অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার।
ফিশ ফ্রাইয়ে দু’কামড় দিতে না দিতেই ঢেকুর উঠছে! কান কটকট, মাথা টিপটিপ তো লেগেই রয়েছে। গোড়ালি ফেলতেও বড্ড কষ্ট। এ সব উপসর্গ এখন অনেকেরই হচ্ছে। সবই পুজোর আফটার এফেক্টস। পাঁচ দিন ধরে শরীরের উপরে অকথ্য অত্যাচার চলে। ডায়েট ভুলে কবজি ডুবিয়ে জাঙ্ক ফুড, রাত জেগে চার ইঞ্চি হিল পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে নেচে বেড়ানো, অঞ্জলির পরে রোদের দিকে সোজা তাকিয়ে সেলফি তোলা— ভয়াবহ সব অনিয়ম! তার ফলেই এখন আচম্বিতে মেদ জমেছে, মাইগ্রেন, অ্যাসিডিটি, পায়ের যন্ত্রণা হচ্ছে। এ বার তো নিয়মে ফিরতে হবে। এই ক’দিনের বেহিসেবি জীবনযাত্রায় জোটানো ঝামেলাগুলোকেও বিদায় করা চাই। দায়িত্ব নেবে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট।
অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট কী?
জীবনযাত্রা অস্বাস্থ্যকর হলেই জীবদেহে মুক্ত মৌল বেশি তৈরি হয়। এগুলি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই দেহে এদের পরিমাণ বাড়লেই কাহিল লাগে, রোগজীবাণু বাসা বাঁধার সুযোগ পায়। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হল সেই পদার্থ, যা এই সব মুক্ত মৌলদের দমন করে। শরীর সুস্থ, চনমনে করে তোলে। অক্সিড্যান্টের জন্যই আমরা বুড়ো হই, কোষ ক্ষয় হয়, জরা আসে। অর্থাৎ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট বার্ধক্য আসতেও বাধা দেয়।
পুজোর পরে তার কী কাজ?
তারুণ্যকে থামিয়ে রাখতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রোজই নানা মেরামতি করে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। পুজোর পরে বেয়াড়া শরীরটাকে বশে আনতে তার দরকারটা একটু বেশি হবে। ‘‘এটি ওজন কমাতে ওস্তাদ। তাই এ ক’দিনে ভাজাভুজি খেয়ে বাড়ানো মেদও ঝরিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি,’’ বললেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। তা ছাড়া বচ্ছরকার হইচই, ঠাকুর দেখার হুটোপাটিতে হৃদয়টার উপরেও তো চাপ পড়ে। সেটাও সামলে দেবে এই অলরাউন্ডার। ‘‘কারণ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট গুড কোলেস্টেরল বাড়ায় আর ব্যাড কোলেস্টেরল কমায়,’’ জানালেন সুবর্ণা। বললেন, ‘‘পুজো চুলেরও দফারফা করে। রোজ স্টাইলিংয়ের নামে কেমিক্যাল লাগানো, সঙ্গে পরিবেশ দূষণের কুপ্রভাব তো আছেই। চুলের জেল্লা ফিরিয়ে দিতেও এর শরণাপন্ন হোন।’’ অতিবেগুনি রশ্মি ছাড়া গ্যাজেটের বিকিরণ ও তেজস্ক্রিয়তা থেকেও রক্ষা করে এই উপাদান।
স্নায়ুর কর্মক্ষমতা বাড়ায়, সচল রাখে অস্থিসন্ধি। পুজোয় হেঁটে হেঁটে গোড়ালিতে ব্যথা হলেও তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অ্যাকনে বা কালো ছোপের মতো ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আবার লিভার আর কিডনিকেও সুস্থ রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
কোথায় পাব তারে?
সুবর্ণা হদিশ দিলেন, ‘‘সেই সব ফল আর সবুজ আনাজপাতি, যাতে ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে, আবার সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, কপার প্রভৃতি মিনারেলস আছে, তাতেই পাবেন অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট।’’ যেমন জাম, আঙুর, বেদানা, আনারস, গাজর, জলপাই, তরমুজ এবং রসালো লেবু জাতীয় ফল টইটম্বুর অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে। পার্সলে পাতা, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, রাঙা আলুর মতো স্বাদু আনাজেও থাকে এই অমূল্য রতন। সমুদ্র থেকে ধরা টাটকা মাছ, ডিম, ডালে ঠাসা থাকে সেলেনিয়াম। যাকে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের খনি বলা হয়। বাদাম, ডিম, মাছ, মাংসে পাবেন জিঙ্ক।
‘‘অনেকেরই হয়তো অভ্যেস রয়েছে দুপুরবেলা পেটপুরে চিকেন বা মাটন খাওয়ার পরেই এক কাপ কফিতে চুমুক দেওয়ার। সেটা ঠিক নয়। বরং সকালে চা খাওয়ার অভ্যেসটা বজায় রাখুন। এক কাপ গ্রিন টি। তার পরে নিন প্রাতরাশ। এতে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের গুণ বেশি বুঝতে পারবেন,’’ পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ।
একটু সাবধান
মূলত ক্যানসার প্রতিরোধক এবং অ্যান্টি এজিং রূপে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের এখন প্রচুর নামডাক। তাই অনেকে না জেনেশুনে ‘অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট’ লেখা থাকলেই, সে সব জিনিস ব্যবহার বা খাওয়া শুরু করেন। কেউ ভিটামিন ই ট্যাবলেট খান, কোথাও পার্লারে ‘ফেসিয়ালে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট’-এর বিরাট বিজ্ঞাপন ঝোলে। সুবর্ণার মতে, ‘‘একটা হুজুগ চলছে। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট জরুরি ঠিক কথা। কিন্তু কী ভাবে তা আপনার শরীরে মিশছে, সে বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের থেকেও রোজকার খাবারে আনাজ-ফল রাখলে চটজলদি সুফল পাবেন। কারণ খাবারের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট আত্তীকরণ করতেই শরীরের সুবিধে হয়।’’
অর্থাৎ দেহে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ফেরানোর সময়েও সংযম জরুরি। এই উপাদানের জনপ্রিয়তম উৎস ডার্ক চকলেট। কিন্তু তার মানেই যে অতিরিক্ত পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাবেন, তা-ও ঠিক নয়। এতে ওজন বাড়বে। তাই অধিক পরিমাণে কোকো সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট খেলে অন্য খাবার কম খেতে হবে। মোট ক্যালরির পরিমাণে হেরফের না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy