All you need to know about Indian pacer Mohammed Shami and his ups and downs dgtl
Mohammed Shami
বার বার জবাব দিচ্ছেন শামি! বুমরা, সিরাজকে টপকে রোহিতের দলের এক নম্বর বোলার কি তিনিই?
জীবনে উত্থান-পতন, বিতর্ক সবই রয়েছে তাঁর। তবে বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়েতে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচে মহম্মদ শামি প্রমাণ করলেন তিনি এ সবের ঊর্ধ্বে। তাঁর জীবনযাপনে শুধুই ক্রিকেট।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
জীবনে উত্থান-পতন, বিতর্ক সবই রয়েছে তাঁর। তবে বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়েতে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচে মহম্মদ শামি প্রমাণ করলেন তিনি এসবের ঊর্ধ্বে। তাঁর জীবনযাপনে শুধুই ক্রিকেট। প্রথম চার ম্যাচে খেলার সুযোগ না পাওয়ার জবাব আরও এক বার দিলেন।
০২২৫
মনে করা হচ্ছিল চলতি বিশ্বকাপে মহম্মদ সিরাজ দলে এন্ট্রি নেওয়ার পর থেকে শামির জায়গা একটু নড়বড়ে হয়েছিল। ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মার কাছে প্রথমে পছন্দের তালিকায় ছিলেন না তিনি। ছিলেন যশপ্রীত বুমরা এবং সিরাজ। শামি ছিলেন তার পরে।
০৩২৫
বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে খেলতে দেখা যায়নি শামিকে। ২২ গজের মাঠ থেকে তাঁকে দূরেই রেখেছিলেন রোহিত। তবে নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে খেলতে নেমেই পাঁচ উইকেট নিয়ে জাত চিনিয়ে দেন তিনি।
০৪২৫
এর পরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শামি নিয়েছিলেন চার উইকেট। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে বুমরার ১টি এবং সিরাজের ৩ উইকেট নেওয়াকে টপকে আবার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
০৫২৫
ধারাবাহিক ভাবে ভাল বল করার পরেই রোহিতের পছন্দের তালিকায় বুমরা এবং সিরাজকে ছাপিয়ে একেবারে এক নম্বরে উঠে এসেছেন শামি। বাংলার জোরে বোলারের উপরই বেশি ভরসা করছেন ক্যাপ্টেন।
০৬২৫
বৃহস্পতিবার ম্যাচে শ্রীলঙ্কার পাঁচটি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি নতুন রেকর্ডও গড়েছেন শামি। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতীয় হিসাবে সব থেকে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। টপকে গিয়েছেন জাহির খান এবং জভগল শ্রীনাথকে।
০৭২৫
বিশ্বকাপের মঞ্চে এখনও পর্যন্ত ৪৫টি উইকেট নিয়েছেন শামি। যা ভারতের সব বোলারদের থেকে বেশি। যদিও সব দেশের মধ্যে এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা (৭১)।
০৮২৫
এই বিশ্বকাপে হাতে বল পাওয়ার আগে পর্যন্ত শামি নিয়েছিলেন ৩১টি উইকেট। প্রথম চারটি ম্যাচ খেলেননি তিনি। কিন্তু পরের তিন ম্যাচ খেলে তুলেছেন ১৪টি উইকেট। যার মধ্যে দু’টি ম্যাচে নিয়েছেন পাঁচটি করে উইকেট।
০৯২৫
বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কাকে নাস্তানাবুদ করার নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছেন শামি। ৫ ওভারে ১৮ রান দিয়ে চরিত আশালঙ্ক, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ়, দুশন হেমন্ত, দুষ্মন্ত চামিরা এবং কাসুন রজিতার উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি।
১০২৫
তিন ম্যাচে ১৪ উইকেট শুধুমাত্র এই ম্যাচের শুকনো একটা পরিসংখ্যান নয়, দল পরিচালন সমিতিকে জবাব, যাঁরা ভারতের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞ বোলারের উপরে আস্থা রাখতে পারেননি প্রথম চারটি ম্যাচে। তাঁর খেলা যেন বলে দিচ্ছে, ‘কামব্যাক হো তো অ্যায়সা’।
১১২৫
বিশ্বকাপের সেই প্রথম ম্যাচ থেকে ভারতের প্রথম একাদশ নির্বাচনের আগে যাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হত, তিনি শামি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই সব জায়গায় সম্ভাব্য একাদশে থাকত তাঁর নাম। পর দিন টস করতে আসা রোহিতের মুখে কখনওই শোনা যায়নি শামির নাম।
১২২৫
এশিয়া কাপেও তাঁর সঙ্গে এমনটাই করা হয়েছে। এই কোনও ম্যাচে সুযোগ পাচ্ছেন, তো পরের ম্যাচেই বাদ পড়ে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মোহালির ম্যাচে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর মনে হয়েছিল বিশ্বকাপে তাঁর জায়গা পাকা। কোথায় কী! রাহুল দ্রাবিড়, রোহিত শর্মা সে কথা শুনেছিলেন কি? প্রথম চার ম্যাচে মাঠের বাইরেই থাকতে হয়েছিল তাঁকে। অথচ বিশ্বকাপে শামির যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা আর কারওরই নেই।
১৩২৫
এই শামিকেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাদ দেওয়ার পর ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন সুনীল গাওস্কর। বলেছিলেন, “আমি ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ঠিক বুঝতে পারছি না। গত বারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শামি হ্যাটট্রিক করেছিল। ক্রিকেটে অনেক কিছুই মনস্তাত্ত্বিক। তাই ওদের উচিত ছিল শামিকে নেওয়া। আগের বার শামি যা করেছিল তাতে আফগানিস্তান চাপে থাকত। তাই যদি কাউকে জায়গা দিতে হত তা হলে শামির জায়গা পাওয়া উচিত ছিল।” পারফরম্যান্সের মাধ্যমে গাওস্করের যুক্তিকেও সঠিক প্রমাণ করেছেন শামি।
১৪২৫
ভারতীয় বোলার হিসাবে বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বের পাশাপাশি এই নিয়ে এক দিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় বার টানা তিনটি ম্যাচে চার উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন শামি। এর আগে পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনিস এই কৃতিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ সালে পর পর তিনটি ম্যাচে চার উইকেটের বেশি নিয়েছিলেন।
১৫২৫
শামি এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে পর পর তিনটি ম্যাচে চার বা তার বেশি উইকেট নিয়েছিলেন।
১৬২৫
এর পাশাপাশি বিশ্বকাপে তিন বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন শামি। তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন মিচেল স্টার্ককে। এক দিনের ক্রিকেটে চার বার পাঁচ উইকেট বা তার বেশি নিয়েছেন শামি। ভারতের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে শামি সব থেকে বেশি বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন।
১৭২৫
নিউ জ়িল্যান্ডের পর শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও শামি সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে এসে তাঁর মুখে উঠে এল ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের কথা। তিনি বলেন, “আমি সব সময় চেষ্টা করি সঠিক জায়গায় বল করতে। সব সময় ফর্মে থাকতে চাই। বড় প্রতিযোগিতায় ফর্ম এক বার হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়া খুব মুশকিল। তাই জন্যে সঠিক এলাকা এবং নির্দিষ্ট লেংথে বল করাই আমার মূল লক্ষ্য থাকে। তা ছাড়া, সাদা বলের ক্রিকেটে ফর্ম ধরে রাখাই আসল। ঠিক জায়গায় বল করলে পিচ থেকে সাহায্য পাওয়া যায়। আমার কাছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
১৮২৫
সতীর্থদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমাদের বোলারেরাও দারুণ ফর্মে রয়েছে। পেসারদের কাছে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুব জরুরি। যে ছন্দের মধ্যে আমরা রয়েছি সেখানে প্রত্যেকে একে অপরের সাফল্য উপভোগ করছি। তার চেয়েও বড় কথা, একটা একতা নিয়ে বল করছি। ফলাফল তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।”
১৯২৫
২০২৩-এর বিশ্বকাপ যে শামির ভালই যাবে তা মনে হয়েছিল ম্যাচগুলি শুরুর আগে থেকেই। বিশ্বকাপের আগে বধূ নির্যাতনের মামলায় জামিন পান ভারতীয় জোরে বোলার।
২০২৫
১৯ সেপ্টেম্বর বধূ নির্যাতনের মামলায় প্রথম বার আদালতে সশরীরে হাজিরা দেন শামি। সঙ্গে ছিলেন দাদা মহম্মদ হাসিমও। দু’জনেই জামিনের আবেদন করেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করে দু’জনকেই জামিন দিয়েছিলেন।
২১২৫
২০১৮ সালের ৮ মার্চ শামি এবং তাঁর দাদার বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ তুলে যাদবপুর থানায় এফআইআর করেন শামির স্ত্রী হাসিন জাহান। ২০১৯ সালের ২৯ অগস্ট শামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আলিপুরের এসিজেএম কোর্ট। ওই বছর ৯ সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলা দায়রা আদালত ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়।
২২২৫
এই অবস্থায় প্রায় চার বছর ধরে মামলাটি সেখানে বিচারাধীন রয়েছে। পরে জেলা দায়রা বিচারকের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন হাসিন। বিচারপতি শম্পা সরকার নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল রাখলে ক্রিকেটারের স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে যান।
২৩২৫
গত মাসে শীর্ষ আদালত জানায়, এক মাসের মধ্যে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে দায়রা বিচারককে মামলাটির নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই মতো জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আলিপুর জেলা আদালতে মামলাটির শুনানি হয়। সেই মামলার শুনানিতেই শামিকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
২৪২৫
প্রসঙ্গত, স্ত্রীর করা মামলায় তার আগে আগাম বা অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেননি শামি। আইনজীবীদের মতে, অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য জেলা দায়রা বিচারক, হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে তাঁকে সশরীরে যেতে হত না। কিন্তু ট্রায়াল কোর্ট থেকে জামিন নিতে গেলে সশরীরে আদালতে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না শামির। তাই এশিয়া কাপ শেষে দেশে ফিরেই আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন পান ভারতীয় ক্রিকেটার।
২৫২৫
এর পরেই বিশ্বকাপে যোগ দিতে যান শামি। প্রথম চার ম্যাচে সুযোগ না পেলেও পরের তিন ম্যাচে ঝড় তুললেন তিনি।