শিহরন জাগানো ১৯৩০ সাল। ভারত তখন উত্তাল গাঁধীজির ডাকে ‘জেল ভরো’ আন্দোলনে। কংসের কয়েদখানায় কৃষ্ণ-জন্মে স্তব্ধ হয়েছিল রাজ্য। অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিল যাদবের দল। তেমনই কৃষ্ণরূপী স্বাধীনতার দাবিতে জেল ভরে আপামর জনতা। কাহিনির এমনই রূপকের মোড়কে নাট্যকার মন্মথ রায় রচনা করলেন ‘কারাগার’।
যার আড়ালে উন্মাদনার ইন্ধন। জেগে ওঠার প্রেরণা। উৎসাহ জোগালেন অনেকেই। হেমেন্দ্রকুমার রায়ের সঙ্গে মঞ্চনাট্যের গান লিখলেন স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম। আপন সুরের ছোঁয়ায় নজরুলের ‘তিমিরবিদারি অলখবিহারী কৃষ্ণকুমারীর আগত ঐ’।
এমন গান মুখে মুখে ফিরতে থাকল আমজনতার। সংলাপের দোসর মঞ্চগানে প্রতিষ্ঠা পেল অভিনয়। স্বদেশিতে মাতল অভিনেতার দল। তখন এমনিতেই সরযূবালার অভিনয় দর্শকদের মাতিয়ে দিচ্ছে। তিনি ‘কারাগার’ নাটকে অভিনয়ের সম্মতি দিলেন। প্রাণ পেল নাট্যদল। মুখে মুখে রটে গেল সেই বার্তা।
সরযূবালা নিজের আবেগ লুকিয়ে রাখতে পারেননি। পরবর্ত়ীতে লিখেছেন, ‘কারাগার অভিনয় ... আমাদের কাছে তখন আর অভিনয় নয়, রীতিমতো মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম। ... তখন আমরা কেউ আর অভিনেত্রী নই, প্রত্যেকেই স্বাধীনতার সৈনিক’।
সত্তর বছরের স্বাধীন ভারতে এ ভাবনা বা এ মঞ্চগান আজও মনকে নাড়া দেয়।
সত্যি কথা বলতে কী, সেই সময়েও বণিকের মানদণ্ড শাসকের রাজদণ্ডে বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নানা প্রতিবাদী আন্দোলনের শরিক হল বাংলার মঞ্চ। দোসর হল মঞ্চগান। নীলবিদ্রোহ বা হিন্দুমেলার প্রচারে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের প্রস্তাবনা বিদ্যভূনির ‘নীল বানরে সোনার বাংলা করল ছারখার’। আবার জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘সরোজিনী’ নাটকের সেই রবীন্দ্রগান ‘জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ’ তারই প্রমাণ দেয়।
বিশ শতকের গোড়ায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি’, রজনীকান্তের ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’, অতুলপ্রসাদের ‘উঠো গো ভারতলক্ষ্মী’র সঙ্গী হল মঞ্চগান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বিজেন্দ্রলালের ‘ধন-ধান্য-পুষ্পভরা’, মুকুন্দ দাসের ‘বন্দে মাতরম বলে নাচরে সকলে’ বা গিরিশচন্দ্রের ‘আসছে ঐ নবাব বাহাদুর’।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন এমনকী পঞ্চাশ দশকের মন্বন্তরের সাক্ষীও থেকেছে মঞ্চগান। সাক্ষী থেকেছে আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রতিষ্ঠারও।
সেই দিনও নেই, সেই ঘটনাও নেই। কিন্তু তার রেশ আজও রয়ে গেছে মানুষের মনে। স্বাধীনতার পরম্পরায় প্রতিবাদী মঞ্চগানগুলি নিয়েই দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতার মঞ্চগান’। অ্যাকাডেমি থিয়েটারের প্রযোজনায় অ্যাকাডেমিতে ৬ ডিসেম্বর ইতিহাসের তথ্যসূত্র ধরাবেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। ঋদ্ধি, দীপ্তেন্দুর সঙ্গে গানে দেবজিত্।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy