All you need to know about scientist Gopalswamy Doraiswamy Naidu, also known as ‘Edison of India’ dgtl
Gopalswamy Doraiswamy Naidu
স্কুলের গণ্ডি পেরোননি! দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক মোটর আবিষ্কার করেন ‘ভারতের এডিসন’
গোপালস্বামী ছিলেন এক জন ভারতীয় উদ্ভাবক এবং ইঞ্জিনিয়ার। ভারতে প্রথম বৈদ্যুতিক মোটর থেকে শুরু করে একাধিক ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি আবিষ্কারের নজির রয়েছে গোপালস্বামীর।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
প্রথাগত এবং পুঁথিগত শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও তিনি ভারতের অন্যতম সফল বিজ্ঞানী। তিনি অধিক পরিচিত ‘ভারতের এডিসন’ এবং ‘কোয়ম্বত্তূরের সম্পদ সৃষ্টিকর্তা’ হিসাবে। তিনি গোপালস্বামী দোরাইস্বামী নাইডু ওরফে জিডি নাইডু। দেশে শিল্প বিপ্লব শুরু করার ক্ষেত্রেও বিশেষ কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর।
ছবি: সংগৃহীত।
০২২২
গোপালস্বামী ছিলেন এক জন ভারতীয় উদ্ভাবক এবং ইঞ্জিনিয়ার। ভারতে প্রথম বৈদ্যুতিক মোটর তৈরি-সহ বেশ কয়েকটি আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত গোপালস্বামীর নাম। শিল্পক্ষেত্র ছাড়া কৃষি (হাইব্রিড চাষ) এবং অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
ছবি: সংগৃহীত।
০৩২২
দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক মোটর তৈরি ছাড়াও গোপালস্বামী কেরোসিন চালিত পাখা, প্রজেকশন টিভি, যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর, বৈদ্যুতিক রেজার এবং টিকিট কাটার মেশিন আবিষ্কার করে তাক লাগিয়েছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত।
০৪২২
১৮৯৩ সালের ২৩ মার্চ তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরের কলঙ্গায় এক তেলুগু কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গোপালস্বামী। জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মাকে হারান।
ছবি: সংগৃহীত।
০৫২২
স্কুলে যাওয়া একেবারেই না-পসন্দ ছিল গোপালস্বামীর। ক্লাস চলাকালীন শিক্ষকদের উত্ত্যক্ত করার জন্য তাঁকে বহু বার শাস্তি পেতে হয়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই তিনি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেন।
ছবি: সংগৃহীত।
০৬২২
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে গোপালস্বামী তাঁর বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতে শুরু করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এক ব্রিটিশ আধিকারিকের কাছে রুজ মোটরবাইক দেখে তিনি আকৃষ্ট হন। কিন্তু সেই সময় মোটরবাইক কেনার সামর্থ্য তাঁর ছিল না।
ছবি: সংগৃহীত।
০৭২২
মোটরবাইকের নেশায় গ্রাম ছেড়ে কোয়ম্বত্তূরে চলে আসেন গোপালস্বামী। উদ্দেশ্য প্রচুর টাকা রোজগার করে মনের মতো বাইক কেনা। সেখানে প্রায় তিন বছর ধরে এক জন হোটেলে কর্মী হিসাবে তিনি কাজ করেন। তিন বছরের কঠোর পরিশ্রমে একটি মোটরবাইক কেনার মতো অর্থ সঞ্চয় করে আবার বাড়ি ফিরে যান।
ছবি: সংগৃহীত।
০৮২২
টাকা সঞ্চয় করার পর গোপালস্বামী ওই ব্রিটিশ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ৩০০ টাকার বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে ওই রুজ মোটরবাইক কিনে নেন। তবে মোটরবাইক চেপে ঘোরার বদলে ইঞ্জিনের নকশা এবং গঠন খতিয়ে দেখার জন্য তিনি সেটিকে খুলে ফেলেন। এটিই ছিল গোপালস্বামীর মোটর ইঞ্জিন বোঝার প্রথম প্রচেষ্টা।
ছবি: সংগৃহীত।
০৯২২
মোটরবাইকের গঠন এবং সজ্জা ভাল ভাবে বুঝে নেওয়ার পর গোপালস্বামী এক জন মেকানিক হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। কোয়ম্বত্তূরের বুকে একটি ছোট গ্যারেজও চালু করেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১০২২
১৯২০ সালে আরও এক ধাপ এগিয়ে ‘ইউনিভার্সাল মোটর সার্ভিসেস’ নামে একটি পরিবহণ সংস্থা শুরু করেছিলেন গোপালস্বামী। এর মধ্যেই একটি চারচাকা গাড়িও কিনে ফেলেন তিনি। সেই গাড়ির সাহায্যে পোলাচি থেকে পালানি পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ শুরু করে তাঁর সংস্থা।
ছবি: সংগৃহীত।
১১২২
কয়েক বছরের ব্যবধানে গোপালস্বামী এতটাই সফল হয়ে ওঠেন যে তাঁর মালিকানাধীন সংস্থা দেশের সবচেয়ে বড় যাত্রী পরিবহণ সংস্থায় পরিণত হয়। পরবর্তী কালে তিনি কোয়ম্বত্তূরের পিলামেদুতে ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রিক ওয়ার্কস’ নামে আরও একটি নতুন সংস্থা শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে ডি বালাসুন্দরম নাইডুর সহযোগিতায় ভারতে প্রথম বৈদ্যুতিক মোটর তৈরি করে ফেলেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১২২২
এর পর একের পর এক আরও অনেকগুলি সংস্থা চালু করেছিলেন গোপালস্বামী। যার মধ্যে ইউনিভার্সাল রেডিয়েটরস ফ্যাক্টরি, গোপাল ক্লক ইন্ডাস্ট্রি, কোয়ম্বত্তূর ডিজেল প্রোডাক্টস, কোয়ম্বত্তূর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড, কোয়ম্বত্তূর আর্মেচার উইন্ডিং ওয়ার্কস, ইউএমএস রেডিয়ো ইন্ডাস্ট্রি অন্যতম। বৈদ্যুতিক মোটরের সাফল্যের বালাসুন্দরামের সঙ্গে ‘টেক্সটুল’ এবং ‘লক্ষ্মী মেশিন ওয়ার্কস’ও তৈরি করেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৩২২
ভারতে দাড়ি কাটার প্রথম আধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র গোপালস্বামীই আবিষ্কার করেন। নাম দেন ‘হেইলব্রন’। এ ছাড়াও দাড়ি কাটার জন্য অতি পাতলা ব্লেড, ক্যামেরার বেশ কয়েকটি যন্ত্র, ফলের রস বার করার মেশিন, ভোটিং মেশিন এবং কেরোসিন চালিত পাখা আবিষ্কার করেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
১৪২২
১৯৪১ সালে একটি আধুনিক রোডিয়ো আবিষ্কার করেছিলেন গোপালস্বামী। যাতে সাধারণ মানুষ কিনতে পারেন, তাই খুব কম দামে সেই রেডিয়ো বাজারে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। গোপালস্বামীর ছোটবেলা দারিদ্রে কেটেছিল। আর সেই কারণেই তাঁর তৈরি সকল পণ্য বাজারে কম দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৫২২
১৯৫২ সালে একটি দুই আসনযুক্ত পেট্রলচালিত গাড়ি তৈরি করে গোপালস্বামী দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন। যাতে সেই গাড়ি সাধারণের নাগালে আসতে পারে, তাই মাত্র ২০০০ টাকার বিনিময়ে সেই গাড়ি বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সরকার তাঁকে প্রয়োজনীয় অনুমোদনপত্র (লাইসেন্স) দিতে অস্বীকার করে। পরবর্তী কালে এই গাড়ি তৈরি বন্ধও করে দেওয়া হয়।
ছবি: সংগৃহীত।
১৬২২
এক জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং ব্যবসায়ী ছাড়া, চিত্রগ্রাহক হিসাবেও গোপালস্বামীর খ্যাতি ছিল। দেশে-বিদেশে ভ্রমণের শখ ছিল তাঁর। আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে বহু বিশিষ্ট মানুষকে তিনি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৭২২
গোপালস্বামী যে খ্যাতনামীদের ছবি তুলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু। জার্মানিতে গিয়ে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে দেখা করে তাঁর ছবিও তুলেছিলেন গোপালস্বামী। ১৯৩৫ সালে লন্ডনে গিয়ে রাজা পঞ্চম জর্জের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ছবিও তিনি তুলে এনেছিলেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৮২২
১৯৪৪ সালের শেষের দিকে গোপালস্বামী সমস্ত ব্যবসা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। সংস্থাগুলির দায়িত্ব পুত্র-কন্যাদের হাতে তুলে দিয়ে তিনি শিক্ষামূলক কাজে নিজের বাকি জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯২২
দেশের প্রথম পলিটেকনিক কলেজ তৈরির কৃতিত্বও গোপালস্বামীর। জওহরলাল নেহরুর প্রচেষ্টায় ১৯৪৫ সালে ভারতের প্রথম পলিটেকনিক কলেজ, আর্থার হোপ পলিটেকনিক এবং আর্থার হোপ কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরি করিয়েছিলেন তিনি। কলেজটির নামকরণ করা হয় তৎকালীন মাদ্রাজের গভর্নর আর্থার হোপের নামে।
ছবি: সংগৃহীত।
২০২২
পরে কলেজটির নাম দেওয়া হয় গভর্নমেন্ট কলেজ অফ টেকনোলজি (জিসিটি)। গোপালস্বামী নিজে ওই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তবে অধ্যক্ষ পদে বসে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কলেজ পরিচালনা নিয়ে তাঁর মতবিরোধ বাধে। গোপালস্বামীর যুক্তি ছিল চার বছর ধরে পলিটেকনিক পড়িয়ে ছাত্রদের সময় নষ্ট করা হচ্ছে। এর বদলে যদি ডিগ্রি অর্জনের সময় কমানো যায়, তা হলে পড়ুয়ারা বাইরে কাজ করে বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবে। তবে ব্রিটিশ সরকার তাঁর সঙ্গে মতপোষণ না করায় গোপালস্বামী নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ছবি: সংগৃহীত।
২১২২
গোপালস্বামী ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেবার ওয়েলফেয়ার কমিটি’ (বর্তমানে জিডি নাইডু চ্যারিটিস নামে পরিচিত) তৈরি করেন। এই প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্য ছিল উচ্চশিক্ষায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করে পড়ুয়াদের আরও দক্ষ করে তোলা। গবেষণার জন্যও বেশ কয়েকটি বৃত্তির ব্যবস্থা করেছিল গোপালস্বামীর ট্রাস্ট।
ছবি: সংগৃহীত।
২২২২
ভারতীয় বিজ্ঞানী সি ভি রমন তাঁর সম্পর্কে এক বার বলেছিলেন, “গোপালস্বামী এক জন মহান শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী এবং উদ্যোক্তা। তাঁর হৃদয় ছিল উষ্ণ ভালবাসায় পরিপূর্ণ। সহকর্মীদের প্রতি তিনি সহমর্মী ছিলেন। তাঁদের কেউ সমস্যায় পড়লেই তিনি ছুটে যেতেন।’’ ১৯৭৪ সালের ৪ জানুয়ারি ৮০ বছর বয়সে তামিলনাড়ুতে মৃত্যু হয় ‘ভারতের এডিসন’ গোপালস্বামীর। তাঁর মৃত্যুর শোক তামিলনাড়ু-সহ সারা দেশে ছড়িয়ে প়ড়েছিল।