All need to know about probationary IAS officer Puja Khedkar and what is the controversy around her dgtl
Puja Khedkar
সম্পত্তি লুকিয়ে সংরক্ষণে চাকরি? এড়িয়েছেন প্রতিবন্ধিত্বের পরীক্ষা? নানা বিতর্কে শিক্ষানবিশ আমলা পূজা
পুণের ওই শিক্ষানবিশ আমলার নাম পূজা খেড়কর। পূজা ২০২২ সালের ব্যাচের আইএএস অফিসার। ইউপিএসসি পরীক্ষায় তাঁর সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ছিল ৮২১।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৫:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মহারাষ্ট্র সরকারের অধীনে কাজে যোগ দিয়েছেন কয়েক মাস হল। পদ শিক্ষানবিশ আমলার। কিন্তু ঠাঁটেবাটে তিনি হার মানাবেন অনেক প্রভাবশালীকে। সম্প্রতি ব্যক্তিগত বিলাসবহুল গাড়়িতে ‘গভর্নমেন্ট অফ মহারাষ্ট্র’ স্টিকার লাগিয়ে এবং ‘বিকন’ (লাল-নীল আলো, যেমনটা উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা-মন্ত্রীদের গাড়িতে থাকে) লাগিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন। ‘শাস্তি’ও পেয়েছেন। আর তার পরেই তাঁর নিয়োগ নিয়েও বেনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে।
০২২০
পুণের ওই শিক্ষানবিশ আমলার নাম পূজা খেড়কর। পূজা ২০২২ সালের ব্যাচের আইএএস অফিসার। ইউপিএসসি পরীক্ষায় তাঁর সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ছিল ৮২১।
০৩২০
পূজার কীর্তি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে অনেকের মনে। প্রশ্ন উঠছে, কে এই পূজা এবং কী অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
০৪২০
পূজা মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার পাথারদি এলাকার বাসিন্দা। বাবা দিলীপরাও খেড়কর একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তা। মহারাষ্ট্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উঁচু পদে কাজ করতেন তিনি। দাদুও ছিলেন একজন আমলা।
০৫২০
অবসরের পর দিলীপরাও যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ী দলের প্রার্থী হিসাবে আহমেদনগর কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন। পূজার মা মনোরমার রাজনীতিতে যোগ অবশ্য আরও আগে থেকে। তিনি ভালগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান।
০৬২০
পূজা ডাক্তারি পাশ করেছেন। ডাক্তারি পড়া শেষ করার পর থেকেই ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কয়েক বার পরীক্ষা দেওয়ার পর ২০১৯ সালে আইআরএস-এর জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি যোগ দেননি। পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি ‘স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র সহকারী পরিচালকের পদে যোগ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন।
০৭২০
এর পর তিনি আবার ইউপিএসসি পরীক্ষা দেন এবং পরীক্ষার সমস্ত ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে ৮২১ র্যাঙ্ক করেন। উল্লেখ্য, নিজেকে অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত (ওবিসি) দেখিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেছিলেন পূজা। পাশাপাশি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছাড় পেতে সিভিল সার্ভিস কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় নিজেকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী বলেও দাবি করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, দৃষ্টিতে সমস্যা রয়েছে তাঁর।
০৮২০
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূজা যে অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার দাবি করেছিলেন, তাতে তাঁর পরিবারের বার্ষিক আয় আট লক্ষের বেশি হতে পারে না।
০৯২০
কিন্তু পূজার বাবার নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ কোটি এবং বার্ষিক আয় ৪৩ লক্ষ। এর পরেই তাঁর ওবিসি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
১০২০
অন্য দিকে, ইউপিএসসি-র তরফে নিজের প্রতিবন্ধকতা প্রমাণ করতে পূজাকে একটি বাধ্যতামূলক মেডিক্যাল পরীক্ষায় বসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, দিল্লি এমস থেকে সেই পরীক্ষা করাতে হবে।
১১২০
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রথম বার তাঁকে এমসে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোভিড আক্রান্ত জানিয়ে সেই পরীক্ষা এড়িয়ে যান পূজা। এর পর তাঁকে আরও পাঁচ বার পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি বারই কোনও না কোনও অজুহাত দেখিয়ে তিনি সেই পরীক্ষা এড়িয়ে যান।
১২২০
জানা গিয়েছে, এর পর একটি প্রাইভেট জায়গা থেকে নিজের মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট কমিশনে জমা দেন পূজা। ওই রিপোর্টে অবশ্য তাঁকে প্রতিবন্ধী বলেই দাবি করা হয়েছিল।
১৩২০
এর পর পূজার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশন কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয় কমিশন এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ট্রাইব্যুনাল পূজার বিরুদ্ধে রায় দেয়। তবুও, কোনও ভাবে সিভিল সার্ভিসের নিয়োগপত্র হাতে পান পূজা।
১৪২০
৩ জুন প্রশিক্ষণের জন্য পুণের জেলাশাসকের দফতরে শিক্ষানবিশ আমলা হিসাবে যোগ দেন পূজা। তবে কাজে যোগ দিয়েই বিতর্ক তৈরি করেন। পূজার ঊর্ধ্বতন অফিসার পুণের জেলাশাসক সুভাষ দিওয়াসের অভিযোগ, পূজা এমন কিছু সুবিধা দাবি করেছিলেন, যা একজন শিক্ষানবিশ আমলাকে দেওয়া হয় না। যেমন, ভিআইপি নম্বরপ্লেট লাগানো সরকারি গাড়ি, সরকারি বাংলো, অফিশিয়াল চেম্বার, কাজে সাহায্য করার জন্য কিছু অধস্তন কর্মী, এমনকি এক জন কনস্টেবলও চেয়েছিলেন পূজা।
১৫২০
পাশাপাশি, সুভাষের অনুমতি ছাড়াই তাঁর অফিস দখল করার এবং অফিসের জিনিসপত্র সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, তাঁর গাড়িতে ভিআইপি স্টিকার লাগানো হয়েছে। গাড়ির ছাদে লাগানো হয়েছে মন্ত্রীদের মতো লাল-নীল ‘বিকন’ আলো। এমনকি, রাজ্য সরকারের সরকারি বোর্ডও আটকানো হয়েছে গাড়িতে। যা শুধুমাত্র পদস্থ আমলারাই ব্যবহার করতে পারেন।
১৬২০
পূজার বাবা দিলীপরাওয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মেয়েকে সুবিধা পাইয়ে দিতে পুণের জেলাশাসকের অফিসে চাপ সৃষ্টি করছিলেন তিনি।
১৭২০
জেলাশাসকের লেখা অভিযোগের চিঠির ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হয়েছে পূজার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই তাঁর নামে অভিযোগ গিয়েছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যসচিবের কাছে। তাঁকে ‘শাস্তি’ও দেওয়া হয়েছে। পূজাকে বদলি করা হয় পুণে থেকে দূরে ওয়াসিমে একটি আপাত-গুরুত্বহীন পদে।
১৮২০
তবে এর পরেই তাঁর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দাবি, স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ হয়নি তাঁর। বিজয় কুম্ভর নামে এক সমাজকর্মী প্রথম এই দাবি তোলেন। পূজার নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে বিজয় বলেন, ‘‘পূজার বাবার নির্বাচনী হলফনামায় তার সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ কোটি। ১১০ একর কৃষি জমি রয়েছে তাঁর। হিরানন্দানিতে একটি ফ্ল্যাট-সহ মোট সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ৯০০ গ্রাম সোনা, হিরে এবং ১৭ লক্ষ টাকার একটি সোনার ঘড়ি রয়েছে। চারটি গাড়িও রয়েছে। পূজা নিজেই ১৭ কোটির মালিক। এর কি তদন্ত হওয়া উচিত নয়? এই ধরনের আয় কী ভাবে ওবিসির নন-ক্রিমি লেয়ারে পড়তে পারে?’’
১৯২০
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন যে, ইউপিএসসি পাশ করার জন্য পূজা যে নিজেকে প্রতিবন্ধী হিসাবে দাবি করেছিলেন তা মিথ্যা, এবং তাঁর অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার শংসাপত্র ভুয়ো।
২০২০
যদিও এখনও চাকরি বহাল রয়েছে পূজার। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি পূজা। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওয়াসিম জেলায় কাজ করতে যাচ্ছি বলে খুশি। কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। তবে আমি কোনও বিষয়ে কথা বলব না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এই বিষয়ে কথা বলার অনুমতি নেই আমার।’’