মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ, ঐশ্বর্য সেন
আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাঙালি পুরোপুরি উৎসবের মুডে প্রবেশ করবে হইহই করে। আনন্দমুখর এই মরসুমে কী কী খাব আর কী ভাবে সাজব— এই হয়ে দাঁড়ায় প্রধান চিন্তা। শাড়ি ছাড়াও নানা এথনিক আউটফিট ট্রাই করার পালা এ বার। তার সঙ্গত করতে একঢাল ঘন চুল না হলে চলে? লম্বা চুলের সাধ থাকলেও যত্নের কথা ভেবে অনেকেই পিছিয়ে আসেন। নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলেন আদরের কেশদাম। অনেকে আবার ভাবেন দূষণের কথা। অথচ ব্যস্ততার ফাঁকে অল্প সময় বার করে যত্ন নিলেও লম্বা চুল সামলানো যায় দিব্যি। লম্বা বেণী কিংবা হর্সটেল করে অফিসে যান অনেক তন্বীই। তাঁরাই আবার বিয়েবাড়ি, কোনও অনুষ্ঠান বা পুজোর দিনগুলোয় ফ্লন্ট করতে ভালবাসেন একঢাল চুল। গরমে ঘাম বা বৃষ্টিভেজা আর্দ্র আবহাওয়ায় কী করে ম্যানেজ করবেন খোলা চুল? যত্নই বা নেবেন কী ভাবে? চাবিকাঠি তুলে দেওয়া হল আপনার হাতে।
চুলের আঁচড় হোক ঠিকঠাক
লম্বা চুলের যত্ন নিতে যে কথাটা সবচেয়ে জরুরি, তা হল যত্ন নিয়ে চুল আঁচড়ানো। ভেজা কিংবা জট পড়া অবস্থায় কখনওই চুলে চিরুনি চালাবেন না। এতে হেয়ার ব্রেকেজের সম্ভাবনা বাড়ে। খোলা চুলে জট পড়ে গেলে চুলের মাঝামাঝি অংশ আঙুলের ফাঁকে গলিয়ে একটা আলগা গিঁট দিয়ে তার পরে চিরুনির সাহায্যে জট ছাড়ান। এতে চুলের গোড়ায় টান পড়বে না। স্নান করেই চুল আঁচড়াতে শুরু না করে আগে আঙুল দিয়ে হাল্কা হাতে জট ছাড়িয়ে নিন। স্নানের আগে এক বার চুল ব্রাশ করে নিলে জট পড়ার সমস্যা অনেক কমে যায়। শুকনো চুল আঁচড়ানোর সময় যাতে স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি তৈরি না হয়, তার জন্য প্লাস্টিক বা ধাতব চিরুনির বদলে ব্যবহার করুন কাঠের চিরুনি। রক্ত সঞ্চালন ভাল হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন হেয়ার ব্রাশও। চুল বাঁধতে রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করবেন না। খুব টাইট করে চুল না বাঁধাই ভাল।
শ্যাম্পুর সাতকাহন
লম্বা চুল শুকোতে দেরি হওয়ার ভয়ে অনেকেই রোজ পুরো চুল ভেজান না। কিংবা সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন শ্যাম্পু করেন। মনে রাখবেন, চুল ময়লা হলে তবেই শ্যাম্পু করুন। আপনার চুলে প্রত্যেক দিন শ্যাম্পুর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। স্ক্যাল্প থেকে নিঃসৃত ন্যাচারাল অয়েল কিন্তু আপনা থেকেই চুলের স্বাস্থ্যরক্ষা করে। প্রত্যেক দিনের শ্যাম্পু চুলকে রুক্ষ করে তুলতে পারে। তবে যেহেতু লম্বা বা খোলা চুল ধুলোবালি টানে বেশি, তাই স্ক্যাল্প দ্রুত ময়লা হয়। সে ক্ষেত্রে শ্যাম্পু লাগান স্ক্যাল্পে, আঙুলের ডগা দিয়ে মাসাজ করে। তবে নখ ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন, চুলের গোড়াতেই শ্যাম্পুর আসল কার্যকারিতা, ডগায় নয়। স্ক্যাল্পের ধরন শুষ্ক না তৈলাক্ত, সেই মতো শ্যাম্পু বাছাও জরুরি। হাল্কা ফেনা হবে, এমন অর্গ্যানিক শ্যাম্পু বেছে নেওয়াই ভাল। বেশি গরম জলে চুল কখনওই ধোয়া উচিত নয়।
কন্ডিশন ইজ় কন্ডিশনিং
শ্যাম্পুর পরে কোনও ভাবেই কন্ডিশনিংয়ের ধাপটি এড়িয়ে যাবেন না। শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে শ্যাম্পুর আগে প্রি-কন্ডিশনিং এবং সপ্তাহে অন্তত একদিন ডিপ কন্ডিশনিং জরুরি। হোহোবা বা নারকেল তেল কিংবা ভিটামিন ই সমৃদ্ধ অলিভ বা অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহার করে আধঘণ্টার টারবান থেরাপি করতে পারেন সাপ্তাহিক ট্রিটমেন্ট হিসেবে। ডিম-দইয়ের ঘরোয়া প্যাকও ম্যাজিক করতে পারে চুলের চাকচিক্য ফেরাতে। মাসে এক বার ট্রিমিং আর স্পা করানো জরুরি।
কুঞ্চিত কেশ?
কোঁকড়া চুল সামলানো শক্ত বলে যাঁরা মনখারাপ করেন আর স্ট্রেটনিংয়ের দিকে ঝোঁকেন, তাঁদের জন্য রইল কিছু সহজ পরামর্শ।
• চুলের গোড়া থেকে নিঃসৃত ন্যাচারাল সেরাম কোঁকড়া চুলের ক্ষেত্রে ডগা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। ফলে তা শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই কোঁকড়া চুলে শ্যাম্পুর আগে কন্ডিশনিং জরুরি।
• অয়েল মাসাজ, শ্যাম্পু কিংবা কন্ডিশনার অ্যাপ্লাইয়ের সময়ে পুরো চুল কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ক্লিপ করে নিলে সুবিধে হবে।
• গামছা বা খসখসে তোয়ালের পরিবর্তে মাইক্রো ফাইবারের তোয়ালে ব্যবহার করতে পারেন কোঁকড়া চুল মোছার জন্য। সুতির গেঞ্জি কাপড়ের টি-শার্ট থাকলেও তা দিয়ে খুব ভাল চুল মোছা যায়।
• ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে চুলে সাটিনের একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নিন। চুলের ডগা ঘষা না খেলে স্প্লিট এন্ডস বা ডগা ফাটার সমস্যাও কমবে। বিনুনি বেঁধে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যেস থাকলে শেষ অংশটুকু গোল করে বেঁধে নেবেন।
• স্ট্রেটনার, ব্লো ড্রায়ারের ব্যবহার কমান। একান্তই ব্যবহার করলে হেয়ার ডিফিউজ়ার লাগিয়ে নিন।
ডায়েটে বাঁধুন চুল
হাই প্রোটিন ডায়েট যে চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, সেটা অনেকেই জানেন। ডিম ও দুগ্ধজাত খাবার, ড্রাই ফ্রুট, সি ফুড খাদ্যতালিকায় রাখুন। সঙ্গে অবশ্যই সবুজ শাক, আনাজপাতি ও দিনে একটি করে মরসুমি ফল খাওয়া জরুরি।
স্টাইলে থাকুন
খোলা চুল ম্যানেজ ও স্টাইলিং কিন্তু চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। উৎসবের দিনগুলোয় রোদের দাপট কিংবা বৃষ্টির চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই হেয়ার স্টাইলে আনুন নতুনত্ব। বিনুনি কিংবা খোঁপার বদলে আপনার চুলে খেলা করুক অন্য ধরনের নজরকাড়া স্টাইল।
টেক্সচার্ড লুজ় কার্লস: পার্টিং করে নিয়ে স্প্রে আর কার্লার ব্যবহার করে হাল্কা ওয়েভি কার্লস আনতে পারেন চুলের নীচের দিকে। এতে চুলের ভলিউমও বেশি দেখাবে।
বোহো ব্রেড: স্ট্রেট হেয়ারে এই মেসি স্টাইল ভাল খোলে। চুলের গোড়ার দিকটা আলগা রেখে শেষ অংশে ফিশটেল বা মাল্টিপল ব্রেড বেঁধে নিলেই বোহো লুক আসবে।
ব্যান্ডানা স্টাইলিং: ব্যান্ডানা দিয়ে খোলা চুলে খুব ভাল স্টাইলিং করা সম্ভব। টিজ়ার কোম্ব দিয়ে চুলের সামনের অংশ আঁচড়ে নিয়ে ব্যান্ডানা বেঁধে নিন। বো-এর মতো করেও বাঁধতে পারেন খোলা চুল।
হাফ-আপ টুইস্টেড নট কিংবা বান: খোলা চুলে হাফ-আপ স্টাইলিং কখনও পুরনো হয় না। মিডল পার্টিং করে সামনের অংশের দু’পাশের চুল পিছনে নিয়ে নট বা বান বেঁধে নিন।
সাইড সোয়েপ্ট ওয়েভ: ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সঙ্গে খুব ভাল মানায়। সাইড পার্টিং করে এক পাশের চুলকে ভলিউমনাইজ় করে ওয়েভি লুক আনতে হবে।
রাতে শুতে যাওয়ার আগে চুলের যত্নের জন্য খানিকটা সময় দিন। দেখবেন, একঢাল চুল দিব্যি বশ মানছে আপনার।
ছবি: দেবর্ষি সরকার (শ্রীময়ী), অমিত দাস; মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়, অভিজিৎ পাল (শ্রীময়ী); লোকেশন: হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনাল (ঐশ্বর্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy