প্রথম বার দেখলেই নজর চলে যায় ওঁর চুলের দিকে।
ঘন কালো এক গোছা চুল নেমে গেছে কাঁধ ছাড়িয়ে।
থাকতে না পেরে একদিন জিজ্ঞেসও করে ফেলেছিলাম। উত্তরে বললেন—
ডিম্পলের ভাষায়, ‘‘এখানে আমার কোনও ভূমিকাই নেই। পুরো কৃতিত্বটাই বিট্টি কাপাডিয়ার... আমার মায়ের...।’’
ছোট থেকেই না কি মা যত্ন করে মেয়েকে কী সব জড়িবুটি মিশিয়ে দিতেন চুলের তেলে, যেটা চট করে বাজারে পাওয়া যাবে না।
শুধু চুল কেন, ডিম্পলের কাছেই শোনা, শরীরের চটক নিয়ে নাকি কোনও দিন সমস্যায় পড়তে হয়নি ডিম্পলকে।
তবে এ নিয়ে বেশি প্রশংসা-টশংসা করলে যেমন প্রথম থেকেই মায়ের কথা বলতেন, তেমন সোজাসাপ্টা আরেকটা ব্যাপারও জানিয়ে দিতেন, ‘‘আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আর দেখো, আমি মনে করি, আমি একজন সাধারণ মহিলা, যে ফিল্মিদুনিয়ায় কাজকম্ম করে জীবন চালায়, ফ্যামিলি সামলায়, ব্যস! আর কী! জীবনটাকে এ রকম সরল করে দেখতেই আমার ভাল লাগে।’’
বলতে লাগে না, গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড-এ তিনি কত বড় ‘স্টার’, কিন্তু বাড়িতে ডিম্পলকে দেখলে, একটু অবাক হতে হয় বইকী! স্টারডম-এর লেশমাত্র নেই। বরং উল্টোটা।
ওঁদের বাড়ি, মানে, ‘কাপাডিয়া বাংলো’য় ডিম্পল প্রায় শেষ কথা। এক্কেবারে সর্বময় কর্ত্রী বলতে যা বোঝায়, ডিম্পল ঠিক তাই।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, বাড়িতে কেউ এলেন, তাঁকে কী খাবার দেওয়া হবে, সেটাও ঠিক করে দেন ডিম্পল। আর অতিথি এসেছেন মানে, কিছু না খেয়ে ও বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার উপায়ই নেই।
তারকা লোকজনদের মধ্যে এমন ঘরেলু ইমেজ কত জনের আছে, জানি না!
টুকরো টুকরো কত যে ঘটনা মনে পড়ছে, যাতে প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়ে ইন্ডাস্ট্রির অনেকের থেকেই ডিম্পল আলাদা।
এক দিনের কথা মনে পড়ছে।
ড্রয়িং রুমে বসে ওঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। আমাদের ঠিক উল্টো দিকে বসে একটি মেয়ে।
ডিম্পল ভেবেছিলেন, হয়তো মেয়েটি ওঁর বোন সিম্পল বা রিমের কোনও বন্ধু। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গেল, শুধু ডিম্পল কেন, বাড়ির কেউই মেয়েটিকে চেনে না। এমনিই ঘুরতে ঘুরতে সে ঢুকে পড়েছে ওদের বাড়িতে! তাকেই কিনা ডিম্পল ভেবে বসেছিল বোনের বন্ধু!
এটা আবার ডিম্পলের আরেকটি দিক। ঘরেলু, আবার উদাসীও।
আরেক দিনের কথা বলি।
তখন সবে রাজেশ খন্নার কার্টার রোডের বাংলো ‘আশীর্বাদ’ ছেড়ে এসেছেন। টুইঙ্কল আর রিঙ্কিকে নিয়ে তিনি তখন নিজের বাড়িতে থাকেন। স্বভাবতই মনমেজাজ ভাল নয়।
আমি গিয়েছি দেখা করতে।
সে দিন দেখেছিলাম অন্য আরেক ডিম্পলকে। প্রচণ্ড কষ্টেও আবেগকে কী ভাবে লাগাম দিতে হয়, শিখতে হয় ওঁর কাছে।
কথা বলতে বলতে চোখ টস টস করে উঠল। তবু মেয়েরা যেন বুঝে না ফেলে, তার কী আপ্রাণ চেষ্টা!
রাজেশ খন্নার নির্বাচনী প্রচারে
যেন কিছুই হয়নি। জীবন কোথাও এতটুকু টাল খায়নি। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘কী আর হয়েছে। বিয়েটা টেকেনি, এই তো! আকাশ তো ভেঙে পড়েনি মাথায়। আমাকে এখন মেয়েদের কথা ভাবতে হবে... সেরা শিক্ষাটা দিতে হবে ওদের। আমি যা পড়াশোনা করেছি, তার থেকেও যেন বেশি পড়াশোনা করতে পারে ওরা।’’
‘মা’ সত্তাটা ঠিক এ ভাবেই, এতটাই ওর মধ্যে কাজ করে!
এক সময় ঋষি কপূরের সঙ্গে ডিম্পলের একটা সম্পর্ক ছিল। ঋষি কপূরের কাছে গেলেন ডিম্পল। যার ফল রমেশ সিপ্পির ‘সাগর’ ছবিটি। কিন্তু ডিম্পলের এই ফিরে আসাটা ওঁদের পুরনো ভালবাসা যে ফিরিয়ে দিল, এমন নয়। সেটা অবশ্য অনেকটাই ঋষি-ঘরনি নীতুর জন্য। সম্পর্কটা বন্ধুত্বের বেড়াতেই থেমে ছিল।
এমন একটা সময় এ সব ঘটছে, যখন ডিম্পল যে করে হোক জীবন থেকে সান্ত্বনা খুঁজছেন, আশ্রয় খুঁজছেন। অভিনেতা বিজয়েন্দ্র ঘটকের সঙ্গে তাঁর জড়িয়ে পড়া ঠিক তখনই। সে এক ভয়ঙ্কর পরিণতি!
ভাগ্য ভাল যে সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। শোনা যায়, ডিম্পলকে নাকি মারধোরও করত বিজয়েন্দ্র। এক কালে প্রাক্তন স্বামী রাজেশ খন্নার কাছে এমন নিগ্রহের শিকার হওয়া ডিম্পল, আবার করে এই নির্যাতনকে কেন মেনে নেবেন!
এত কিছুর মধ্যেও মেয়েদের আগলে রাখতে কিন্তু এক মুহূর্ত ভোলেননি ডিম্পল। পঞ্চগনির বোর্ডিং স্কুল নিউ ইরা-তে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ওদের। একদম ঠিক কাজ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘আমাকে আবার কাজে ফিরতে হবে। তার সঙ্গে ওদের যেন বাঁচাতে পারি। মা হয়ে এটুকু আমায় যে করতেই হবে।’’
এর পর থেকে যত বার ডিম্পলকে দেখেছি, মনে হয়েছে, উনি যেন মা হওয়ার জন্যই জন্মেছেন।
আর এই মাতৃত্ববোধ শুধু যে মেয়েদের জন্য, তা কিন্তু নয়।
দুই বোন সিম্পল, রিম আর ভাই মুন্নাকেও উনি তো মায়ের মতোই আগলে আগলে রাখতেন।
রিম অকালে চলে যায়। ভয়ঙ্কর ভাবে মুষড়ে পড়েছিলেন তখন। ঠিক একই ভাবে ওঁকে ভেঙে পড়তে দেখি সিম্পলের যখন ক্যানসার ধরা পড়ল।
সিম্পল মারা যাওয়ার কিছু দিন আগের একটা ঘটনা কিছুতেই ভোলার নয়। আমি আমার বর প্যাট্রিকের সঙ্গে কোকিলাবেন অম্বানী হসপিটালে গিয়েছি। অসুস্থ সিম্পলের সঙ্গে দেখা করব।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখি ডিম্পলও আছেন। গিয়ে শুনলাম, সব কাজ ফেলে উনি সব সময়ই নাকি বোনের কাছেই থাকেন। কখন কী দরকার হয়, বলা তো যায় না।
আমাদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তার পর ধীরে ধীরে বললেন, ‘‘স্যরি গো, এখন তো আর সিম্পিকে দেখতে পাবে না। কোনও ভিজিটরকে অ্যালাউ করছে না। তবে আমার খুব ভাল্লাগছে তোমাদের দেখে। তুমি ওর স্কুলের বন্ধু... ওকে দেখতে এসেছ...। আমি সিম্পিকে বলে দেব, তুমি এসেছিলে।’’
হ্যাঁ, কোডাইকানালে একটা বোর্ডিং স্কুলে এক সময় পড়াশোনা করতাম আমি। ‘প্রেজেনটেশন কনভেন্ট’। সেখানে সিম্পলও বছর কয়েক পড়েছিল। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তখন থেকেই।
সে অবশ্য অন্য কথা।
ববি
হাসপাতালে সে দিন ডিম্পলের ওই যে এগিয়ে আসা, বুকে টেনে নিয়ে কথা বলা, সব কিছুর মধ্যে এমন একটা মন-ছোঁওয়া স্পর্শ ছিল, এই উষ্ণতা সচরাচর মায়েদের মধ্যে পাই!
মায়ের মতো ওঁর এই যত্ন, শুধু বাড়ির লোকজনদের জন্য নয়, ওর স্টাফদের জন্যও।
ওঁর ড্রাইভার অ্যান্টনি আর হেয়ার ড্রেসার ফ্লোরিকে দেখলে কে বলবে ওরা বা়ড়ির কেউ নয়!
আমাকে একদিন বলছিলেন, ‘‘অ্যান্টনিকে ছাড়া ভাবতেই পারি না, ওকে বাদ দিয়ে ভাবতেই পারি না কিছু। আমি যে কত ব্যাপারে ওর পরামর্শও নিই, বলে বোঝাতে পারব না।’’
একদিন এমনিই গেছি ডিম্পলের কাছে। ওঁর বাড়িতেই। দেখি হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
‘‘কোথায় যাচ্ছেন অমন করে?’’
সাততাড়াতাড়ি বললেন, ‘‘ফ্লোরির বরের খুব শরীর খারাপ। ওর কাছে যাচ্ছি।’’
ওদের জন্য উনি ঠিক এ ভাবেই পাশে দাঁড়়ান। সাহায্য করেন।
আর একটা কথা, এই ব্যাপারটাকে ‘সাহায্য করা’ বলাটাতেও ওঁর খুব আপত্তি। বেশি কিছু বললে, এত অস্বস্তিতে পড়ে যান! বারবার বলতে থাকেন, ‘‘আরে না না, কতটুকু আর করতে পারি... একটু বৈতো নয়। হাজার হোক ওরা তো আমাদের পরিবারেরই একজন।’’
ডিম্পল এমনই।
নিজেই একদিন বলছিলেন, ‘‘তুমি তো আমাকে জানো... টাকাটা আমার কাছে বড় কোনও ব্যাপার না। আমার চাহিদা খুব সোজাসাপ্টা। কাছাকাছি যারা আছে তাদের ভালবাসা যেন আজীবন পাই, ব্যস। তা হলেই আমার হল। আর কিচ্ছু চাই না। ঈশ্বর আমাকে শক্তি দিয়েছেন। বাকিটা ঠিক সামলে নেব।’’
সামলেছেনও। সারা জীবন ধরে নিজেই নিজেকে সামলে চলেছেন।
এক সময় সানি দেওলের সঙ্গে ওঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বেশ কথা উঠছিল। উনি নিজে কিন্তু তার একটা কথাও কোনও দিন স্বীকার করেননি।
আমাকে শুধু বলছিলেন, ‘‘সানির তো একটা পরিবার বলে ব্যাপার আছে। এত দিন একসঙ্গে থাকার পর এ নিয়ে লুকোচুরির তো কিছু নেই। কিন্তু তা বলে সে সব কথা সবার সঙ্গে খোলাখুলি বলব! এ আমি পারব না।’’
সানি প্রায়ই ‘সমুদ্র মহল’-এ আসত। ওর বাড়িতে। কখনও শ্যুটিঙের আগে লাঞ্চ করতে, কখনও আবার সন্ধেবেলা সব কাজের শেষে। তন্দুরি চিকেন সানির খুব প্রিয়। সানি আসার খবর পেলেই ডিম্পলকে দেখা যেত, চিকেন তন্দুরির ব্যবস্থা করছেন। সানি-ডিম্পলের ব্যাপারটা কারও কাছে যে অজানা ছিল, এমন নয়। সবাই ওর হাবেভাবেই বুঝত, আজ সানি আসবেন বাড়িতে।
এক বার গুজব রটল, ডিম্পল আর সানি নাকি নিরালায় সময় কাটাতে বান্দ্রায় একটা ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাচ্ছেন। গুজবটা অবশ্য বেশি দিন টেকেনি। আসলে এই রটনার কিছু বাদেই সানি আর ডিম্পলের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরে যায়। যার কারণটা আবার রবিনা টন্ডন।
অক্ষয়কুমারের সঙ্গে তখন সম্পর্কে ইতি হয়েছে রবিনার। প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছে। ঠিক তখনই সানির সঙ্গে অল্প কয়েক দিনের জন্য ওর একটা প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সানি-ডিম্পলের অশান্তি শুরু এই ঘটনা ঘিরেই।
ব্যাপারটা এমন মোড় নিল যে, এক রাতে ডিম্পল হন্যে হয়ে রবিনাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যান রবিনাকে। সানিকে কেন সে ভাঙিয়ে নেবার তাল করছে, এ নিয়ে যাচ্ছেতাই বলেন রবিনাকে। সানিকেও ‘আলটিমেটাম’ দিয়ে দেন। বলে দেন, রবিনার কাছ থেকে সরে না এলে সব সম্পর্ক শেষ।
এর পর সত্যি করেই সম্পর্কটায় ছেদ টেনে দেয় সানি। যদিও তারা পরে আবার কাছাকাছি আসেন, কিন্তু ডিম্পল চলে আসেন তাঁর জুহুর বাড়িতে।
এই ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটা গুজবও ছিল।
রাজেশ খন্নার যখনই দরকার পড়ে, ডিম্পল ঠিক তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এটা নাকি সানির না-পসন্দ। ঘটনাটা প্রকাশ্যে চলে আসে, যখন রাজেশ নির্বাচনে দাঁড়ালেন, আর ডিম্পল তাঁর হয়ে প্রচারে নামলেন।
সানির ব্যাপারটা ভাল লাগেনি। কিন্তু এ নিয়ে খোলামেলা সবাইকে কিছু বলতেও সে পারেনি।
আসলে সানির তখন বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী পূজা। ছেলেও আছে, রকি। ডিম্পল-সানির ব্যাপারটা পূজার আগাগোড়া জানা ছিল। কিন্তু এটা যেন লোকজনের কাছে স্পষ্ট না হয়ে পড়ে, এ নিয়ে পূজা সানিকে সতর্ক করে দেয়। পূজার যুক্তিটা সানির মা প্রকাশও সমর্থন করতেন। শোনা যায়, তিনিও নাকি বারবার ফোন করে এ নিয়ে ডিম্পলকে বলতেন। ফলে সানি, রাজেশের ব্যাপারটাকে কখনই বাইরে আনতে পারেনি।
রাজেশ খন্নার ব্যাপারটা ভাবলেও ডিম্পলকে কেমন যেন অদ্ভুত লাগে! বিশ্বস্ততা বজায় রাখলেন রাজেশের শেষ দিন পর্যন্ত। ডিভোর্সও করলেন না। কখনও মেয়েদেরও সরিয়ে রাখেননি বাবার থেকে।
বলতেন, ‘‘কাম অন, বাবার থেকে ওদের কী করে দূরে রাখব? আমি টুইঙ্কল-রিঙ্কিকে পরিষ্কার বলেছিলাম মেয়ের দায়িত্ব ওদের পালন করতেই হবে।’’
আর এই সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা উঠলে কেবলই বলতেন, ‘‘তিক্ততা সব অতীতেই তোলা থাক না। হাজার হোক ও তো আমার মেয়েদের বাবা। আর আমিও তো ওর বউ ছিলাম একসময়। ওর যে কোনও দরকারে আমি সবসময় আছি।’’
কী অদ্ভুত যে লাগত শুনতে!
অনেক অল্প বয়সে তাঁকে নেমে পড়তে হয়েছে কঠিন জীবনে—তবুও যত বারই হোঁচট খেয়েছেন ডিম্পল, প্রতি মুহূর্তেই ফেরত এসেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে।
ওর এই যে ফিরে ফিরে আসা, টালমাটাল হয়ে যেতে যেতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা এটা সত্যিই প্রায় অপার্থিব। সময়টাকে মানিয়ে নেওয়ার মতো একটা মস্ত হৃদয় ওর আছে।
ডিম্পল এমনই।
মাথা খাটিয়ে চললে হয়তো অন্য রকমের একটা জীবন ও পেতেই পারত। কিন্তু ডিম্পল ডিম্পলই। মন আর পরিবার — এই দু’টোই তাঁর কাছে সবার আগে। আর কিচ্ছু না। গতকালও তা ছিল না। আজও না। কালও যে তা উল্টে যাবে, এমনটা কিছুতেই হবার নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy