তাঁর জীবন-যাপনের মধ্যেই ছিল সঙ্গীতের তালিম। বাবা-মার কাছে ঠিক ও ভুল শেখা। কোনও কথার সঠিক উচ্চারণ কী ভাবে করতে হয়, গানের ভাব কী ভাবে আসে-সব শিক্ষাই তাঁদের কাছে। বড় হয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষা পেয়েছেন এ টি কানন ও শিপ্রা বসু প্রমুখের কাছে। তিনি সমাজকে সচেতনতার বার্তা দেওয়ার জন্য ‘রাগ-অনুরাগ’-এর মাধ্যমে উপস্থাপনা করেছেন একের পর এক উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘জার্নি’, ‘চেতনা’, ‘পিস’ প্রভৃতি। প্রতিটি অনুষ্ঠানই শ্রোতাদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এ বারও সেই তিনি।
স্মৃতি লালা এবার সম্পূর্ণ একক গানের আসরে ‘জার্নি থ্রু ইটারনিটি’র আসরে। আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে যা সম্প্রতি পরিবেশিত হল তাঁরই দলের সহযোগী বাদ্যযন্ত্রীদের সহযোগিতায়। এই অনুষ্ঠানে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে নানা ধরনের গান শোনালেন। শুরুতে প্রধান অতিথি বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তকে বরণ করে নেওয়া হল। পরে তিনি অতীত ও বর্তমানের গান সম্পর্কে কিছু বক্তব্য রাখলেন। উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি অমিতাভ লালাও।
অনুষ্ঠানটি সাক্ষাৎকার ভিত্তিক-এর মতো। বেশ উপভোগ্য। সঞ্চালনা নয় অথচ কিছু কিছু প্রশ্ন রাখছিলেন টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় মুখ অভিনেতা অম্বরীশ। সঙ্গে পুরনো কিছু ফেলে আসা দিনের কথা। অম্বরীশের প্রশ্ন করা, কথা বলা সব কিছুর মধ্যেই এত স্বাভাবিকতা যে ভাল না লাগার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। স্মৃতি লালার উত্তরগুলোও ছিল তেমন স্বাভাবিক যেন ঘরে বসে দু’জনের প্রশ্নোত্তরের পালা চলছে। শারদীয়া উৎসবের প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠান হল বলে তিনি শুরু করলেন দুর্গা বন্দনা দিয়ে। এর পরেই তিনি গাইলেন ‘হসপিটাল’ ছবির বিখ্যাত গান ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’-যা এ যুগেও সমান জনপ্রিয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই সন্ধ্যার পক্ষে উপযুক্ত নির্বাচন। গানের মাঝে ছিল শ্রোতাদের সঙ্গেও গান নিয়ে প্রশ্নোত্তর। সেই জন্য পুরষ্কারও ছিল তাঁর তরফ থেকে। এ ভাবে উপস্থাপনা করার জন্য অনুষ্ঠানটি বেশ মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘দাঁড়াও আমার আঁখিরও আগে’। দুটি নজরুলগীতিও ছিল, প্রথমটি হাম্বির রাগাশ্রিত ‘আঁজো কাঁদে কাননে’ যা চমৎকার গাইলেন। আর দ্বিতীয়টি ‘মোমের পুতুল’ যার অ্যারেঞ্জমেন্ট তিনি করেছেন পরীক্ষামূলক ভাবে।
অতুলপ্রসাদের ‘একা মোর গানের তরী’তে অন্য পুরুষ কণ্ঠ যোগ করে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছেন। তেমনই সেই ভাবেই অন্য কণ্ঠ যোগ করার জন্য ‘ওঁ সুধারস’ ও ‘অচ্যুতম কেশবম’ ভজন দুটিও দারুণ ভাবে জমে যায়। এ ছাড়াও ছিল পদাবলী কীর্তনম ‘ব্রজরাজ নন্দন’ যা তিনি প্রাণ ঢেলে গাইলেন। তাঁর চয়নে আরও ছিল তাঁর নিজের আধুনিক গান ‘বাংলাকে ভালবাসি’। আনন্দ ছবির গান, উত্তরপ্রদেশের হোলির গান ও ‘দেয়ানেয়া’ ছবির এ গানে ‘প্রজাপতির পাখায় পাখায় রঙ ছড়ায়-যে গানের কথা ধরেই বলতে হচ্ছে রামধনুর রং ছড়িয়ে শ্রোতাদের পূর্ণ আনন্দ দিলেন। আগমনি গানের সঙ্গে তাঁর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।
জীবনের ভাঙা-গড়ায়
রবীন্দ্রসদনে রবির গান। শুনলেন বারীন মজুমদার
জীবন ভেঙে গড়েই চলে। আর অবিরত তিনি গেয়েই চলেন রবি ঠাকুরের গান। যে গান ক্লান্তি ধুয়ে শুভ্র শুচি বসন পরায় তাঁকে সন্ধ্যা নামার আগে। রবীন্দ্রনাথের সেই গানকেই তিনি সন্তান স্নেহে বুকে লালন করেন। তাঁকে ডাকেন যে দিন যেমন করে সে গান আসে তাঁর বুকে। সে আসে ‘কখনও দেবতার গন্ধে, কখনও নাথের আশ্বাসে, কখনও দয়াল প্রভু হয়ে। কখনও ‘জীবন বল্লভে’। যা নিবেদিত হল রবীন্দ্রসদনে উৎসাহ উদ্ভাস ও সারেগামা-র যৌথ আয়োজনে। শিল্পী রাহুল মিত্র।
প্রাসঙ্গিক বিষয়টি রবীন্দ্র রচনার একগুচ্ছ গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই গানগুলি মনে বেজেছে এক অনাস্বাদিত সুরে— যা কখনও ভিতর বাহিরের দ্বন্দ্বকে দূর করেছে, আবার চেতনাকেও নাড়া দিয়েছে। রাহুল শুরু করলেন ‘স্বপন যদি ভাঙিলে’ দিয়ে। তার পরে গাইলেন ‘আধাঁর রজনী পোহালো, আজি এনেছি তাঁহার আশীর্বাদ’। এই তিনটি গানকে তিনি ‘আলো’ শিরোনামে আখ্যা দিয়েছেন। তার পরের সতেরোটি গানকে তিনি ‘আলো’ যে যে পর্যায়ে ভাগ করেছেন সেগুলি হল সুন্দর, মধুর, অন্তর, করুণা ও প্রেম। ঊনচল্লিশটি গান ছিল এই চয়নে। স্পষ্ট উচ্চারণে, সঠিক গায়ন ভঙ্গিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইমন রাগাশ্রিত ‘এ মোহ আবরণ’, বেহাগ রাগে ‘আছ অন্তরে’ রাগ গৌরসারং আশ্রিত ‘পেয়েছি সন্ধান তব’। ‘বেঁধেছ প্রেমের পাশে’ এক অপূর্ব লয় ও গৌতম দত্তর খোল সহযোগিতায় উপলব্ধির ক্ষেত্রে ঘটায় এক নতুন উত্তরণ। এ ছাড়াও ‘ধনে জনে আছি’, ‘দয়া দিয়ে হবে গো মোর’ ও ‘এ কী করুণা করুণাময়’ মুগ্ধ করে।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল দেবতা, স্বামী, নাথ, প্রভু, হরি, জীবনবল্লভ গানগুলি। শুরু হল পূরবী রাগাশ্রিত নিভৃত প্রাণের দেবতা দিয়ে ও শেষ করলেন কীর্তনাঙ্গ ‘ওহে জীবনবল্লভ’ সহকারে। বলতেই হয় শেষ গানে উচ্চারণে বাণীগুলি যে কি পরিমাণে জ্বলে উঠতে পারে তার প্রমাণ ‘তবু ফেলো না দূরে দিবস শেষে ডেকে নিয়ো চরণে’— এমত শব্দ কয়টি। এই অনুষ্ঠানে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন গৌতম দত্ত (তালবাদ্য), অম্লান হালদার (বেহালা), সৌরভ চট্টোপাধ্যায় (হারমোনিয়ম)।
3
মাটির টানে
সম্প্রতি আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘মাটির টানে রবির গানে।’ রবীন্দ্রসঙ্গীত ও পুরনো দিনের বাংলা আধুনিক সহ প্রায় ১৪ টি গান শোনালেন অমৃতা দে। শুরুতেই ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’। চন্দন রায় চৌধুরীর যথাযথ সঙ্গতে শোনালেন বেশ কয়েকটি আধুনিক গান। পুরনো দিনের গানগুলির মধ্যে ‘আজ মন চেয়েছে’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়’, শিল্পীর কণ্ঠে অন্য মাত্রা পায়। সব শেষে মঞ্জুশ্রী রায় চৌধুরীর নৃত্য পরিচালনায় ‘মধুমাধুরী’ প্রশংসার দাবি রাখে।
বিরহ মধুর
সম্প্রতি সূর্যসেন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। স্বরলিপি আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই কৃষ্ণেন্দু সেনের নিবেদনে ছিল ‘কি আশায় বাঁধি খেলাঘর’। দরাজ কণ্ঠ, মাধুর্য ও আবেগ ছিল শিল্পীর কণ্ঠে। ইন্দ্রাণী গুহর নিবেদনে ছিল ‘আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে’ এবং ‘বিরহ মধুর হল’ গান দুটি। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে গান শোনালেন আশিস দাশগুপ্ত, অমিতেশ চন্দ, চৈতালী মিত্র, দীপক ঠাকুরতা, কাকলী দেব প্রমুখ। মৃদঙ্গম গোষ্ঠীর সমবেত সঙ্গীত ছিল এ দিনের সেরা আকর্ষণ। আবৃত্তিতে ছিলেন সুবীর হালদার। সুন্দর গিটার বাজিয়ে শোনালেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সঞ্চালনায় ছিলেন কৃষ্ণা মজুমদার।
গানের স্বরলিপি
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে রবীন্দ্রসদনে শতাব্দী ব্যালে ট্রুপ-এর অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল রাজকন্যা বসুর কোরিওগ্রাফিতে ‘আমার গানের স্বরলিপি’ গানটি। হৈমন্তী শুক্ল বেশ কয়েকটি গানে শ্রোতাদের মাতিয়ে দিলেন। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, মনোময় ভট্টাচার্য, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy