গত বছরের শেষ দেড় মাস, এক গুরুত্বপূর্ণ দলিলের স্বাক্ষর রাখল গ্যালারি ’৮৮, কলকাতা। প্রদর্শনীর শিরোনাম, ‘দ্য রিদমস অব রিফিউজি’, সৃষ্টিকর্তা সুধীর রঞ্জন খাস্তগীর (১৯০৭-১৯৭৪)। বঙ্গীয় শিল্পকলার অন্যতম প্রখ্যাত এই ভারতীয় চিত্রকর এবং শিক্ষাবিদ রচনা করেছিলেন আধুনিকতাবাদের স্বতন্ত্র চিত্রশৈলী। জীবনের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি আর অস্থিরতা থেকে ব্যক্তিগত আশ্রয়ের উপায় হিসেবে নিজের শিল্পকে ছন্দোময়তায় প্রকাশ করেছেন সুধীর রঞ্জন।
শিল্পীর পরিবার থেকে সরাসরি পাওয়া ৮০টি মৌলিক ছবি দেখলে তাঁর শিল্পের প্রকৃত প্রশিক্ষণকে উপলব্ধি করা সম্ভব। ম্যাসোনাইট বোর্ডে মিশ্র মাধ্যমে ‘ডান্সিং মেন’ (১৯৬১), ঘূর্ণাবর্ত স্ট্রোকের আনন্দে দু’টি মাছের কোরিয়োগ্রাফি, একই এফেক্ট আনতে প্যাস্টেলে এক যুগ্ম দম্পতির অবগাহন... এ সবই দেশীয় উপাদানের অসাধারণ সহজ, সরল ভঙ্গির রচনা। কাগজ, পেপারবোর্ডের উপরে গোয়াশ ও মিশ্র মাধ্যম এবং লিনোকাটে করা। পঞ্চাশ দশকের নামহীন কয়েকটি ছবির আকর্ষণ অনবদ্য। পেপারবোর্ডে করা মিশ্র মাধ্যমের এই কাজে দেখা যায় আয়েশি ভঙ্গির শায়িত, অর্ধশায়িত ও উপবিষ্ট তিন রমণী। ভিন্ন স্বাদের কাজ। ফ্ল্যাট টেকনিকে রঙের সামান্য ডায়মেনশন, দীর্ঘ, মাঝারি এবং ছোট রেখার রিলিফে ছবিগুলি পাশ্চাত্য গড়ন-অনুসৃত হয়েও বেরিয়ে আসে নিজের ভাললাগার আঁচড়ে। রেখচিত্র না বলে, বলা যেতে পারে মোটা দাগের গাঢ় ও বন্য অনুভূতির দোলায়মান এক্সপ্রেসিভ ছবি। যার এক নম্বর উদাহরণ কাক, পায়রা, হাঁস ও মোরগের চারটি ছবি।
’৪০-এর দশকের প্রথম সারি শিল্পীদের মধ্যে চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যে চরম আধুনিকতার প্রয়োগে একজন সফলতম শিল্পী হিসেবে সুধীর রঞ্জন যেমন পরিচিতি লাভ করেন, পাশাপাশি তাঁকে সমালোচিত হতে হয় নিজস্ব দৃষ্টিকোণ উদ্ভাবনের জন্যও। বর্তমান প্রদর্শনীতে তাঁর পূর্বাপর বৃত্তের ছায়া সেই ভাবে না থাকলেও, যেটি দেখা যায়, তা হল বিস্ময় ও মুগ্ধতার এক প্রাঞ্জল মোহজাল। যেমন ’৬২-তে করা ‘মুসৌরি যাত্রা’, অসাধারণ নান্দনিক কম্পোজ়িশন। চাইনিজ় ইঙ্কে করা পাহাড়ি রাস্তায় যাত্রী ছাড়াও ছিল পাহাড় নিয়ে আরও কয়েকটি ছোট ছোট মুহূর্ত দেখার দলিল। যেগুলি তখনকার কিংবদন্তি শিল্পীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় করা স্কেচবুকের অন্যতম নিদর্শন।
পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামে জন্ম শিল্পীর। শান্তিনিকেতনে প্রথম দিকে নন্দলাল বসুর ছাত্র ও রামকিঙ্কর বেজের সহপাঠী হিসেবে একজন মুদ্রণকার, চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর আখ্যায় চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করেন সুধীর রঞ্জন। সঙ্গে কাস্টিং সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনেও রত থাকেন। এ প্রসঙ্গে বলা ভাল, ভাস্কর্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রজন্মই প্রথম ভাস্কর্য-শিক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিল।
অভিন্নহৃদয় বন্ধু রামকিঙ্কর শান্তিনিকেতনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও, সুধীর রঞ্জন ভ্রাম্যমাণ শিল্পী হওয়ার বাসনায় বেরিয়ে পড়েন। জীবিকার কারণে গ্বালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে চাকরি নিলেও, কিছু দিন পরে দেহরাদুনে চলে আসেন এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত দুন স্কুলের শিল্প-শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০ বছর সেখানে শিক্ষকতার পর, সেখান থেকে চলে আসেন লখনউ আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব নিয়ে। ’৬২-তে অবসর গ্রহণের পরে আবার স্থায়ী ভাবে ফিরে আসেন শান্তিনিকেতনে।
তাঁর চল্লিশের দশকের ছবিগুলি বিশেষ স্বাক্ষরে অনুভূতির স্তরকে জাগিয়ে তোলে। যেমন চারকোলের ‘ওরিড ফার্মার্স’, ‘জেলে’ ইত্যাদি কাজ। মুখের বিভিন্ন আবেগের অভিব্যক্তি প্রকাশে শিল্পীর সহমর্মী রচনায় উঠে আসে নর-নারীর আকুতি, শ্রমজীবী নারী, শিকারি ইত্যাদি। ১৯৬১-তে পেন্সিলে কয়েকটি টানের ‘অধ্যয়নরত রবিঠাকুর’ নিঃসন্দেহে শিল্পীর যুগান্তকারী একটি স্কেচ। ব্রোঞ্জের ঢালাইয়ে ‘ডান্সিং উয়োম্যান’ নুড স্টাডির প্রথা ভাঙার উৎকৃষ্ট নির্মাণ। বেঙ্গল ঘরানার ছাত্র হিসেবে তাঁর ‘যাত্রারত বংশীবাদক পরিবার’ ছবিতে দেখা যায় নন্দলাল বসুর স্টাইল। ড্রয়িংয়ের আড়ম্বরহীন চিত্রপটে, নানা মাধ্যমে অনায়াসে শিল্পী যে ভাবে মনের দোর খুলেছিলেন, তাতে তাঁকে একজন পথপ্রদর্শকই বলা চলে।
জাতীয় স্তরে উন্নীত শিল্পী সুধীর রঞ্জন খাস্তগীর ১৯৫৮ সালে তাঁর যাবতীয় শিল্পকর্মের জন্য পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। তাঁর রচিত কয়েকটি বইয়ের মধ্যে শিশুদের জন্য লেখা অত্যন্ত জনপ্রিয় বই ‘তালপাতার সেপাই’। এ ছাড়া ‘ডান্সেস অব লিনোকাট’, ‘আমার এ পথ’ তাঁর দ্বিতীয় সৃষ্টির ফসল।
অনুষ্ঠান

- সম্প্রতি বেঙ্গল ওয়েব সলিউশনের উদ্যোগে উত্তম মঞ্চে আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠান। সেখানে আলাপচারিতায় ছিলেন জগন্নাথ বসু এবং ঊর্মিমালা বসু। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শিল্পীদ্বয় তাঁদের দেশ-বিদেশে নানা অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ১৯৮২ সাল থেকে পারফর্ম করছেন এই জুটি। এই আলাপচারিতায় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মীর। দ্বিতীয় পর্বে শিল্পীদ্বয় তাঁদের জনপ্রিয় শ্রুতিনাটক ‘দুরন্ত প্রেম’ পারফর্ম করেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন অলোক রায় ঘটক। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন কণিশ ভট্টাচার্য।
- সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চে আয়োজিত হয়েছিল ‘কানন থেকে কেয়া’। উদ্যোগে অ্যাকাডেমি থিয়েটার এবং ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রোডাকশন। বাংলার মঞ্চঅভিনয় তথা মঞ্চগানের মহিলা শিল্পীদের শ্রদ্ধাঞ্জলির উদ্দেশ্যে ছিল এই অনুষ্ঠান। অপেরাধর্মী এই প্রযোজনায় কানন দেবী থেকে কেয়া চক্রবর্তী বাংলার রঙ্গমঞ্চের কিংবদন্তি মহিলা শিল্পীদের নাচে, গানে, কথায় স্মরণ করলেন দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবদূত ঘোষ, মৌবনী সরকার, রিচা শর্মা, অভিরূপ সেনগুপ্ত প্রমুখ। নিধুবাবুর চরিত্রে ছিলেন দেবদূত, ‘টিনের তলোয়ার’-এর ময়নার ভূমিকায় ছিলেন ঋদ্ধি, কানন দেবী ও কেয়া চক্রবর্তীর চরিত্রে কনীনিকা, ইন্দুবালা হয়েছিলেন মৌবনী, কাপ্তেন বাবুর ভূমিকায় ছিলেন দেবজিত, লখনউয়ের এক বাইজি চরিত্রে ছিলেন রিচা, আবদাল্লা হয়েছিলেন অভিরূপ সেনগুপ্ত। সম্পূর্ণ প্রযোজনাটির ভাবনা ও পরিচালনায় ছিলেন ঋদ্ধি। নির্মাণ ও রচনা দেবজিতের। উল্লেখযোগ্য গানগুলির মধ্যে ছিল— ‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই’ ‘কেন দেখা দিলে’, ‘ছেড়ে কলকাতা বন’, ‘একটা গল্প বলি শোন’, ‘কাঁটা বনে তুলতে গেলাম’।
- রিদম পার্ক অ্যাকাডেমি আয়োজিত কিডস ড্রাম ফেস্টিভ্যাল দ্বিতীয় বর্ষ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল সোদপুরে পানশিলা জাগরণী ক্লাব মঞ্চে। সারাদিনের এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৭০-৮০ জন বাচ্চা অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ৪০ জনের একসঙ্গে ড্রাম বাজিয়ে উস্তাদ জ়াকির হুসেন ও ফ্রাঙ্কো ভাজকে ট্রিবিউট জানানো। এর পর ছিল বাচ্চাদের সোলো ডুয়ো ও ট্রায়ো ড্রাম পরিবেশন। সব শেষে অ্যাকাডেমির বাচ্চাদের নিয়ে গ্রুপ ড্রাম পরিবেশন হয়। এই ফেস্টিভ্যালের উদ্যোক্তাধ্রুব ঘটক ও মৃণ্ময় রূপম ঘোষ।সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সুরঞ্জিত কর্মকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)