Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

হাঁটতে হাঁটতে হর কী দূন

নদীর শব্দ শুনতে শুনতে রাতের ঘুম। ঘন সবুজ জঙ্গল আর মেঘে ঢাকা বরফের পাহাড়। যেন সব পেয়েছির দেশ! লিখছেন অভিরূপ দত্তনদীর শব্দ শুনতে শুনতে রাতের ঘুম। ঘন সবুজ জঙ্গল আর মেঘে ঢাকা বরফের পাহাড়। যেন সব পেয়েছির দেশ! লিখছেন অভিরূপ দত্ত

হর কী দূন উপত্যকা

হর কী দূন উপত্যকা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

পিঠে রুকস্যাক নিয়ে পাহাড়ি পথে হাঁটার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের। অবশেষে পাওয়া গেল সেই সুযোগ। এক বন্ধুর দৌলতে ভিড়ে গেলাম এক ট্রেকিং দলে। গন্তব্য হর কী দূন। উত্তরাখণ্ডের এই উপত্যকা নাকি ট্রেকিংয়ের শিক্ষানবিশদের পক্ষে আদর্শ।

হাওড়া থেকে দূন এক্সপ্রেসে যেতে হয় দেহরাদূন। সেখান থেকে গাড়ি করে সাকরি। পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। রাস্তায় পাহাড়ি বাঁক, ঝরনা আর পাহাড়ি গ্রাম চোখ জুড়িয়ে দেয়। মাঝে দুপুরের খাওয়া সেরে নেওয়া হল যমুনা ব্রিজে। ট্রেকিংয়ের রসদও জোগাড় করা যায় রাস্তা থেকেই। এই রাস্তায় শেষ বড় বাজার মোরিতে। তার আগে পুরোলাতেও বসে বাজার। রয়েছে বড় দোকানও। মোরি পেরোনোর পরই মোবাইলে আর কোনও সংযোগ থাকে না। তাই প্রয়োজনীয় ফোন মোরির আগেই সেরে নেওয়া ভাল।

সাকরির লজে যখন পৌঁছলাম তখন সন্ধে পেরিয়ে গিয়েছে। ঠান্ডাও মালুম হচ্ছে বেশ। স্থানীয় একটি হোটেলে খেয়েদেয়ে সোজা ঢুকে পড়লাম কম্বলের নিশ্চিন্ত আরামে।

পরদিন ভোরবেলা ব্রেকফাস্ট করে গাড়িতে করে পৌঁছলাম তালুকা। সেখানে ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন আমাদের গাইড এবং পোর্টার। আগে সাকরি থেকেই শুরু হতো হাঁটা। এখন তালুকা পর্যন্ত গাড়ি যায়। প্রায় ৮ কিমির সেই রাস্তায় পড়ে নানা ঝরনাও।

মারিন্দা তাল

প্রথম দিন আমাদের উৎসাহ তুঙ্গে। হইহই করে হাঁটার পরই অনভ্যস্ত পায়ে শুরু হল ব্যথা। প্রায় ৩ কিমি হেঁটে তাঁবু ফেলা হল বকরথাজে। দু’পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। দুটো নদীর মধ্যিখানে একটু উঁচু জায়গায় আমাদের তাঁবু। জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার পর খেয়েদেয়ে সটান স্লিপিং ব্যাগে।

পরদিন বেশ সকালে শুরু হল হাঁটা। এ দিন যাওয়া হবে ওসলা পর্যন্ত। যা হর কী দুনের আগে শেষ জনপদ। পুরো পথটা জু়ড়ে চড়াই-উতরাই। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটা। সারা রাস্তা জুড়ে নাম না জানা পাখির ডাক, উঁচু গাছের ফাঁক দিয়ে নেমে আসা সূর্যের আলো যেন প্রতি পদে ক্লান্তি দূর করে দেয়। এ দিনের রাস্তায় দু’জায়গায় টি পয়েন্ট রয়েছে। সেখানে চা ছাড়াও পাওয়া যায় ম্যাগি, ডিম ও বেশ কিছু নরম পানীয়। ওসলার বেশ কিছুটা আগে রয়েছে অসাধারণ সুন্দর একটা গ্রাম। নাম গঙ্গার। গ্রামের পাশ দিয়ে যে নদী গিয়েছে, তার নামও গঙ্গার। সকাল ন’টায় শুরু হয়েছিল হাঁটা। তার ঘণ্টা পাঁচেক পর ওসলা পৌঁছে ফেলা হল তাঁবু। সূর্য ডুবতেই কনকনে ঠান্ডায় হাড় কেঁপে যাওয়ার জোগাড়। শুকনো কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালানো হল। তার চারপাশ ঘিরে বসে, সারা হল রাতের খাবার। এখানকার আর একটা অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য হল রাতের আকাশ। এত তারা শহরে দেখতে পাওয়া যায় না।

হাঁটার পথে সঙ্গী নদীও

পরদিনের গন্তব্য হর কী দূন ভ্যালি। কালকাতিয়াধার পেরিয়ে চড়াই-উতরাই পথে প্রায় ৮ ঘণ্টা হাঁটা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কালকাতিয়াধার থেকে কালানাগ ও বান্দরপুঞ্ছ শৃঙ্গ দেখা যায়। এ দিনও কিছু জায়গায় চড়াই পেরোতে হল। দমের অভাবও বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছিল। রাস্তার মাঝপথে আমরা বৃষ্টিও পেয়েছি। গায়ে যেন তিরের মতো বিঁধছিল বৃষ্টির ফোঁটাগুলো। হর কী দূন ভ্যালির প্রায় ৩ কিমি আগে তাঁবু ফেললাম আমরা। সেখানে চারিদিকে ঘন সবুজ জঙ্গল চোখ জুড়িয়ে দেয়।

শেষ দিন ঘোরা হবে হর কী দূন ভ্যালিতেই। তার পর যাওয়া হবে প্রায় ৩ কিমি দূরে মারিন্দা তালে। ভিউ পয়েন্টে পৌঁছতেই যেন এত দিনের ক্লান্তি এক নিমেষে উবে গেল। বরফে ঢাকা পাহাড়, সবুজ বন আর নদী সব একসঙ্গে চোখের সামনে ধরা দেয়। এখান থেকে দেখা যায় স্বর্গারোহিণী শৃঙ্গ। শুধু এটুকু দেখতেই যেন বারবার ফিরে আসা যায় এখানে।

ভিউ পয়েন্ট থেকে দু’দিকে যাওয়া যায়। স্বর্গারোহিণীর দিকে যমদ্বার গ্লেসিয়ার আর উল্টো দিকে মারিন্দা তাল। গাইড বলছিলেন, মারিন্দা তাল থেকে বোরাসু পাস হয়ে পৌঁছনো যায় হিমাচল প্রদেশে। মারিন্দা তাল এলাকায় মে মাসেও বরফ পেয়েছি আমরা।

পরদিন থেকে ফেরা শুরু। পাহাড়ি গ্রামগুলোকে পিছনে ফেলে আসার সময় যেন অজান্তেই ভারী হয়ে যায় মন। কয়েক দিন হিমালয়ের কোলে কাটিয়ে এ বার বাড়ি ফেরার পালা। সঙ্গী মনখারাপ আর এক বুক অক্সিজেন।

ফেরার পথে

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে গেলে দেহরাদূনে নেমে, সেখান থেকে গাড়িতে করে সাকরি।

প্লেনে গেলে নামতে হবে দেহরাদূনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দরে। দিল্লি থেকে সরাসরি বিমান রয়েছে। বিমানবন্দরের কাছ থেকেই সাকরি যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।

কখন যাবেন

এপ্রিল থেকে জুন অথবা সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। বর্ষার সময়টা এড়ানোই ভাল। মে-জুন মাসে অল্পবিস্তর বৃষ্টি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

থাকার জায়গা

সাকরিতে একাধিক হোটেল, গেস্ট হাউজ রয়েছে। ওসলায়, হর কী দূনে রয়েছে ট্রেকিং হাট। থাকা যায় তাঁবুতেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy