Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ছোটদের প্রশ্নবাণের তোড়ে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা বড়দের। কিন্তু ধমক বা মিথ্যে নয়, বরং ঠিক উত্তর দিয়ে ওদ
Parents

ছোট্ট জিজ্ঞাসা

বাবা-মায়ের আচরণও শিশুদের মনে কৌতূহল তৈরি করে। মা-বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলে অনেক সময়ে ছোটরা আপত্তি করে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০২:০৭
Share: Save:

তিন বছরেই ঝরঝরে কথা বলে হৃদি। পৃথিবীর সব বিষয়েই কৌতূহল। কেন রাতের বেলা সূর্য দেখা যায় না থেকে ছবির দাদু কোথায় গেল ইত্যাদি ইত্যাদি... জুতসই জবাব খুঁজে পেতে হৃদির বাবা-মায়ের গলদঘর্ম অবস্থা। একদম খুদে থেকে প্রি-টিনএজের ছোট ছেলেমেয়েদের কৌতূহল স্বাভাবিক। ওদের কাছে পৃথিবীটা সবে ধরা দিচ্ছে। তাই ওদের কৌতূহলে যতই বিড়ম্বনায় পড়ুন না কেন, ওদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন না। অস্বস্তিজনক প্রশ্ন করলেও, সত্যিটা প্রথম থেকে বুঝিয়ে দেওয়াই ভাল। তবে তাতে মোলায়েম প্রলেপ থাকবে।

বয়স অনুযায়ী

বয়সভেদে যেমন প্রশ্নের ধরন বদলে যায়, তেমনই জবাবও। টিনএজারদের যে ভাবে একটা জিনিস বোঝাতে পারবেন, প্রি-টিনএজার বা ছ’-সাত বছরের শিশুদের তা পারবেন না। আর একটা সমস্যা হল, যে বিষয়টা ওদের পাঁচ বছর পরে জানলেও চলত, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের দাপটে সেই প্রশ্নটা অনেক আগে করে ফেলছে। তাই তৈরি থাকতে হবে বাবা-মাকেও। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের কথায়, ‘‘শিশুদের সঙ্গে গোপনীয়তা বজায় না রেখে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ওদের বুঝিয়ে বলতে হবে।’’ মৃত্যু বা যৌনতা বিষয়ক কথা আপনি যে ভাবে ছ’বছরের বাচ্চাকে বলবেন, ১১-১২ বছরের বাচ্চাকে বলার ধরন তার চেয়ে অবশ্যই আলাদা হবে।

যে ধরনের প্রশ্ন বিড়ম্বনায় ফেলে অভিভাবকদের

পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট বা কাউন্সেলারদের কাছে তিন-চারটি প্রধান সমস্যা নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। স্যানিটারি ন্যাপকিন, জেনিটাল পার্টস ও যৌনতা, জন্মরহস্য এবং মৃত্যু। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সন্তানের প্রশ্ন শুনে বাবা-মায়ের মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। তবে ভুলেও মিথ্যে বলবেন না। সত্যিটা ওদের মতো করেই পরিবেশন করুন। ছোটদের কাছে বাবা-মায়ের কথা ধ্রুবসত্য। কারণ নিজস্ব গণ্ডিতে মা-বাবাকেই ওরা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। মিথ্যে বললে ওদের মনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে।

স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। কখনও বাড়িতেও দেখে থাকতে পারে। পায়েল ঘোষের পরামর্শ, ‘‘ওদের বলুন ছোটদের যেমন ডায়পার হয়, তেমনই এটা বড়দের জন্য। প্রাইভেট পার্টসকে অন্য নামে ডাকার বদলে বিজ্ঞানসম্মত নামটাই ওদের বলবেন। প্রাইভেট পার্টস নিয়ে ছোটদের সামনে হাসাহাসি করাটাও ঠিক নয়।’’

বাবা-মায়ের আচরণও শিশুদের মনে কৌতূহল তৈরি করে। মা-বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলে অনেক সময়ে ছোটরা আপত্তি করে। ওদের বোঝান ওকে যেমন ভালবাসেন, তেমনই আপনারা একে অপরকে ভালবাসেন। সিনেমায় ঠোঁটে চুমু খাওয়ার দৃশ্য দেখলে ওদের মনে প্রশ্ন জাগে। সেটাকে ‘বড়দের আদর’, ‘ছোটদের আদর’ বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন। প্রশ্ন করার জন্য সন্তানকে বকুনি দেবেন না। দুম করে টিভিও বন্ধ করে দেবেন না। এতে ওদের মধ্যে এক ধরনের গোপনীয়তা তৈরি হবে।

পায়েল বলছিলেন, ‘‘অনেক শিশু বাবা-মাকে সঙ্গমরত অবস্থায় দেখে ফেলে। এই বিষয়ে বাবা-মাকে সাবধান হতে হবে। আর শিশু কোনও ভাবে দেখে ফেললে, বিষয়টা সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। ছোটদের যেমন আদর হয়, বড়দের তেমন আদর হয়। যদি দেখেন যে, বিষয়টি সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না, কাউন্সেলারের কাছে যেতে হবে।’’

জন্মরহস্য শিশুদের কৌতূহলের আর একটি জিনিস। ‘আমি কোথা থেকে এলাম?’ এই সরল প্রশ্নের জবাবে অহেতুক মিথ্যে বলার দরকার নেই। বলতে পারেন, মায়ের পেটের মধ্যে ছোট্ট সোনা কেমন করে ঘুমিয়ে ছিল। তার পর যখন বড় হতে লাগল, তখন ডাক্তারবাবু পেট থেকে বার করে মায়ের কোলে দিয়ে দিল। গল্পের ছলেই সত্যি বলা যায়। প্রি-টিনএজারকে কিন্তু এই ব্যাখ্যা সন্তুষ্ট করবে না। তাদের ক্ষেত্রে আরও বিশদে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেদের সংস্কার ভেঙে সন্তানকে বোঝানো। আর একটা বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে, ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ শেখানোর মধ্য দিয়েই কিন্তু সন্তানকে শরীর সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রথম পাঠ দেওয়া যায়।

মৃত্যু নিয়েও ধন্দে ভোগে শিশুরা। হঠাৎ কাছের কেউ মারা গেলে ওদের মনে চাপ তৈরি হয় অথচ সত্যিটা বুঝে উঠতে পারে না। কখনওই ছোটদের এই আশ্বাস দেবেন না যে, মৃত ব্যক্তি ফিরে আসবে। অনেকে আকাশের তারা হয়ে যাওয়ার গল্প বলেন ছোটদের। সেটাও ভুল। কাউন্সেলারদের কাছে এমন অনেক কেস আসে, যেখানে শিশুটি অপেক্ষা করে মৃত ব্যক্তি ফিরে আসার। তাই নরম করে সত্যিটাই বলে দিন ওদের। মৃত্যুর পরে কারও ফিরে আসা সম্ভব নয়, কিন্তু তারা আমাদের মনে সব সময়ে থাকবে।

শিশুরা একতাল মাটির মতো। যে ভাবে গড়বেন, তেমনই হবে। জটিল জিনিস সহজ করে বুঝিয়ে দেওয়ার মূল কারণ দু’টি। ওদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে না আর মিথ্যে বলা শিখবে না। কোনও প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে অসুবিধে হলে কাউন্সেলারের পরামর্শ নিন।

অন্য বিষয়গুলি:

Parents Child Relationship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy