Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিল্পচর্চায় সুন্দরবনকে ছুঁয়ে থাকার ইচ্ছে

‘ম্যানগ্রোভ’ নামে অভিহিত দলটির সকলেই যে এখন সুন্দরবনবাসী, তা নয়। জন্মসূত্রে, কর্মক্ষেত্রে— কোনও না কোনও ভাবে প্রায় সকলেই সেখানকার মাটির টান ও সম্পর্ককে লালিত করেছেন। অনেকেরই কাজে প্রান্তিক জীবন যাপনের অঙ্গ হিসেবে তাঁদের শিল্প সৃষ্টির মূল ধারাটি কিন্তু ছিন্ন হয়নি। তবে অতি দুর্বল কিছু কাজ কিন্তু প্রদর্শনীকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে। এখানেই শিল্পকর্ম নির্বাচনের ত্রুটিগুলি চোখে পড়ে যায়। ক্যাটালগে মুদ্রিত অনেক কাজ ‘প্রদর্শনী’তেই ‘নেই’।

বর্ণিল: ম্যানগ্রোভ দলের প্রদর্শনীর কাজ

বর্ণিল: ম্যানগ্রোভ দলের প্রদর্শনীর কাজ

অতনু বসু
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৫
Share: Save:

আয়তনে ছ’লক্ষ এক হাজার সাতশো হেক্টর, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এই সুন্দরবন। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতে বারবার উঠে আসা সুন্দরবন ভ্রমণের হাতছানি ক’জন এড়াতে পারেন! সেই সুন্দরবনেরই চিত্র-ভাস্কর্য সম্পর্কিত একটি শিল্পী সংগঠনের কুড়ি জনের সম্মিলিত প্রদর্শনীটি অ্যাকাডেমিতে সদ্য শেষ হল। ‘ম্যানগ্রোভ’ নামে অভিহিত দলটির সকলেই যে এখন সুন্দরবনবাসী, তা নয়। জন্মসূত্রে, কর্মক্ষেত্রে— কোনও না কোনও ভাবে প্রায় সকলেই সেখানকার মাটির টান ও সম্পর্ককে লালিত করেছেন। অনেকেরই কাজে প্রান্তিক জীবন যাপনের অঙ্গ হিসেবে তাঁদের শিল্প সৃষ্টির মূল ধারাটি কিন্তু ছিন্ন হয়নি। তবে অতি দুর্বল কিছু কাজ কিন্তু প্রদর্শনীকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে। এখানেই শিল্পকর্ম নির্বাচনের ত্রুটিগুলি চোখে পড়ে যায়। ক্যাটালগে মুদ্রিত অনেক কাজ ‘প্রদর্শনী’তেই ‘নেই’।

জলরঙে দীপাঞ্জন রায়ের হাতটি বেশ। তীরে বজরা বা বড় নৌকো তৈরির দৃশ্যে রং চাপানো ও স্বচ্ছতাকে সন্তর্পণে আগলে রেখে, এক দিকচিহ্নহীন দূরত্ব তৈরি করেছেন। অনেকটা আলো, সুন্দরবনের নৈসর্গিক জলাশয় ও জমির বিস্তৃতি, আকাশ, মানুষ... সব মিলিয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য ও তুলির ব্যবহারও চমৎকার। সেই সঙ্গে অত্যন্ত স্বল্প রঙের নম্র ব্যবহারও চোখে পড়ে। অ্যাক্রিলিকে ক্যানভাসেও কাজ করেছেন, সেখানে আবার বড্ড কাঠিন্য এসে গিয়েছে, ওই গাঢ় সবুজের ব্যবহার পুরোটা মার খাচ্ছে।

মণিমোহন হালদার ছবি তৈরির উপকরণ, বিশেষত রূপারোপ ও বিষয়কে জটিল করেছেন। অনেক সংযম দরকার ছিল। প্রথমত বর্ণ বিশ্লেষণ, সেই সঙ্গে অ্যারেঞ্জমেন্ট, এখানেই আটকে গিয়েছেন। রূপকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সব জড়িয়ে একে অন্যের ঘাড়ে চেপে বসেছে। তাঁর স্টাইলের আধুনিকীকরণ তাই বস্তু-অবস্তুর ব্যাপক সমাহারে ভারাক্রান্ত। কাজ আরও ভাল হত, যদি স্পেসকে খানিকটা শূন্যতায় রাখতেন। ডিজ়াইনধর্মিতায় তাই পেন্টিং কোয়ালিটি হারিয়ে যাচ্ছে। স্পেস ও পরিমিত রূপারোপ নিয়ে ভাবতে হবে। কাজ হিসেবে মন্দ নয়।
বৈদ্যনাথ বোলদে এখানে কালি ও কাগজে যে কাজ করেছেন, সেই ‘মুন ক্যাচার’ বা ‘ফার্মার ফ্যামিলি’ পুরোটাই ঈষৎ বৃহৎ সচিত্রকরণ যেন! অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছবি হয়ে উঠতে পারেনি। ড্রয়িং হিসেবেও অন্য ভাবে উপস্থাপন করা যেত।

অরূপ মণ্ডলের ‘নেচার গিফ্‌ট’ দ্রুত ব্রাশিংয়ে করা অ্যাক্রিলিকের কাজ। আরও ধরে করলে অন্য রকম হত। সাদাকালো ‘মুনলাইট ফিশিং’ যেন নাটকের দৃশ্য, চাঁদের পাশে বলয়হীন অন্ধকার চোখে লাগে।

তন্ময় হালদারের কাজ মনে পড়ায় সচিত্রকরণ। দুর্বল কাজ করেছেন রানা সমাদ্দার, জগদীশ হালদার। পটকে বহুবর্ণের সমারোহে একটি পরিবেশ রচনা করতে পারেন বাবলু প্রামাণিক। তবে অ্যাক্রিলিকের গুণাগুণ তাঁকে সাহায্য করেছে। তবে সুন্দরবনের গহন অরণ্য-জল-আলো-অন্ধকারের রোমাঞ্চকে তিনি আরও সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতে পারতেন। স্প্যাচুলা দিয়ে যেমন খুশি নিসর্গকে দাঁড় করাতে গিয়ে দুর্বলতাকেই প্রকট করেছেন বিশ্বজিৎ জানা।

বরাবর ভাল কিছু কাজ অতীতে দেখা গিয়েছে সত্যব্রত কর্মকারের। এ বার ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে করেছেন নীল আকাশ, হেলানো বড় কালো-লালচে বাদামি নৌকো, প্রান্তিক মানুষের জল-জীবনের আখ্যানপর্বের দৈনন্দিন চিত্র। মেঘলা আকাশের ছাই-সাদা বর্ণের নীচে সার দিয়ে দাঁড়ানো বিশাল নৌকোর শ্রেণি, দূরের নীলিমায় মেশা নদীর শূন্যতার সামনে আলোকিত তীর, ঢালু হয়ে নেমে যাওয়া জমি, প্রান্তিক মানুষ মগ্ন তাঁদের কাজে। বর্ণ ব্যবহারে অপরিসীম ব্রাশের ঘষামাজায় জল-আকাশ-জমির বৈশিষ্ট্য, নৈঃশব্দ্য, ধূসরতা, আলো ও আশ্চর্য নৈসর্গিক এক মনোমুগ্ধকর পরিস্থিতিকেই উজ্জ্বলতায় জানান দিচ্ছে। টুকরো ব্রাশিংয়ে ডিটেলসকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

পেন্টিং কোয়ালিটি রাখতে গিয়ে ক্যানভাসে স্পেসের শূন্যতা প্রকট হয়েছে সুশান্ত বড়ালের কাজে। রেখা, রং, গতি, কিছুটা কাব্যিক রচনায় একটি ভারসাম্য থাকলেও ড্রয়িং বেস্‌ড কাজ দুটি এত দুর্বল কেন? আমন্ত্রিত ভাস্কর মৃণাল গায়েন ছাড়াও ছিলেন তুহিনশুভ্র প্রধান, স্বপনকুমার মণ্ডল, শঙ্কর হালদার, নগেন সর্দার, রজতবরণ মহাপাত্র, দেবাশিস হালদার, অমিতকুমার দাস, রাজীব মণ্ডল।

অন্য বিষয়গুলি:

art painting exhibition sundarban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy