10 controversies happened in ICC World Cup Cricket dgtl
ICC World Cup Cricket
শুধু কি টাইম্ড আউট? রহস্যমৃত্যু, নির্বাসন, বিস্ফোরণ, বার বার বিতর্কের সাক্ষী থেকেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট
শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচে টাইম্ড আউট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিতর্ক এই প্রথম নয়। বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছে বিশ্বকাপ। এ রকমই ১০টি বিতর্ক তুলে ধরল আনন্দবাজার অনলাইন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
সোমবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচে একটি আউট নিয়ে তৈরি হল তুমুল বিতর্ক। শ্রীলঙ্কার ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ একটিও বল না খেলে আউট হয়ে যান। মাঠে নেমে নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে স্ট্রাইক নেওয়ায় ফিরতে হয় তাঁকে। একে ‘টাইম্ড আউট’ বলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগে কখনও কোনও ব্যাটার এ ভাবে আউট হননি।
০২১৫
ম্যাথেউজকে আউটের আবেদন জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক শাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের আবেদনের পরে অনেক ক্ষণ ম্যাথেউজ, শাকিব ও আম্পায়ারদের মধ্যে আলোচনা হয়। তার পর আম্পায়ার ম্যাথেউজকে জানান যে ক্রিকেটের নিয়মে তিনি আউট। সেই কারণে মাঠ ছাড়তে হয় ম্যাথেউজকে।
০৩১৫
আউট হয়ে ফেরার সময় রাগে হেলমেট ছুড়ে ফেলেন ম্যাথেউজ। পরে তিনি এই নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসও এই ঘটনায় সমালোচনা করেন শাকিব ও বাংলাদেশ দলের। অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারও বাংলাদেশ দলের সমালোচনা করেন।
০৪১৫
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিতর্ক এই প্রথম নয়। বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছে এক দিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা। এ রকমই ১০টি বিতর্ক তুলে ধরল আনন্দবাজার অনলাইন।
০৫১৫
১৯৯২ ‘রেন রুল’-এর নিয়মে বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের। তার ঠিক এক বছর আগে ইডেনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। সে বারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৪৫ রান তোলে। দক্ষিণ আফ্রিকার যখন জেতার জন্য ১৩ বলে ২২ রান দরকার তখন বৃষ্টি নামে।
০৬১৫
খেলা যখন শুরু হয়, তখন প্রোটিয়াদের (দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের এই নামে ডাকা হয়) লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ বলে ২২ রান। কিছু ক্ষণের মধ্যেই এই লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়ায় ১ বলে ২২ রান। সে বারের নিয়ম ছিল, বৃষ্টি হলে প্রথমে ব্যাট করা দল তাদের পছন্দ মতো ওভারগুলি বাদ দেবে। ইংল্যান্ড যে ওভারগুলিতে কম রান করেছিল স্বাভাবিক ভাবেই সেই ওভারগুলি বাদ দেয়। সেই কারণে এ রকম অদ্ভুত টার্গেট হয় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। এই নিয়ম এখন আর না থাকলেও প্রায়ই সমালোচনা হয় ৩১ বছর আগের সেই নিয়মের।
০৭১৫
চার বছর পর ১৯৯৬ সালে বিতর্ক হয় ইডেনে। সেটিও সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল। ভারত মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। জেতার জন্য ২৫২ রান তাড়া করতে নেমে ভারত ১ উইকেটে ৯৮ রান তুলে ফেলেছিল। সমস্যা শুরু হয় সচিন তেন্ডুলকর ৬৫ রানে আউট হওয়ার পরেই। সনৎ জয়সূর্য ফেরান সচিনকে। এর পরই ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ধস নামে। পরের ৬টি উইকেট পড়ে যায় ২২ রানে। ইডেনের কিছু সংখ্যক দর্শক ক্ষোভে, হতাশায় মাঠে জলের বোতল ছুড়তে শুরু করেন। অনেক চেষ্টা করেও তাঁদের থামানো যায়নি। ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
০৮১৫
সেই বিশ্বকাপেই তার আগে আরও একটি বিতর্ক হয়। ভারত ছাড়াও সে বার বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ঠিক আগে কলম্বোয় বোমা বিস্ফোরণ হয়। নিরাপত্তার কারণে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে খেলতে চায়নি অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে চলে যায়। শ্রীলঙ্কা যে নিরাপদ, সেটি প্রমাণ করার জন্য উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সেখানে একটি ম্যাচের আয়োজন করা হয়। সেই ম্যাচ নির্বিঘ্নে হয়। তবু দুই দলকে খেলানো যায়নি। ওই দু’টি ম্যাচের পয়েন্ট শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দেওয়া হয়।
০৯১৫
২০০০ সালে ম্যাচ গড়াপেটা কাণ্ডে বড় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন হ্যানসি ক্রোনিয়ে। কিন্তু তার আগের বছর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন অধিনায়ক। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ‘ইয়ারপিস’ লাগিয়ে নেমেছিলেন এই ক্রিকেটার। খেলা চলাকালীন কোচ বব উলমার যাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারেন, সেই কারণেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিষয়টি প্রথম নজরে পড়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি দুই আম্পায়ার স্টিভ বাকনর ও ডেভিড শেফার্ডকে জানান। ক্রোনিয়েকে কান থেকে যন্ত্র খুলে ফেলতে হয়। কাকতালীয় হলেও ক্রোনিয়ে এবং উলমার দু’জনেই প্রয়াত। দু’জনেরই মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে।
১০১৫
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন তোলপাড় পড়ে যায় ক্রিকেটবিশ্বে। নিষিদ্ধ ড্রাগ মডিউরেটিক নেওয়ার অভিযোগে নির্বাসিত হতে হয় শেন ওয়ার্নকে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও তাঁর মূত্রের ‘বি’ নমুনাও পজিটিভ বেরোয়। ওয়ার্নকে ছাড়াই অবশ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া।
১১১৫
সে বারের বিশ্বকাপে রাজনৈতিক বিতর্কও হয়। জিম্বাবোয়ের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রবার্ট মুগাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হন সে দেশের তৎকালীন অধিনায়ক অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার এবং পেসার হেনরি ওলোঙ্গা। দু’জনেই জানিয়ে দেন তাঁদের দেশে ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ হওয়ায় তাঁরা গোটা প্রতিযোগিতায় কালো আর্ম ব্যান্ড পরে নামবেন। সেই বিশ্বকাপের পরে তাঁদের আর দেশের হয়ে খেলা হয়নি।
১২১৫
চার বছর পরে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া বিশ্বকাপও বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারেনি। আয়ারল্যান্ডের মতো দলের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। বিতর্ক শুরু হয় তার পরের দিন। পাকিস্তান দল যে হোটেলে ছিল, সেখানকার ঘরে পাওয়া যায় কোচ বব উলমারের মৃতদেহ। জামাইকার পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে। প্রায় সব ক্রিকেটার এবং কর্তাদের জেরা করা হয়। সেই মৃত্যুরহস্যের আজও কিনারা হয়নি। ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে অনেক পরে বিবৃতি জারি করে পুলিশ।
১৩১৫
সেই বিশ্বকাপে বিতর্ক হয় ফাইনাল ম্যাচেও। মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু কেনসিংটন ওভালে ফ্লাডলাইট ছিল না। যখন আলো একেবারেই কমে এসেছিল, আম্পায়াররা দুই দলের ক্রিকেটারদের বলেন, রিজার্ভ ডে-তে খেলতে। কিন্তু তত ক্ষণে ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়ম বলবৎ হয়ে গিয়েছে। দুই অধিনায়ক রিকি পন্টিং এবং মাহেলা জয়বর্ধনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন আম্পায়ার ও অন্য ম্যাচ অফিশিয়ালরা। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শেষ তিন ওভার শুধু স্পিনাররাই করবেন। তুমুল বিতর্কের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। জঘন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ফাইনাল ম্যাচের সব আম্পায়ার ও অফিশিয়ালদের সেই বছরই টি২০ বিশ্বকাপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
১৪১৫
২০১১ সালের বিশ্বকাপেও বিতর্ক হয় ফাইনাল ম্যাচে। টসের সময় শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা ‘হেড’ বলেন। কিন্তু মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের প্রবল চিৎকারে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি পরিষ্কার করে শুনতে পাননি। নিজেই টস জিতেছেন ভেবে নিয়ে ধোনি ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। সাঙ্গাকারা আপত্তি জানান। দ্বিতীয় বার টস করতে হয়। শ্রীলঙ্কা টস জেতে। বিশ্বকাপ ওঠে ধোনির হাতে।
১৫১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও বিতর্ক হয় বাংলাদেশকে নিয়ে। সে বার তারা কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে রুবেল হোসেনের বল ‘নো’ ডাকেন আম্পায়ার। উচ্চতার জন্য ‘নো’ ডাকা হয়। তা না হলে রোহিত শর্মা আউট হয়ে যেতেন। সে ক্ষেত্রে ভারত হেরে যেতে পারত। বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তখন আইসিসির প্রেসিডেন্ট ছিলেন মুস্তফা কামাল। তার আগে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও দায়িত্ব সামলেছিলেন। তিনি বলেন, আম্পায়ারিং হতাশাজনক। পদত্যাগ করেন কামাল। বাংলাদেশ লিখিত অভিযোগ জানায় আইসিসির কাছে।