Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

হার্ট অ্যাটাক থেকে দীর্ঘদিন বাঁচায় ‘লিমা-রিমা-ওয়াই’ বাইপাস

পঁচিশ হাজারেরও বেশি হার্ট অপারেশন করে ফেলেছেন। ‘লিমা-রিমা-ওয়াই’ বাইপাস ১৯৯৯ সালে পূর্বভারতে নিয়ে আসেন। এমনকী বেশ কিছু বছর ধরে ভালব রিপেয়ারেরও পথ চলা শুরু। তিনি ডা. সত্যজিৎ বসু। যোগাযোগ-৯৮০০৮৮১৭০১ প্র: লিমা-রিমা ওয়াই কী? কীভাবে হয়? উ: বক্ষদেশে পেছনে অবস্থিত ইন্টারনাল ম্যামারি আর্টারিকে নামিয়ে ইংরাজী অক্ষর ‘Y’ এর মতো জুড়ে এবং তার সাহায্যে অবরুদ্ধ করোনারি ধমনিকে জুড়ে হার্টের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা হয়।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

প্র: লিমা-রিমা ওয়াই কী? কীভাবে হয়?

উ: বক্ষদেশে পেছনে অবস্থিত ইন্টারনাল ম্যামারি আর্টারিকে নামিয়ে ইংরাজী অক্ষর ‘Y’ এর মতো জুড়ে এবং তার সাহায্যে অবরুদ্ধ করোনারি ধমনিকে জুড়ে হার্টের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা হয়।

প্র: তাতে লাভ কি?

উ: ম্যামারি আর্টারির সাহায্যে বাইপাস করলে ২৫ বছর হার্ট অ্যাটাক থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

প্র: সব ক্ষেত্রেই কি এই অপারেশনটি করা যায়?

উ: না। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা যদি কম থাকে, বা করোনারি ধমনির ব্লক যদি ৯০ শতাংশ এর কম থাকে, বা ইন্টারনাল ম্যামারি আর্টারি যদি সরু থাকে, তাহলে লিমা-রিমা ওয়াই না করাই ভাল। সম্প্রতি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে এবং হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা খুব কম থাকলে, এই ম্যামারি আর্টারি দ্বারা করা উচিত নয়। ডায়াবেটিস থাকলে অন্যান্য জিনিস যদি ঠিক থাকে লিমা-রিমা ওয়াই অত্যন্ত ভাল অপারেশন।

প্র: আজকাল শোনা যাচ্ছে মাত্র ৪ ইঞ্চি বাঁ দিকে কেটে হার্টের অপারেশন করা যায়?

উ: এই অপারেশন যদি আমিও করি তবে একটি বা দুটি করোনারি ধমনি ছাড়া করা অসুবিধা। একটা প্রধান কারণ আমাদের দেশে অধিকাংশ রুগির চারটে বা তার বেশি গ্রাফটিং লাগে। সুতরাং আমার প্রাকটিসে একটি বা দুটি গ্রাফটিং লাগছে এরকম রোগীর সংখ্যা খুব কম। পেলেও তাদের হার্টের অন্যান্য ভালব বা মাংস পেশির রোগ সহাবস্থান করে। সেক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মে ৫ ইঞ্চি বক্ষদেশ চিরে অপারেশন করাটাই শ্রেয়। বাঁ দিকে বক্ষদেশ কেটে ছোট অপারেশনে পরবর্তী কালে বুকের দেওয়ালের ব্যথা খুব প্রকট হয়। তুলনায় বক্ষদেশ চিরে অপারেশনে ব্যথা অনেক হয় এবং মানুষ তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারেন।

প্র: হার্ট অ্যাটাকের পরে যখন হার্টের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় তখন কী ধরনের অপারেশন করা উচিত?

উ: তখন প্রচলিত নিয়মে অপারেশন করাই বাঞ্ছনীয়। যদিও খুব কম বয়সে লোকেদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই লিমা-রিমা-ওয়াই আমি করেছি এবং ভাল ফলাফল পেয়েছি। তবে শেষমেষ হার্টই বলে দেবে কি অপারেশন করতে হবে। হার্টের নড়াচড়া, হার্টের গতি, হার্টের আকার হার্ট সার্জনকে বলে দেয় কি করা উচিৎ এবং হার্ট সার্জেনেরও উচিৎ নিয়ম মেনে সেই অপারেশন করা।

প্র: আপনি তো বিটিং হার্ট সার্জারি করেছেন ১৯৯৯ সাল থেকে?

উ: এই তুলনায় পূর্বভারত ভারতবর্ষের অন্যান্য জায়গা থেকে এগিয়ে। বিটিং হার্ট বাইপাস সার্জারিতে অনেক লাভ। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যায়, রক্তের প্রয়োজনীয়তা অনেক কম, হার্টের ছন্দের পরিবর্তন খুব একটা হয় না।

প্র: কখন বাইপাস সার্জারি এবং কখন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি – এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অনেক ধোঁয়াশা। তাই না?

উ: এ বিষয়ে পরিষ্কার গাইড লাইন রয়েছে। প্রথমত: তিনটি ধমনী যদি বন্ধ থাকে, হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ভাল থাকে এবং যদি ওষুধ দিয়ে তার বুকের ব্যথা কম থাকছে, সেক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারি বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা ক্ষতিকারক। দ্বিতীয়ত: তিনটি প্রধান ধমনী যদি ব্লক থাকে এবং ওষুধ দেওয়া সত্ত্বেও তার বুকের ব্যথা কমানো যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে তার কোয়ালিটি অফ লাইফ বাড়ানোর জন্য অপারেশন করা যেতে পারে। তৃতীয়ত: যদি তিনটি ধমনি বন্ধ থাকে এবং হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কম থাকে সেক্ষেত্রে অবিলম্বে বাইপাস সার্জারি করিয়ে নেওয়া উচিত। চতূর্থত: হার্ট অ্যাটাক নিয়ে যদি রোগী -৩ ঘন্টায় চলে আসতে পারে তখন প্রাইমারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মধ্যে অবরুদ্ধ করোনারি ধমনি খুলে দেওয়া যেতে পারে, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির এটা প্রধান উপকারিতা। পঞ্চমত: খুব বড় ধমনির উৎসে যদি ৮৫-৯০ শতাংশর মতো ব্লক থাকে এবং তার সঙ্গে ভীষণ বুকে ব্যথা থাকে, সে ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করিয়ে নেওয়া ভাল। তাও কিছুটা গ্রে-এরিয়া থেকেই যায় এবং সেটা রুগির ধরন বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই জায়গাতেই অনেক অসাধু স্টেন্ট কোম্পানি ডাক্তারবাবুদের বুঝিয়ে বা জাল পরিসংখ্যান ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ডাক্তারবাবুদের বিভ্রান্ত করে দেয় এবং ফায়দা লোটে। তবে এখন এই সব স্টেন্ট-এর দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সাধারণ মানুষ অদূর ভবিষ্যতে এই সব স্টেন্ট সুলভে পাবেন।

প্র: ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে কি একই কথা প্রযোজ্য?

উ: ডায়াবেটিক রোগীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘সায়লেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ হয়ে যায়। এবং সে ক্ষেত্রে এঁদের মৃত্যুর ঝুঁকিটা বেশি। সে জন্য নিয়মাবলি একটু আলাদা।

প্র: হার্টের মাংসপেশির ক্ষমতা যদি খুম কমে যায় তাহলে কি করা উচিত?

উ: কার্ডিয়াক এম আর আই অথবা মাইয়োকার্ডিয়াল পারফিউসন স্ক্যান করে দেখে নেওয়া উচিত হার্টের পেশি কতটা জীবিত। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জীবিত থাকে এবং দরকারের থেকে কম রক্তসঞ্চালন মাংসপেশিতে হচ্ছে টের পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারিতে সুফল পাওয়া যায়।

প্র: হার্টের চিকিৎসায় স্বচ্ছতা আনতে কী করা উচিত?

উ: প্রথমত বলি হার্ট অ্যাটাক রুখতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে মানুষকে সঠিক উপদেশ দেওয়া। দ্বিতীয়ত: হার্ট অ্যাটাক হলে চারটে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট আধগ্লাস জলে গুলে খেয়ে নিকটবর্তী হাসপাতাল যেখানে কার্ডিওলজিস্ট এবং কার্ডিয়াক সার্জিক্যাল টিম-এর ২৪ঘন্টা উপস্থিতি আছে, সেখানে চলে যাওয়া উচিত। আগে থেকে খোঁজ নিয়ে নেবেন সেখানে উন্নত মানের ক্যাথল্যাব আছে কিনা। অ্যাসপিরিন নিলে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ কমে যায়। ২-৩ ঘন্টার মধ্যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করাতে পারলে হার্টের মাংসপেশি বেঁচে যায়। অযথা স্টেন্ট করা উচিত নয়। রোগীর যেটা দরকার, সেটাই করা উচিত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy