Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

যদি পেতেন ওঁকে, কী করতেন আজকের টলি নায়িকারা?

ওঁর সঙ্গে ‘ডেটিং’, ‘লং ড্রাইভ’—এ সব কিচ্ছুর দরকার নেই। ওঁর উপস্থিতিতেই প্রেম চলে আসত। ওঁকে দু’চোখ ভ’রে দেখাই তো অনেক। ওঁর চাউনির মধ্যে একটা গভীর আশ্রয় আছে। বিশ্বস্ততা আছে। যেটা মহিলারা তাদের প্রেমিকের মধ্যে খোঁজে।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

ওঁকে দু’চোখ ভ’রে দেখাই তো অনেক

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

ওঁর সঙ্গে ‘ডেটিং’, ‘লং ড্রাইভ’—এ সব কিচ্ছুর দরকার নেই। ওঁর উপস্থিতিতেই প্রেম চলে আসত।

ওঁকে দু’চোখ ভ’রে দেখাই তো অনেক। ওঁর চাউনির মধ্যে একটা গভীর আশ্রয় আছে। বিশ্বস্ততা আছে। যেটা মহিলারা তাদের প্রেমিকের মধ্যে খোঁজে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তো কাজ করেছি আমি। আমার তো মনে হয়, বাঙালি অভিনেতাদের মধ্যে উনি সবচেয়ে সুপুরুষ। আজও ‘তিন ভুবনের পাের’ দেখলে কাত হয়ে যাই।

বাঙালির ‘ইন্টেলেকচুয়াল রোম্যান্স’টা ওঁর মধ্যে দিয়েই বেরিয়ে আসে। কিন্তু উত্তমকুমার হচ্ছেন ‘লাভার বয়’।

ঋতুপর্ণা

অনেক প্রশ্ন জমে আছে ওঁর জন্য। কী অসম্ভব মাপের একজন ‘কমিটেড’ সুপারস্টার! জানতে চাইতাম, এতটা ‘কমিটেড’ হতে গেলে কী কী করতে হয় একজন সুপারস্টারকে?

‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ থেকে ‘নায়ক’ থেকে ‘যদুবংশ’— নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে এক উত্তমকুমার থেকে আরেক উত্তমকুমার হয়ে উঠেছেন। কী ভাবে এটা সম্ভব হল, জানতে চাইতাম।

বেশি বয়সে ‘দুই পৃথিবী’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’-র মতো ছবিতে অভিনয় করতে গেলে একজন অভিনেতাকে কতটা ভেতর থেকে পাল্টে ফেলতে হয়? শি‌খতাম।

একদিন শুধু গান নিয়ে আড্ডা হত। এমনকী অভিনয়ের পাশাপাশি বাড়িটাকে কী ভাবে সামলেছে, তার টিপস নিতাম। আরেকটা কথা। খুব সঙ্কোচ হচ্ছে বলতে। আমি সুচিত্রা সেনেরও অসম্ভব ফ্যান। তবু...। যদি ‘সপ্তপদী’, ‘মন নিয়ে’, ‘হারানো সুর’-এর মতো ছবিগুলোয় ওঁর রোলগুলো আমি করতে পেতাম!

উত্তমকুমারের চোখে চোখ রেখে সংলাপ বলব ফ্লোরে— উফ্, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে অন্য কোনও পোশাক না পরে শাড়িই পরতাম। আর অল্প সাজ। খুব খেতে ভালবাসতেন, তাই ওঁর পছন্দের খাবার খেতে খেতে আড্ডা দিতাম। ট্রিটটা অবশ্য আমিই দিতাম।

বাইকে করে হাইওয়ে নয়তো রাজারহাট

পাওলি

এক দিনের জন্যও ওঁকে পেলে ‘ডেটিং’-এ যেতাম।

কোনও দামি গাড়ি নয়। টু-হুইলার। বাইক। না, ‘পথ যদি না শেষ হয়’ হয়তো গাইতাম না। কিন্তু ওই ‘বাইক রাইডিং’টা আমার চাই-ই চাই।

বাইক-এ করে কোলাঘাট ধাবায় ‘লাঞ্চ’। যদি উনি আমারই হাতের রান্না খেতে চাইতেন, তা’ও দিতাম। বাঙালি রান্না, ওঁর পছন্দের। তখন হয়তো আমার বাড়িতে নিয়ে আসতাম। কিন্তু তার আগে, ওই যে বললাম, বাইক-রাইডিং! ওটা যে চাই। হু হু করে রাজারহাট!

পাওলি

প্রচুর আড্ডা দিতাম। ওঁর সঙ্গে গপ্পো করাটা... সে সামনে না থাকলেও যখন-তখন চাইতাম। সময়টা আজকের মতো হলে ‘হোয়াটস্অ্যাপ’-এই সারতাম। উনি হয়তো রাজি হতেন না, কিন্তু আমি ঠিক বুঝিয়ে রাজি করিয়ে নিতাম।

আর একটা ব্যাপার বলতামই বলতাম।—‘‘আপনার এত সুন্দর ঠোঁট। পাগল-করা হাসি। এতেই তো সব্বাই ফ্ল্যাট! আপনি ঠোঁটে একদম লিপস্টিক দেবেন না, প্লিজ!’’

এ রকম একজন পুরুষ, মহিলারা তো সারাক্ষণ ঘিরে থাকবেই। কিন্তু আমার এটা পছন্দ হত না। বলেই দিতাম, ‘‘দেখুন, ছবিতে যা খুশি করুন। নায়িকার সঙ্গে ফ্লার্টও করতে পারেন। কিন্তু ছবির বাইরে আপনি শুধু আমার।’’

ছবির কথা যদি উঠত, তো বলতাম, ‘‘আমার সঙ্গে এক বার ‘সপ্তপদী’, ‘হারানো সুর’-টা করুন না, প্লিজ।’’

দিম্মার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতাম

রাইমা সেন

ওঁকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতাম। নয়তো আমি ওঁর কাছে যেতাম।

তবে দিম্মা (সুচিত্রা সেন) যদি থাকত, আমি ওঁদের দু’জনের দেখা করিয়ে দিতাম।

আমার অনেক কথা আছে, ওঁর সঙ্গে। হয়তো চব্বিশ ঘণ্টায় সেটা শেষ হওয়ার নয়। আরও একটা দিন চেয়ে নিতাম।

প্রথমে জানতে চাইতাম, এই যে ‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকটি হচ্ছে, সেটা ওঁর কেমন লাগছে? আদৌ কি এই ধারাবাহিকের সঙ্গে উনি নিজের জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছেন?

রাইমা

ওঁর সঙ্গে কোনও ‘ডেটিং’-এর কথা আমি ভাবতেই পারি না। কী করেই বা ভাবব! উনি তো আমার দিম্মার খুব বন্ধু ছিলেন। দিম্মার কাছেই শুনেছি, সে়ট-এ এবং সেটের বাইরে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করেই ওঁদের দারুণ সব সময় কেটেছে। সেই সব গল্প ওঁর মুখ থেকে আবার শুনতে চাইতাম।

আমি কী করে ওঁর নায়িকা হওয়ার কথা ভাবতে পারি! ছবি যদি করতেই হয়, তা’হলে ওঁর নাতনির চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। বাড়িতে যখন আড্ডা দেব বলছি, তখন আমার মায়ের কথাও জানতে চাইব। কেমন লাগে আমার মাকে ওঁর?

অন্য নায়িকারা উত্তমকুমারের জন্য হয়তো আলাদা ‘ইম্পর্ট্যান্স’ দিয়ে সাজবে। আমি কিন্তু জিনস্ আর ক্যাজুয়াল শার্টে দেখা করব।

আর অভিনয়ের প্রচুর টিপস্ নেব। ইস্, সত্যিই যদি এমন হত!

বৃষ্টি ধোওয়া পার্ক স্ট্রিটে তখন আমরা দু’জন...

সোহিনী সরকার

ধুতি-পাঞ্জাবি পরা অমন একজন ‘অ্যাট্রাকটিভ’ বাঙালি পুরুষ আমি অন্তত দেখিনি!

এখনকার উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি। হৃতিক রোশন। অসম্ভব ‘হট’, সুন্দর! কিন্তু উত্তমকুমারকে শুধু সুন্দর বলব না, রোম্যান্টিক। অসম্ভব মনকাড়া। নেশার মতো।

ওঁর চেহারাটা এমন ভাবেই মনে বসে আছে, মনে হয় অমন একজন ধুতি পরা রোম্যান্টিক পুরুষ না পেলে বিয়েই করব না।

আসলে উত্তমকুমার অনেকটা স্বপ্নের মতো। স্বপ্ন যেমন বাস্তবে ধরা যায় না। কিন্তু খুঁজিয়ে ছাড়ে, অনেকটা তেমন।

আফসোস লাগে, ওঁকে কোনও গভীর ‘লাভ মেকিং’ দৃশ্যে দেখলাম না। হয়তো’বা জমাট চুমুর কোনও দৃশ্যেও।

তেমন যদি হত, ওঁকে পেলে অমন কোনও সিনেমা ওঁর সঙ্গে আগে করতে চাইতাম।

সোহিনী

আমার কিন্তু ‘সপ্তপদী’র উত্তমকুমারকেই চাই। আমি ওঁকে নিয়ে কলেজ স্ট্রিটে যাব, প্যারামাউন্ট-এর শরবত খাব। গঙ্গার বুকে নৌকো করে ভেসে বেড়াব।

ওঁর সঙ্গে ‘সেলফি’, ‘হোয়াটস্অ্যাপ’ কিছুই করব না। ‘ফেসবুক’ও না। ওঁকে ‘ফাঙ্কি’ কিছু পরা দেখতে চাইব না।

ওঁর সঙ্গে যদি সারাদিন কাটাতাম তা’হলে আমি যতটা পারা যায়, নিজেকে সাধাসিধে রাখতাম।

নৌকায় বসে ওঁকে আমার হারানো প্রেমের কথা বলতাম। উঁহু! ওঁর প্রেমের গল্প বলতে দিতাম না।

আমার প্রেমের কাহিনি শুনে শুনে যদি উনি একটু ‘পজেসিভ’ হন…এই আশায়! সেখান থেকেই গঙ্গায় ভেসে ভেসে আমরাও যদি কাছাকাছি আসতাম।

গঙ্গার বুকে ঝুপ করে সূর্য হারিয়ে গেলে সোজা সন্ধে-মাখা পার্ক স্ট্রিটে আমরা।

কন্টিনেন্টাল ডিনার।

ওয়াইনের গ্লাসের ভিতর দিয়ে রাতের উত্তমকুমারকে দেখতাম।

বাইরে হয়তো তখন ঝমঝমে বৃষ্টি।

ওঁর হাসি, ওঁর কথা, ওঁর চুপ-কথা চাউনির সঙ্গে রেস্তোরাঁর ঢিমে আলো, পিচ-ধোওয়া বর্ষা মিলে আমার মনে তখন ঝড় উঠত।

কলকাতা চষে বাড়ি ফেরার পালা। না, কারও গাড়ি থাকবে না।

বর্ষার কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সি পাওয়া যায় না। ‘অন লাইন’ ট্যাক্সিও যেন না মেলে! আমার থ্রি-জি’ও শেষ।

জমে যাবে রাত।

বৃষ্টি-ধোওয়া পার্ক স্ট্রিটে তখন আমরা দু’জন... পাশাপাশি... কাছাকাছি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy