Aindrila Sharma Death: The journey & struggle of the Bengali Actress dgtl
Aindrila Sharma Death
ঐন্দ্রিলার যুদ্ধ শেষ, কঠিন লড়াই লড়ে গেল মেয়েটা, এক প্রতিভাময়ীর সংক্ষিপ্ত জীবনের ‘ইতি’বৃত্ত
মৃত্যুকে প্রায় স্পর্শ করেও ঐন্দ্রিলা ফিরে ফিরে এসেছেন। এক বার নয়, বার বার। পর পর দু’বার শরীরে কামড় বসানো ক্যানসারকে দাঁতে দাঁত চেপে যুদ্ধ করে হারিয়ে দিয়েছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ১৩:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
‘অলৌকিক’ কিছু ঘটল না। থেমে গেল মৃত্যুর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি যুদ্ধ। বাঁচার লড়াইয়ের এক অদম্য উদাহরণ গড়ে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা চলে গেলেন চিরঘুমের দেশে।
ছবি: ফেসবুক।
০২২৪
মৃত্যুকে প্রায় স্পর্শ করেও ঐন্দ্রিলা ফিরে ফিরে এসেছেন। এক বার নয়, বার বার। পর পর দু’বার শরীরে কামড় বসানো ক্যানসারকে দাঁতে দাঁত চেপে যুদ্ধ করে হারিয়ে দিয়েছিলেন ছিপছপে গড়নের মেয়েটি।
ছবি: ফেসবুক।
০৩২৪
গত ১ নভেম্বর আবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় ঐন্দ্রিলাকে। এ বার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। কাছের মানুষ থেকে শুরু করে দূরে থাকা শুভানুধ্যায়ীরা আশায় ছিলেন, তৃতীয় বারও অসাধ্যসাধন করবেন ঐন্দ্রিলা। আবার ফিরে আসবেন। ফিরে আসবেন সুস্থ জীবনে। ফিরে আসবেন অভিনয়ে। কিন্তু তা হল না।
ছবি: ফেসবুক।
০৪২৪
গত সোমবার (১৪ নভেম্বর) থেকে আচমকাই শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে অভিনেত্রীর। বুধবার বার বার হার্ট অ্যাটাক। বাঁচিয়ে রাখতে ভেন্টিলেশনের মাত্রা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সব রকমের চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো গেল না তাঁকে।
ছবি: ফেসবুক।
০৫২৪
অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা বহরমপুরের মেয়ে ‘মিষ্টি’ মাঝপথেই তাঁর স্বপ্নের সফরে দাঁড়ি টানলেন। বা বলা ভাল তাঁকে দাঁড়ি টানতে বাধ্য করল তাঁর মারণরোগ।
ছবি: ফেসবুক।
০৬২৪
আর তিন মাস পরেই ফেব্রুয়ারি মাসে ঐন্দ্রিলার ২৫তম জন্মদিন। ১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। বাবা উত্তম শর্মা মুর্শিদাবাদের হাসপাতালের চিকিৎসক। মা শিখা শর্মা। তিনি একটি নার্সিং হস্টেলের ইন-চার্জ।
ছবি: ফেসবুক।
০৭২৪
ছোট থেকে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, ঐন্দ্রিলা প্রথাগত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করেছিলেন। কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভর্তি হন। যদিও সেই পড়াশোনা অসুস্থতার জন্য শেষ হয়নি।
ছবি: ফেসবুক।
০৮২৪
শরীরে যে মারণরোগ বাসা বেঁধেছে, সে কথা ঐন্দ্রিলা জানতে পেরেছিলেন তাঁর ১৮তম জন্মদিনেই। দিনটা ছিল ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ঐন্দ্রিলা তখন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তার পর সাত বছর ধরে চলেছে ঐন্দ্রিলার যুদ্ধ। কখনও ক্যানসারের সঙ্গে। কখনও নিজের কেরিয়ারের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে। এবং সেই সব যুদ্ধে নানা ওঠাপড়ার মধ্যেও তিনি জিতছিলেন।
ছবি: ফেসবুক।
০৯২৪
প্রথম ক্যানসার ধরা পড়ার পর দিল্লির এমসে চিকিৎসা হয়েছিল। সে বার বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জায় কর্কট রোগ ধরা পড়েছিল তাঁর। কেমোর পর কেমো, একের পর এক ইঞ্জেকশন, দিল্লির চিকিৎসকেরা প্রথমে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, হাতে আর মাত্র ছ’মাস। কিন্তু টানা দেড় বছর চিকিৎসা চলার পর ২০১৬ সালে সুস্থ হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী।
ছবি: ফেসবুক।
১০২৪
২০১৬ থেকে ২০২১— এই পাঁচ বছর শরীর মোটামুটি ঠিকঠাকই ছিল। ছোটবেলায় আয়নার সামনে নাচের মুদ্রা অভ্যাস করতে করতে অভিনেত্রী হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা টলিউডের সদর পেরিয়ে টেলিভিশনের উঠোনে বিচরণ করছিল ক্রমশ। ধীরে ধীরে ডানাও মেলছিল।
ছবি: ফেসবুক।
১১২৪
২০১৭ সালে ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের হাত ধরে টেলিপর্দায় হাতেখড়ি। তার পর ‘জিয়নকাঠি’ ধারাবাহিকেও তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে। পাশাপাশি ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছেন ঐন্দ্রিলা।
ছবি: ফেসবুক।
১২২৪
ঐন্দ্রিলার এই সাফল্য প্রত্যাশিতই ছিল তাঁর পরিচিতদের কাছে। ঐন্দ্রিলার স্কুলের দিদিমণিরা জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই গুণী মেয়ে বলে নাম ছিল। ভূগোল দিদিমণি সঞ্চিতা তিওয়ারির কথায়, ‘‘পড়াশোনায় ভাল তো ছিলই— নাচ, গান, আঁকা, এমনকি সুন্দর আবৃত্তিও করতে পারত ও।’’
ছবি: ফেসবুক।
১৩২৪
স্কুলের প্রিয়পাত্রী ঐন্দ্রিলা নাচের শিক্ষিকা রেবা মজুমদারেরও প্রিয় ছাত্রী ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও নাচ দু’বার দেখাতে হত না ঐন্দ্রিলাকে।’’ সেই ঐন্দ্রিলা অভিনয়ে মনোনিবেশ করলে যে তাতেও কৃতী হবেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিল না কারও। ঐন্দ্রিলাও সেই আশার মান রেখেছিলেন। কিন্তু পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল অসুস্থতা।
ছবি: ফেসবুক।
১৪২৪
২০১৬ সালে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ২০২১ সালে আবার ঐন্দ্রিলার জীবনের ছন্দপতন শুরু হয়। সেটাও ফেব্রুয়ারি মাস। জন্মদিনের দিন দশেকের মধ্যে আচমকাই ডান দিকের কাঁধে যন্ত্রণা শুরু হয় অভিনেত্রীর।
ছবি: ফেসবুক।
১৫২৪
প্রথমে ভেবেছিলেন, সাধারণ কোনও কারণে ব্যথা হয়ে থাকবে। কিন্তু ব্যথা না কমায় আবার হাসপাতাল। পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা যায়, আবার কর্কট রোগ দানা বেঁধেছে শরীরে।
ছবি: ফেসবুক।
১৬২৪
ঐন্দ্রিলারা জানতে পারেন, তাঁর ডান দিকের ফুসফুসে একটি ১৯ সেন্টিমিটারের টিউমার হয়েছে। আবারও কেমো, আবারও যন্ত্রণা! তবে এ বার প্রথম দিকে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, আর চিকিৎসা করাতে চান না।
ছবি: ফেসবুক।
১৭২৪
মা, বাবা, দিদি এবং বন্ধু-অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর চেষ্টায় ঐন্দ্রিলা রাজি হন আবার লড়াই করার জন্য। সে বারও তাঁকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার কথা জোর দিয়ে জানাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। বরং ঐন্দ্রিলা আদৌ অপারেশনের টেবিল থেকে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়েই সন্দেহ ছিল।
ছবি: ফেসবুক।
১৮২৪
কী করতে চান, সেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল ঐন্দ্রিলাকেই। প্রথমে হাল ছাড়লেও ঐন্দ্রিলা ঠিক করলেন, আবার লড়াই করবেন। আবারও জোরের সঙ্গে মুখোমুখি হবেন ক্যানসারের। বেঁচে থাকার তুমুল ইচ্ছে তখন চেপে বসেছিল। ঐন্দ্রিলা সিদ্ধান্ত নেন, অস্ত্রোপচার করাবেন।
ছবি: ফেসবুক।
১৯২৪
ফলে আবার যুদ্ধ। যন্ত্রণা। তবু সব বাধা পেরিয়ে আরও একবার ফিরে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলা। হারিয়ে দিয়েছিলেন ক্যানসারকে।
ছবি: ফেসবুক।
২০২৪
গত এক বছরে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন। ‘ভাগাড়’ ওয়েব সিরিজ়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ঐন্দ্রিলাকে। আরও একটি সিরিজের শ্যুটিংয়ের জন্য গোয়া যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। এর মধ্যেই আবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ছবি: ফেসবুক।
২১২৪
গত ১ নভেম্বর রাতে আচমকাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয় অভিনেত্রীর। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। তবে বয়স কম হওয়ায় সুস্থ হয়ে ওঠা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তাঁরা।
ছবি: ফেসবুক।
২২২৪
কিন্তু অবস্থার বিশেষ উন্নতি হচ্ছিল না। প্রথমে শরীরের একটা দিক অসাড় হয়ে গিয়েছিল। পরে কোমায় চলে যান অভিনেত্রী। মাঝখানে তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হলেও, পরে আবার ভেন্টিলেশনেই ফেরাতে হয় তাঁকে।
ছবি: ফেসবুক।
২৩২৪
ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থার খবর তাঁর অনুরাগীদের জানাচ্ছিলেন তাঁর সঙ্গী সব্যসাচী। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি দিনে তিন বার করে গল্প করি ঐন্দ্রিলার সাথে। গলা চিনতে পারে, হার্টরেট একশো তিরিশ-চল্লিশে পৌঁছে যায়, দরদর করে ঘাম হয়, হাত মুচড়িয়ে আমার হাত ধরার চেষ্টা করে। প্রথম প্রথম ভয় পেতাম, এখন বুঝি ওটাই ফিরিয়ে আনার এক্সটার্নাল স্টিমুলি।’’
ছবি: ফেসবুক।
২৪২৪
গত ১৪ নভেম্বর সেই সব্যসাচীই ফেসবুকে লেখেন, ‘‘অলৌকিকের প্রার্থনা করুন। দৈবের জন্য প্রার্থনা করুন।’’ অনুরাগীরাও চিন্তায় পড়েছিলেন। ২৪ বছরের মেয়েটির সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু ঐন্দ্রিলা এ বার আর ফিরে এলেন না। ‘মিষ্টি’ হাসিটা রয়ে গেল ফ্রেমবন্দি হয়ে।