মুখে-গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। কে বা কারা সুরেশকুমার সাউকে খুন করেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২২ ১২:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
গ্রামের বাইরে এক নির্জন জায়গায় পড়েছিল ছোটভাইয়ের দেহ। মুখে-গলায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন। দেহটি দেখেই দাদা বুঝতে পারেন, কে বা কারা তাঁর ভাইকে খুন করেছে। গত বছরের ১৩ এপ্রিল পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেছিলেন ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুর জেলার বাসিন্দা রামপ্রসাদ সাউ।
প্রতীকী ছবি।
০২২০
রামপ্রসাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে হিরী থানার পুলিশ। রামপ্রসাদের ভাই সুরেশকুমার সাউয়ের দেহ উদ্ধার করে নিয়মাফিক ময়নাতদন্তের জন্য তা পাঠানো হয়।
প্রতীকী ছবি।
০৩২০
ঘটনার মাস সাতেকের মধ্যেই এই খুনের কিনারা করে ফেলে ছত্তীসগঢ় পুলিশ। সুরেশকে খুনের অভিযোগে ২০২১ সালের নভেম্বরে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে এই খুনের নেপথ্যে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা পরম্পরা।
প্রতীকী ছবি।
০৪২০
তদন্তকারীদের দাবি ছিল, সুরেশের মতো একমুখী, আপাত-নিরীহ ব্যক্তিকে খুনের পিছনে ভাইয়ে-ভাইয়ে সম্পর্কের টানাপড়েন, সম্পত্তি নিয়ে রেষারেষি, ত্রিকোণ প্রেম বা পরকীয়ার মতো কোনও কারণ ছিল না। বরং এই খুনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কুসংস্কার, তন্ত্রমন্ত্র এবং অবশ্যই গুপ্তধনের সন্ধান।
প্রতীকী ছবি।
০৫২০
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রামপ্রসাদের অভিযোগ পাওয়ার পর সুরেশ সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেন তাঁরা।
প্রতীকী ছবি।
০৬২০
বিলাসপুর জেলার খারকেনা গ্রামে রামপ্রসাদের সঙ্গেই থাকতেন সুরেশ। ঝোঁক বলতে, ইউটিউব দেখে তন্ত্রমন্ত্র শেখা। এবং মাটির তলায় লুকোনো গুপ্তধনের খোঁজ করা।
প্রতীকী ছবি।
০৭২০
এ হেন আপাত-নিরীহ সুরেশকে কেন খুন করা হল? তদন্তে নেমে সুরেশের পরিচিতদের সম্পর্কে খোঁজখবর করা শুরু করে পুলিশ। তিনি কাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়।
প্রতীকী ছবি।
০৮২০
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সুরেশকে খুনের দিন থেকেই গায়েব হয়ে গিয়েছেন তাঁদের পড়শি মাখন দাস। এ বার শুরু হয় মাখন সম্পর্কে খোঁজখবর।
প্রতীকী ছবি।
০৯২০
বিলাসপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোহিত ঝা এবং হিরী থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শান্তকুমার সাউ জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে বছর চল্লিশের মাখনও সুরেশের মতো তন্ত্রসাধনা করত।
প্রতীকী ছবি।
১০২০
খুনের দিন থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন মাখনের এক পরিচিত সুভাষ দাস মানিকপুরীও। সুরেশ এবং মাখনের মতো সুভাষও তন্ত্রমন্ত্র-জাদুটোনা করত বলে দাবি।
প্রতীকী ছবি।
১১২০
এ বার মাখনের পাশাপাশি ৪২ বছরের সুভাষের খোঁজেও তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তত দিনে ওই দু’জনকেই সুরেশের খুনে অভিযুক্ত হিসাবে ধরে এগোতে থাকেন তদন্তকারীরা।
প্রতীকী ছবি।
১২২০
পুলিশ জানতে পারে, খুনের দিন কয়েক আগে পরিচিতদের কাছে মাখন বলেছিল যে, সে সুভাষের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে জব্বলপুরে ছুটে যায় তদন্তকারী দল।
ছবি: সংগৃহীত।
১৩২০
জব্বলপুরে গিয়ে জানা যায়, সাতনা মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করছে মাখন। মাখনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জব্বলপুরে একটি সংস্থায় গার্ডের কাজ করছে সুভাষ। এ বার সুভাষকেও আটক করে চলে জেরা।
ছবি: সংগৃহীত।
১৪২০
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ভেঙে পড়ে নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করে মাখন এবং সুভাষ। কিন্তু কেন নিজেদের সঙ্গী সুরেশকে খুন করল তারা?
প্রতীকী ছবি।
১৫২০
ছত্তীসগঢ়ের সংবাদমাধ্যমে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পুলিশি জেরায় জানা যায় যে, প্রায় ন’বছর ধরে গুপ্তধনের সন্ধান চালাচ্ছিল সুভাষ। গুপ্তধনের সন্ধান পেতেই তন্ত্রমন্ত্রের সাধনা করত সে। এক সময় তার সঙ্গে মাখনের পরিচয় হয়।
প্রতীকী ছবি।
১৬২০
পুলিশের দাবি, তন্ত্রমন্ত্রের সাহায্যে পারিবারিক সমস্যার সুরাহা করে দেওয়ার নামে লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করত সুভাষরা। সে জন্য তার কাছে লোকজনদের ধরে আনত মাখন।
প্রতীকী ছবি।
১৭২০
তন্ত্রসাধনার শখই সুরেশকে তাদের কাছে টেনে এনেছিল বলে সুভাষের দাবি। এ ক্ষেত্রে সুরেশের সঙ্গে সুভাষের আলাপ করিয়ে দিয়েছিল মাখন। অভিযুক্তদের দাবি, তিন জন মিলে ইউটিউবের মাধ্যমে তন্ত্রমন্ত্র শিখে তা প্রয়োগ করত। সুভাষই ছিল মাখনের ‘গুরু’। তাদের সঙ্গী ছিল সুরেশ।
প্রতীকী ছবি।
১৮২০
তদন্তকারীদের দাবি, তিন জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও এক সময় সুভাষ এবং মাখনের ধারণা হয়েছিল যে গুপ্তধনের সন্ধান পেতে হলে নরবলি দিতে হবে। এর পরই সুরেশকে বলি দেওয়ার ছক কষেছিল বাকি দু’জন।
প্রতীকী ছবি।
১৯২০
কী ভাবে খুন করা হল সুরেশকে? তদন্তকারীদের দাবি, নবরাত্রির প্রথম অমাবস্যায় সুরেশকে বলি দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছিল সুভাষরা। তন্ত্রসাধনার অজুহাতে সুরেশকে গ্রামের বাইরে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় তারা।
প্রতীকী ছবি।
২০২০
পুলিশ জানিয়েছে, অমাবস্যার রাতে পাথরালি এবং খার এলাকার মাঝামাঝি একটি নির্জন জায়গায় সুরেশকে নিয়ে পৌঁছয় দু’জন। সেখানে তন্ত্রচর্চা করার পর কুড়ুল দিয়ে বার বার কুপিয়ে সুরেশকে খুন করে তারা। এর পর সেখান থেকে পালিয়ে যায়।