এক সময় যে কন্যা বলিউডে দাপিয়ে বেরিয়েছেন, তিনিই চলে গিয়েছেন বিস্মৃতির গভীরে। সোমবার বি টাউনের চাকচিক্য থেকে নীরবে দূরে চলে গেলেন ‘বলিউডের বেলা বোস’।