US F-35 stealth fighter jet allegedly picked vertical take-off technology from Soviet Russia dgtl
F-35 Stealth Fighter Jet
রুশ প্রযুক্তির সাহায্যে লড়াকু জেট বানিয়ে আস্ফালন! চিনা কায়দায় চুরির দাগ লাগল মার্কিন ‘এফ-৩৫’-এ
পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ শ্রেণির ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি সোভিয়েত রাশিয়ার থেকে চুরি করেছিল আমেরিকা। এ বার যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিনের গায়ে লাগল সেই কালির দাগ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ০৮:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
উল্লম্ব ভাবে ওঠানামা করা থেকে শুরু করে ‘স্টেলথ’ প্রযুক্তি! পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘এফ ৩৫’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের শেষ নেই। লড়াকু জেটটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের আধুনিকতম উদাহরণ বলে বার বার পেশি ফুলিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? না কি চুরিবিদ্যার উপর ভর করে ‘এফ-৩৫’ বানিয়েছে ওয়াশিংটন? এ বার উঠল সেই প্রশ্ন।
০২২১
নিন্দকদের দাবি, অন্তত ২৮ বছর আগে ‘এফ-৩৫’-এর মতো যুদ্ধবিমান তৈরি করে সারা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া। মস্কোর লড়াকু জেটটিও উল্লম্ব ভাবে ওঠানামা করতে পারত। হুবহু না হলেও সেই প্রযুক্তি নকল করেই পরবর্তী কালে ‘এফ-৩৫’ তৈরি করেন মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।
০৩২১
সোভিয়েত আমলে নির্মিত যুদ্ধবিমানটির নাম ছিল ‘ইয়াক-১৪১’। এর নকশা এবং প্রোটোটাইপ তৈরি করে মস্কোর সংস্থা ‘ইয়াকোভলেভ’। মূলত বিমানবাহী রণতরী ‘ইয়াক-৩৮’-এর লড়াকু জেটগুলিকে বদলানোর উদ্দেশ্যেই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানটির জন্ম দিয়েছিল তারা।
০৪২১
‘প্রোডাক্ট ৪৮’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় ‘ইয়াক-১৪১’-এর নকশা তৈরি করেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। কিন্তু, ১৯৯১ সালের অগস্টে গোটা পরিকল্পনাটি থেকে সরে আসে মস্কো। ফলে ব্যাপক ভাবে অত্যাধুনিক লড়াকু জেটটিকে কখনওই তৈরি করতে পারেনি ‘ইয়াকোভলেভ’।
০৫২১
গত শতাব্দীর আশির দশকে উল্লম্ব ভাবে ওঠানামায় সক্ষম যুদ্ধবিমান তৈরিতে নজর দেন সোভিয়েত প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। ছোট বিমানবাহী যুদ্ধপোত এবং সীমান্তবর্তী ঘাঁটিগুলিতে সেগুলিকে মোতায়েনের পরিকল্পনা ছিল রুশ নৌবাহিনীর। অত্যাধুনিক লড়াকু জেটটিকে শব্দের চেয়ে গতিশীল (পড়ুন সুপারসনিক) হিসাবে নির্মাণ করে তারা।
০৬২১
১৯৮৭ সালের ৯ মার্চ এ ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করেন সোভিয়েত প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। ওই দিন প্রথম বার আকাশে ওড়ে ‘ইয়াক-১৪১’। লড়াকু জেটটির উল্লম্ব ভাবে ওঠানামার ক্ষমতা দুনিয়ার সামনে আনেন আন্দ্রেই আলেকজান্দ্রোভিচ। যুদ্ধবিমানটির ককপিটে ছিলেন তিনি।
০৭২১
উল্লেখ্য, পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকেই উল্লম্ব ভাবে ওঠানামায় সক্ষম সুপারসনিক লড়াকু জেট তৈরির পরিকল্পনা করে ফেলে সোভিয়েত। এ ব্যাপারে একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিল ‘ইয়াকোভলেভ’। অবশেষে ১৯৬১ সালে প্রথম সাফল্য পায় মস্কোর সংস্থা।
০৮২১
ওই বছর ‘ইয়াক-৩৬’ নামের একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করে ‘ইয়াকোভলেভ’। ছোট রানওয়েতে ওড়ার ক্ষমতা ছিল ওই লড়াকু জেটের। পরবর্তী দশকগুলিতে ‘ইয়াক-৩৮’ হাতে পায় সোভিয়েত নৌসেনা। সেটা ছিল ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল।
০৯২১
আশির দশকে সোভিয়েত প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা যখন ‘ইয়াক-১৪১’ তৈরিতে হাত দেন, তখন এর কোড নাম রাখা হয় ‘আইটেম-৪৮’। এর ইঞ্জিন নির্মাণের দায়িত্ব অন্য একটি সংস্থাকে দিয়েছিল মস্কো। উল্লম্ব ভাবে ওঠানামার জন্য বিমানের সামনের দিকের অংশটির নকশা করা ছিল সবচেয়ে কঠিন।
১০২১
১৯৮৩ সালের পর ‘ইয়াক-১৪১’-এর প্রোটোটাইপ নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয় ‘ইয়াকোভলেভ’। কিন্তু তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে এর ইঞ্জিন পরীক্ষা করে মস্কো। ঠিক তার পরের বছর যুদ্ধবিমানটির আকাশে ওড়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে সোভিয়েত।
১১২১
১৯৮৯ সালে ‘ইয়াক-১৪১’ প্রথম বার আকাশে উড়লেও সোভিয়েত প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা এর শক্তিতে খুশি হতে পারেননি। ১৯৯০ সালের ১৩ জুন পুরোপুরি উল্লম্ব থেকে অনুভূমিক সুপারসনিক উড়ান নিতে সক্ষম হয় এই লড়াকু জেট। পরের বছর রুশ বিমানবাহী রণতরী ‘অ্যাডমিরাল গোরশকভ’-এর উপর সফল ভাবে অবতরণ করে এই যুদ্ধবিমান।
১২২১
কিন্তু ১৯৯১ সালের ৫ অক্টোবর ঘটে যায় একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা। ওই দিন উল্লম্ব ভাবে অবতরণের সময়ে জ্বালানি ট্যাঙ্ক ফেটে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ‘ইয়াক-১৪১’। কোনও মতে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে প্রাণে বাঁচেন পাইলট। অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের এলাকা।
১৩২১
এই দুর্ঘটনার পর ‘ইয়াক-১৪১’-এর উৎপাদন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় মস্কো। কয়েক দিনের মধ্যে সোভিয়েত ভেঙে গেলে রাজনৈতিক ডামাডোলের মুখে পড়ে রাশিয়া। ফলে পরবর্তী সময়ে এই প্রকল্পকে আর পুনরুজ্জীবিত করতে পারেনি পূর্ব ইউরোপের ‘সুপার পাওয়ার’।
১৪২১
অন্য দিকে এই সুযোগ কাজে লাগায় মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিন। অতি গোপনে ১৯৯১ সালে ‘ইয়াকোভলেভ’-এর সঙ্গে একটি চুক্তি সেরে ফেলে তারা। নিন্দকেরা বলেন, পরবর্তী দশকগুলিতে মস্কোর কোম্পানি থেকেই বিমানের উল্লম্ব ভাবে ওঠানামার প্রযুক্তিটি হস্তগত করে ‘এফ-৩৫’ নির্মাণকারী সংস্থা।
১৫২১
১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ‘ইয়াকোভলেভ’-এর সঙ্গে হওয়া চুক্তি গোপন রাখে লকহিড মার্টিন। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ইয়াক-১৪১’-এর আরও প্রোটোটাইপ তৈরির জন্য বিপুল টাকা রুশ সংস্থাটিকে দিয়েছিল ওই মার্কিন কোম্পানি। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ফার্নবোরো এয়ারশোয়ে ফের প্রদর্শিত হয় সোভিয়েত যুগের লড়াকু জেট।
১৬২১
লকহিড মার্টিনের তরফে অবশ্য ‘ইয়াক-১৪১’-এর প্রোটোটাইপ তৈরির জন্য ‘ইয়াকোভলেভ’কে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাটির দাবি, তাদের তৈরি ‘এফ-৩৫’-এর নকশা সোভিয়েত যুগের লড়াকু জেটটির থেকে অনেকটাই আলাদা। এক কথায় প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তারা।
১৭২১
বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম দামি যুদ্ধবিমান হল ‘এফ-৩৫’। এর প্রযুক্তি হাতছাড়া করতে নারাজ আমেরিকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন সফরে গেলে এই লড়াকু জেটের প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে সরাসরি প্রস্তাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পরই নতুন বিতর্কের মুখে পড়ে ‘এফ-৩৫’।
১৮২১
আমেরিকা ভারতকে ‘এফ-৩৫’ বিক্রির প্রস্তাব দিতেই যুদ্ধবিমানটি সম্পর্কে একটি অদ্ভুত তথ্য জনসমক্ষে আনে জার্মানি। ইউরোপের দেশটির দাবি, লকহিড মার্টিনের লড়াকু জেটে রয়েছে একটি ‘কিল সুইচ’। এটি চালু করে দিলে হঠাৎ করে রণক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে এই বিমান।
১৯২১
বার্লিন জানিয়েছে, ‘এফ-৩৫’-এর কিল সুইচ সব সময়েই থাকবে আমেরিকার হাতে। ফলে ইচ্ছামতো যুদ্ধবিমানটিকে ব্যবহার করা যাবে এমনটা নয়। এর সাহায্যে ‘বন্ধু’ দেশগুলিকে নিজের আঙুল নাচানোর পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াশিংটনের। জার্মানির ওই দাবির পর ‘এফ-৩৫’ কেনার ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশ।
২০২১
‘এফ-৩৫’-এর নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিন অবশ্য জানিয়েছে, এই ধরনের কোনও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটে ব্যবহার করা হয়নি। অন্য দিকে এই বিমানটি বিক্রির ব্যাপারে ওয়াশিংটনের থেকে কোনও সরাসরি প্রস্তাব আসেনি বলে জানিয়েছেন ভারতের বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ।
২১২১
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বার বার বিতর্কের মুখে পড়ায় ‘এফ-৩৫’-এর বিক্রি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যুদ্ধবিমান নির্মাণে এত দিন শুধুমাত্র চিনের বিরুদ্ধেই উঠছিল প্রযুক্তি চুরি বা নকল করার অভিযোগ। এ বার সেই কালির দাগ লাগল মার্কিন সংস্থা লকহিড মার্টিনের গায়েও।