প্রতীকী ছবি।
ঠিক করেছেন জীবন বিমা কিনবেন। একটি নামী সংস্থার বিমা বেছেও ফেলেছেন যা আপনার চাহিদার সঙ্গে লাগসই হবে। কিন্তু ঠিক এই সময়ে আপনার এক প্রতিবেশী উপযাচক হয়ে এগিয়ে এলেন। বললেন, “এটা নিচ্ছেন কেন? অমুক সংস্থার বিমা আপনাকে একই রকম সুবিধা দেবে কিন্তু প্রিমিয়াম অনেক কম!” শুনে তো আপনার চোখ চক চক করে উঠল। দৌড় লাগালেন সেই সংস্থার কাছেই। আর তারপরই ঘটল সেই দুঃসহ ট্র্যাজেডি। প্রতিবেশী হঠাৎ করে মারা গেলেন। আর আপনি হাড়ে হাড়ে টের পেলেন যে কম টাকা প্রিমিয়ামের লোভে পড়ে এখন বিমা সংস্থার কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের জন্য ছোটাছুটি করে জুতোর সুকতলা কেমন ক্ষয়ে যাচ্ছে!
শুধু কি তাই? সংস্থার আর্থিক হালও যাচাই করা জরুরি। আমরা বিমা কিনে নিশ্চিন্তে থাকি, কিন্তু বিমা সংস্থার হাল যদি খারাপ হয়, তাহলে জীবনের ঝুঁকির জন্য বিমা কিনে তারপর সেই টাকা বাঁচাতে অন্য বিমা কেনার রাস্তায় না হাঁটতে হয়!
হ্যাঁ। একই বিমার জন্য বিভিন্ন সংস্থার প্রিমিয়ামের হেরফের হতে পারে। তাই সেটা অবশ্যই দেখবেন। কিন্তু আগে দেখুন-
ক্লেম সেটলমেন্ট রেশিও
যে কোম্পানির বিমা কিনবেন আগে দেখুন সেই সংস্থা আপনার দাবি মেটাতে কতটা আগ্রহী। এটা খুব জরুরি। কারণ, টাকা চোকাতে সব সংস্থাই একই ভাবে আগ্রহী হয় না। আর এই কারণেই ক্লেম সেটলমেন্ট রেশিও-র হেরফের আছে। এটা শতাংশে হিসাব করা হয়। কোনও বিমা সংস্থা ক্লেমের কত শতাংশ মেনে নেয় তার হিসাব দেয় এই অঙ্ক। যে সংস্থার এই রেশিও বেশি তার কাছ থেকে বিমা কেনাই যুক্তিযুক্ত। এই হিসাব নেটে সার্চ করলেই পাওয়া যায়। অথবা irda.gov.in-এ গেলেই সংস্থা ধরে এই রেশিও-র হদিশ মিলবে।
আরও একটা কথা মাথায় রাখুন। নতুন সংস্থার ক্ষেত্রে এই রেশিও ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়া একটু সমস্যার। নতুন সংস্থার ক্লেম অত বেশি না-হওয়ারই কথা। তাই এই রেশিও ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়া নতুন সংস্থার ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নাও হতে পারে।
দেখুন সলভেন্সি রেশিও
আপনি বিমা কিনলেন, কিন্তু সংস্থার হাল এমন যে প্রয়োজনে আপনার টাকা তারা ফেরত দিতে পারল না। ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও আমরা ভাবতাম ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখেছি, টাকা তোলার চাহিদার মুখে দাঁড়িয়ে সমস্যায় পড়েছে ব্যাঙ্ক। আমাদের দেশে অবশ্য প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের হস্তক্ষেপে, অন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে গিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। সঞ্চয়কারী বেঁচে গেলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে কিন্তু টাকা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ কিছু দিন।
বিমা সংস্থাগুলিও কিন্তু এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএ এবং অর্থ মন্ত্রকের কড়া নজর রয়েছে এই সব সংস্থাগুলির উপর, তবুও সাবধানের মার নেই। সলভেন্সি রেশিও (স্বচ্ছলতার অনুপাত) আপনাকে বলে দেবে সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য কী রকম। ভাবুন এমন একটা পরিস্থিতির কথা যখন একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বহু লোকের ক্লেম জমা পড়ল একই সঙ্গে। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না হলে কিন্তু বিমা মেটানোর এই বিপুল চাপ নিতে পারবে না সংস্থাটি । এই অনুপাত আপনাকে বলে দেয় কোন সংস্থা কতটা স্বচ্ছল। আইআরডি-এর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বিমা সংস্থাকে অন্তত ১.৫ স্বচ্ছলতা অনুপাত বজায় রাখতেই হবে। তাই আপনার কিন্তু অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে যে সংস্থার বিমা কিনছেন এই অনুপাতে অন্যদের তুলনায় সেই সংস্থার অবস্থান কোথায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy